প্রকাশ: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২০, ২১:১২
ধান-নদী-খালবেষ্টিত বরিশাল। নদী-খালের দেশ বরিশালে এক সময় সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল খুবই অনুন্নত। সড়ক পথে ফেরি পারাপারে ছিল বিড়ম্বনার। নৌপথেও যাতায়াতে আধুনিক ব্যবস্থা ছিল না। আকাশপথ বিচ্ছিন্ন ছিল বরিশাল। আর রেল গাড়ি? তাতো কোন কল্পনাও করতে পারেনি দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ। এসবের কারণে সহসাই দখিণের মানুষকে শুনতে হতো “আইতে শাল, যাইতে শাল। হেইয়ার নাম বরিশাল।” স্বাধীনতা পরবর্তীকালে দক্ষিণাঞ্চলকে বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে ধরা হতো।
এ দলটি দীর্ঘদিন সরকারে থাকা এবং এ অঞ্চলে বাঘা বাঘা মন্ত্রী, এমপি, এমনিকি রাষ্ট্রপতি থাকলেও দক্ষিণাঞ্চল ছিল অবহেলিত। তবে সেই অবহেলিত মানুষের জন্য আশির্বাদ হয়ে এসেছে বর্তমান ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগ। দলটির প্রধান বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ়চেতা ও দূরদর্শী সিদ্ধান্তে অবহেলিত দক্ষিণাঞ্চল এখন অপার সম্ভাবনার অপর নাম। ইতোমধ্যে দখিনাবাসীর স্বপ্নের পদ্মা সেতুর ৯০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে এবং পায়রা সমুদ্র বন্দরে পণ্য ওঠানামা করছে। উদ্ভাসিত হতে চলেছে অপার সম্ভাবনার দুয়ার।
বর্তমানে দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে লেবুখালীর পায়রা নদীর ওপর সেতু নির্মাণ কাজ। একই সাথে দেশের সবচেয়ে মেগা প্রকল্প পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ দ্রুত এগিয়ে চলেছে। ইতোমধ্যে সেতুটির ৯০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। গত শুক্রবার পদ্মা সেতু প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি পর্যালোচনা সভায় সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন সেতুর ৮১ শতাংশেরও বেশি এবং মূল সেতুর প্রায় ৯০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। পদ্মায় এ পর্যন্ত ৪১ স্প্যানের মধ্যে ৩১টি বসানো হয়েছে জানিয়ে সেতুমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে দৃশ্যমান হয়েছে ৪ হাজার ৬৫০ মিটার। তিনি বলেন, ৪২ পিয়ারের কাজ ইতিমধ্যেই শেষ হয়েছে এবং নদীশাসনের কাজ প্রায় ৮৪ শতাংশ শেষ হয়েছে। মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তে সংযোগ সড়ক ও টোল প্লাজার কাজও ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে বলে জানান মন্ত্রী।
বাল্কহেড টার্মিনাল, শিপইয়ার্ড, আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণসহ চলছে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ। বর্তমান সরকারের মন্ত্রী, এমপি, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বিভিন্ন সভা-সমাবেশ-সেমিনারে বলে থাকেন, পদ্মা সেতু আর পায়রা বন্দর চালু হলে বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চল হবে সিঙ্গাপুরের চেয়েও সমৃদ্ধ অর্থনৈতিক অঞ্চল। এছাড়া একই স্থানে দাঁড়িয়ে সূর্যাস্ত আর সূর্যোদয় দেখার বিরল সুযোগ রয়েছে জাপানে। ঠিক একই সুযোগ রয়েছে বাংলাদেশের বিশাল এ সমুদ্র সৈকত কুয়াকাটায়। সাগর কন্যা কুয়াকাটায় এখন উন্নতমানের অনেক হোটেল-মোটেল-রেস্টুরেন্ট হয়েছে। শুধু স্থানীয় মানুষের এবং সেখানে দায়িত্বরত ট্যুরিস্ট ও নৌ পুলিশের মানসিকতার পরিবর্তন হলে কুয়াকাটায় স্বাচ্ছন্দ্যে বেড়াতে পারবেন পর্যটকরা।
রাবনাবাদ চ্যানেল অনেক গভীর হওয়ায় পায়রা সমুদ্রবন্দরে সরাসরি পণ্য খালাস করতে পারবে মাদার ভেসেলগুলো। এতে পণ্য আমাদানি-রপ্তানিতে পরিবহন খরচ অনেক কমবে। বরিশালে শিল্প কলকারখানা-গার্মেন্ট হলে কম খরচে শ্রমিক পাওয়া যাবে। উৎপাদন ব্যয়ও কমবে। সব কিছু মিলিয়ে আগামী কয়েক বছরে দক্ষিণাঞ্চল সিঙ্গাপুরের চেয়েও সমৃদ্ধ অর্থনৈতিক অঞ্চল হবে বলে তার বিশ্বাস। পায়রা সমুদ্র্রবন্দর সংশ্লিষ্টরা জানান, যখন একটি বন্দর গড়ে ওঠে, তখন সেই বন্দর ঘিরে অনেক কলকারকানা-গার্মেন্ট স্থাপন, আমদানি-রপ্তানিসহ ব্যাপক কর্মযজ্ঞ হবে এটাই স্বাভাবিক। ফলে এই বন্দর বরিশালের চেহারা পাল্টে দেবে।
এখানে আছে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, আলাদা মহিলা ও পুরুষ টেকনিক্যাল ট্রেনিং কলেজ (টিটিসি)। আছে মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। চালুর অপেক্ষায় আছে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ এবং মেরিন একাডেমি। প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ও। সব কিছু মিলিয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য বরিশালেই রয়েছে সব ধরনের ব্যবস্থা। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রফেসর মোঃ হানিফ জানান, সেই ব্রিটিশ আমল থেকেই শিক্ষায় অগ্রগামী ছিল বরিশাল। সেই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে বরিশালে যুগোপযোগী বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হয়েছে। এখন দরকার সেগুলোর সঠিক পরিচর্যা।