নওগাঁর ঐতিহ্যবাহী কুমড়ো বড়ি এখন দেশের গণ্ডি পেরিয়ে পৌঁছে গেছে ভারতের পাশাপাশি মালয়েশিয়ায়ও। শীত মৌসুমে এই কুমড়ো বড়ির চাহিদা থাকে তুঙ্গে। গ্রামীণ নারীরা ঘরের কাজের ফাঁকে কুমড়ো বড়ি তৈরি করে আয় করছেন, যা তাদের জীবনে নিয়ে আসছে আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্য। নওগাঁর সুলতানপুর, রানীনগর, আত্রাই, মান্দা ও বদলগাছীর বিভিন্ন এলাকায় এই বড়ি তৈরির কাজ চলছে জোরেশোরে। শীতকালে খাল-বিলের দেশীয় মাছ আর শীতকালীন সবজির সঙ্গে এই বড়ি রান্নার চল রয়েছে বহুদিন ধরে। কুমড়ো বড়ি তৈরি করতে মাসকালাইয়ের ডাল ভিজিয়ে খোসা তোলা হয়। এরপর ডাল মেশিনে পিষে এর সঙ্গে কুমড়ো, কালোজিরা ও মশলা মিশিয়ে ফ্যাট তোলা হয়। পরে ছোট ছোট আকারে বসিয়ে দুই-তিন দিন রোদে শুকিয়ে প্রস্তুত করা হয় এই মুখরোচক বড়ি।
কুমড়ো বড়ি তৈরির কাজ মূলত নারীরাই করে থাকেন। ঝর্ণা রানী জানান, তিনি তার শাশুড়ির কাছ থেকে এই বড়ি তৈরির পদ্ধতি শিখেছেন এবং এখন তার ছেলের বউকেও তা শেখাচ্ছেন। তিনি বলেন, মাসকালাইয়ের ডাল আর কুমড়োর মিশ্রণে তৈরি এই বড়ি দিয়ে লাউ, শোল মাছ বা যেকোনো সবজি রান্না করলে খাবারের স্বাদ বেড়ে যায় বহুগুণ। কাঞ্চনা রানী জানান, শীতের আশ্বিন থেকে পৌষ মাস পর্যন্ত বড়ি তৈরির ব্যস্ততা থাকে বেশি। এই সময়ে রোদে শুকানোর পর পাইকাররা এসে বাড়ি থেকে বড়ি কিনে নিয়ে যান।
বর্তমানে কুমড়ো বড়ি দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ হচ্ছে। বিশেষ করে ঢাকাসহ বড় শহরে এই বড়ির চাহিদা বেশি। মান ভালো হওয়ায় ভারত ও মালয়েশিয়াতেও এর রপ্তানি বাড়ছে। এক কেজি কুমড়ো বড়ি মানভেদে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি হয়। তবে কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় অনেক কারিগর মুনাফা কম হওয়ার অভিযোগ করছেন।
নওগাঁ বিসিক শিল্প নগরীর উপব্যবস্থাপক শামীম আক্তার বলেন, কুমড়ো বড়ি গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যের একটি অংশ। এটি টিকিয়ে রাখতে কারিগরদের উন্নত প্রশিক্ষণ এবং সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করা হবে। তিনি জানান, এই ঐতিহ্যবাহী শিল্পের প্রসার ঘটাতে তারা সবসময় কারিগরদের পাশে রয়েছেন।
নওগাঁর কুমড়ো বড়ি আজ শুধু গ্রামীণ ঐতিহ্যের প্রতীক নয়, এটি আন্তর্জাতিক বাজারেও জনপ্রিয়তা অর্জন করছে। তবে যথাযথ সহায়তা পেলে এই শিল্প আরও এগিয়ে যেতে পারে এবং নারীদের জীবনমান উন্নত করার পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।