মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে ফের উত্তেজনা ছড়িয়েছে। বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার আলোচনা যখন শুরু হয়েছে, ঠিক তখনই কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্তের ওপারে আগুনের কুণ্ডলী ও ধোঁয়া উড়তে দেখা গেছে। মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত টেকনাফের নাইট্যংপাড়া, শাহপরীর দ্বীপসহ সীমান্তের বিভিন্ন এলাকা থেকে মিয়ানমারের ভেতরে এ দৃশ্য স্পষ্ট দেখা গেছে।
সীমান্তের বাসিন্দাদের দাবি, রাখাইনে রোহিঙ্গাদের পরিত্যক্ত ঘরবাড়িতে আগুন দিচ্ছে সেখানকার সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি। তাদের উদ্দেশ্য রোহিঙ্গাদের মনে আতঙ্ক তৈরি করা। যাতে তারা নিজেদের বাড়িতে ফিরতেও ভয় পায়। এর ফলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া আরও জটিল হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সীমান্তের শাহপরীর দ্বীপের বাসিন্দা সালাউদ্দিন বলেন, সকাল থেকে আগুনের ধোঁয়া দেখে অনেক মানুষ জেটিঘাটে ভিড় করে। সবাই চিন্তায় পড়েছে রাখাইনে কী ঘটছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, ইচ্ছে করেই আগুন দিয়ে রাখাইনকে অস্থিতিশীল রাখা হচ্ছে।
এদিকে সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি জানিয়েছে, মিয়ানমারের ভেতরে আগুন দেখা গেলেও সীমান্তের নিরাপত্তায় কোনো ছাড় নেই। টেকনাফ-২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. আশিকুর রহমান জানান, অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বিজিবি সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। নতুন করে কাউকে বাংলাদেশে ঢুকতে দেয়া হবে না।
সরকারি এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে আলোচনা শুরু হওয়ার পর থেকেই রাখাইনে এই ধরনের অগ্নিকাণ্ড বাড়ছে। রোহিঙ্গাদের ফেলে আসা বাড়িঘরগুলো পুড়িয়ে দেয়ার পাশাপাশি জঙ্গলও পরিষ্কার করা হচ্ছে। এর কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়ার আগ্রহ যেন কমে যায়।
রোহিঙ্গা নেতারা জানিয়েছেন, রাখাইনে এখনও নির্যাতন চলছে। আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের সভাপতি মোহাম্মদ জুবায়ের জানান, স্বজনদের মাধ্যমে তারা জানতে পেরেছেন, আরাকান আর্মি রোহিঙ্গাদের ঘর থেকে বের করে রোদে বসিয়ে রেখে নির্যাতন করছে। পাশাপাশি আগুন দিয়ে ঘরবাড়ি ধ্বংস করছে।
কক্সবাজার সিভিল সোসাইটির সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী বলেন, নতুন করে রাখাইনে অস্থির পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ায় সীমান্তে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের শঙ্কা তৈরি হয়েছে। তবে সীমান্তে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কঠোর নজরদারিতে রয়েছে।
এ বিষয়ে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ এহসান উদ্দিন জানান, সীমান্তে আগুনের ধোঁয়া দেখা গেলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। বিজিবি ও কোস্টগার্ড সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে থেকে সীমান্ত পাহারা দিচ্ছে। যাতে নতুন করে কেউ বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারে।