মুজাফফরনগরে প্রকাশ্যে মুসলিম নারীর হিজাব খুলে অপমান

উত্তরপ্রদেশের মুজাফফরনগরে প্রকাশ্য রাস্তায় এক মুসলিম নারীর হিজাব জোরপূর্বক খুলে নেওয়ার ঘটনায় সৃষ্টি হয়েছে তীব্র প্রতিক্রিয়া। একই সময়ে তাঁর সঙ্গে থাকা এক পুরুষকেও গালিগালাজ ও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। নির্যাতনের শিকার দুইজনই উৎকর্ষ স্মল ফাইন্যান্স নামের একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মী ছিলেন।

জানা গেছে, গত ১২ এপ্রিল বিকেল সাড়ে চারটার দিকে মুজাফফরনগরের খালপাড় এলাকার দরজি ওয়ালি গলিতে ফারহিন নামের ২০ বছর বয়সী নারী ও শচীন নামে একজন যুবক ঋণের কিস্তি আদায় করে মোটরসাইকেলে ফিরছিলেন। রাস্তায় হঠাৎ করে ৮-১০ জনের একটি দল তাদের ঘিরে ধরে এবং শারীরিকভাবে আক্রমণ করে।

পথচারীদের একজন মোবাইল ফোনে পুরো ঘটনাটি ধারণ করেন, যা পরে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়লে শুরু হয় ব্যাপক জনমত ও ক্ষোভ। ভিডিওতে দেখা যায়, একজন ব্যক্তি নারীর হিজাব জোর করে খুলে ফেলছে, অন্যদিকে তাকে ও শচীনকে ধাক্কা-ধাক্কি ও অপমানজনক কথাবার্তা বলা হচ্ছে।

ফারহিন জানিয়েছেন, তাঁর মা-ই তাঁকে শচীনের সঙ্গে পাঠিয়েছিলেন পেশাগত কাজে। কিন্তু পরিচয় ও ধর্ম নিয়ে সন্দেহ তৈরি করে স্থানীয় কিছু লোক উগ্র আচরণে লিপ্ত হয়। তারা প্রশ্ন তোলে কেন একজন হিন্দু পুরুষের সঙ্গে একজন মুসলিম নারী চলাফেরা করছেন।

পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে উন্মত্ত জনতাকে ছত্রভঙ্গ করে এবং ভুক্তভোগী দুজনকে নিরাপদে থানায় নিয়ে যায়। পরবর্তীতে ফারহিন একটি অভিযোগ দায়ের করেন, যার ভিত্তিতে ভারতীয় দণ্ডবিধির প্রাসঙ্গিক ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে।

মুজাফফরনগর সিটি সার্কেল অফিসার রাজু কুমার সাও জানান, ইতোমধ্যেই ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং ভিডিও ফুটেজ দেখে অন্যদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে। পুলিশ এ ঘটনায় কাউকে ছাড় দেবে না বলে আশ্বস্ত করেছে।

এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সোশ্যাল মিডিয়ায় নানা প্রশ্ন উঠছে ধর্মীয় সম্প্রীতি, নারীর মর্যাদা ও সামাজিক নিরাপত্তা নিয়ে। অনেকেই মনে করছেন, শুধু গ্রেপ্তার নয়, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির মাধ্যমেই সমাজে এমন ঘৃণ্য ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ সম্ভব।