প্রকাশ: ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৩:১৭
ভারতের সঙ্গে প্রতিবেশী দেশগুলোর সম্পর্ক বরাবরই স্পর্শকাতর এবং মাঝে মাঝে উত্তেজনাপূর্ণ। সম্প্রতি ভারতের সামরিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের কারণে আঞ্চলিক উত্তেজনা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিবেশী দেশগুলো এই আগ্রাসনের বিরুদ্ধে তাদের নিজেদের প্রতিক্রিয়া এবং প্রতিরোধের কৌশল নিয়ে ভাবতে শুরু করেছে।
ভারতের সামরিক শক্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি এর সীমান্তে বাড়তি নজরদারি ও আগ্রাসী অবস্থান বিশেষ করে ছোট দেশগুলোর জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই অবস্থায় আঞ্চলিক রাজনীতিতে ভারতের প্রতিবেশীরা কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাবে, তা নিয়ে আলোচনা তুঙ্গে।
সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ
সাম্প্রতিক সময়ে ভারত এবং এর প্রতিবেশীদের মধ্যে বিভিন্ন ইস্যুতে উত্তেজনা বেড়েছে। বিশেষ করে সীমান্ত সংক্রান্ত বিষয়গুলোতে ভারত আগ্রাসী অবস্থান নিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে প্রতিবেশী কয়েকটি দেশ। এসব দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে নেপাল, বাংলাদেশ এবং পাকিস্তান।
উদাহরণস্বরূপ, নেপালের সঙ্গে ভারতীয় সীমান্ত সংক্রান্ত বিরোধ চরমে উঠেছে যখন ভারত নতুন মানচিত্র প্রকাশ করে যা নেপালের কিছু অঞ্চলকে নিজেদের অংশ হিসেবে দেখায়। বাংলাদেশও সীমান্তে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীদের গুলিবর্ষণ এবং জোরপূর্বক সীমান্ত পেরিয়ে ঢুকে আসা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। পাকিস্তানও কাশ্মীর ইস্যুতে ভারতের কঠোর অবস্থান ও সামরিক আগ্রাসনের প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে।
প্রতিবেশী দেশগুলোর প্রতিক্রিয়া
ভারতের এই আগ্রাসী মনোভাবের বিরুদ্ধে প্রতিবেশী দেশগুলো নিজেদের রক্ষার কৌশল হিসেবে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে শুরু করেছে। নেপাল তাদের সীমান্ত রক্ষায় নতুন পদক্ষেপ নিয়েছে এবং আন্তর্জাতিক মহলে ভারতের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছে।
বাংলাদেশেও সরকারের পক্ষ থেকে সীমান্ত রক্ষায় কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হয়েছে। বিশেষ করে ভারতের সীমান্ত রক্ষীদের আগ্রাসী মনোভাব এবং গুলি চালানোর ঘটনায় বাংলাদেশ সরকার বারবার প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে। বাংলাদেশ সরকারের মুখপাত্ররা বলেছেন, তারা কূটনৈতিকভাবে এই ইস্যু সমাধানের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, কিন্তু প্রয়োজন হলে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
পাকিস্তানও তাদের সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করে চলেছে এবং ভারতের বিরুদ্ধে আঞ্চলিক নিরাপত্তা বিঘ্নিত করার অভিযোগ এনে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে এই ইস্যু তুলছে।
প্রতিরোধের কৌশল
প্রতিবেশী দেশগুলো ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কীভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে তা নিয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। তবে সামরিক প্রতিরোধের পাশাপাশি কূটনৈতিক চাপ প্রয়োগ এবং আন্তর্জাতিক মহলে সমর্থন জোগাড় করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
কিছু বিশেষজ্ঞের মতে, ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে একটি সম্মিলিত আঞ্চলিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হতে পারে। তবে এর সম্ভাবনা এখনও পর্যালোচনার পর্যায়ে রয়েছে।
ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ
ভারতের সঙ্গে প্রতিবেশী দেশগুলোর সম্পর্ক ভবিষ্যতে কীভাবে উন্নতি হবে, তা নির্ভর করছে এই অঞ্চলের কূটনৈতিক এবং সামরিক পরিস্থিতির উপর। আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা রক্ষা করতে হলে ভারতের আগ্রাসী মনোভাবের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া দেখানো এবং প্রতিরোধের কৌশল নির্ধারণ করা জরুরি হয়ে পড়েছে।
এই উত্তেজনা কীভাবে নিরসন করা যাবে এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা কীভাবে বজায় থাকবে, তা সময়ই বলে দেবে। তবে প্রতিবেশী দেশগুলো সতর্ক এবং প্রস্তুত রয়েছে, এটাই আপাতত তাদের একমাত্র সান্ত্বনা।