এক স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণ ও হত্যা শেষে লাশ নদীতে ভাসিয়ে দেয়ার অভিযোগে নারায়ণগঞ্জ কারাগারে জেল খাটছেন তিন অভিযুক্ত।তবে এরই মধ্যে সেই স্কুলছাত্রী ফিরে আসায় তোলপাড়ের সৃষ্টি হয়।ঘটনাটি ঘটেছে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায়। রোববার (২৩ আগস্ট) বিকেলে বন্দর থানার নবীগঞ্জ এলাকার একটি মোবাইল ফোনের দোকান থেকে ওই স্কুলছাত্রীকে তার মা-বাবা উদ্ধার করে নারায়ণগঞ্জ সদর থানায় হস্তান্তর করলে তোলপাড়ের সৃষ্টি হয়।
ওই স্কুলছাত্রী জানান, সে নিজে প্রেম করেই বাড়ি থেকে পালিয়ে গেছে। তারা বন্দরে বাসা ভাড়া করে বসবাস করে আসছিলো।তার মা জানান, বন্দরের কুশিয়ারা এলাকার ইকবাল নামে একটি ছেলের সাথে তার মেয়ে গত দেড় মাস ছিলো। তাকে বিয়ে করে তারা সেখানে ছিলো বলে জানান তিনি।স্কুলছাত্রীর বাবা জাহাঙ্গীর আলম জানান, পুলিশ বলেছিলো আমার মেয়েকে ধর্ষণের পর নদীতে ফেলে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় নির্দোষ ৩ জনকে আটক করেছে তারা। এই দেড় মাসে আমার মেয়েকে উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। কিন্তু মেয়ে নিজে থেকেই আজ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাকে আমরা নিয়ে থানায় আসি।
এদিকে অন্য একটি সূত্র জানায়, বন্দরের কুশিয়ারা এলাকায় ইকবাল ওরফে ইব্রাহিম নামে এক ছেলের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে গত দেড়মাস ধরে এক সঙ্গে বসবাস করছে ওই স্কুলছাত্রী।ওই স্কুলছাত্রীকে উদ্ধারের বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আসাদুজ্জামান রোববার রাত সাড়ে ১২টার দিকে জানান, মেয়েটিকে উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি পুলিশের হেফাজতে রয়েছেন।
তিনি বলেন, ওই তিন আসামির জবানবন্দিতে ঘটনার বর্ণনা একই রকম ছিল। আসামিরা একে অপরকে শনাক্তও করেছেন। তারা যে মেয়েকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে বলে স্বীকার করেছেন, সেই মেয়ে জীবিত আছে। তাহলে তারা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিলেন কেন? তারা অন্য কোনো মেয়ের সঙ্গে এমনটা করেছেন কিনা তা রিমান্ডে নিয়ে আবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। আর ওই কিশোরীকে আদালতে সোপর্দ করা হবে।
এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শামীম আল মামুন বলেন, ইকবাল ও ওই স্কুলছাত্রী একে অপরের পরিচিত ছিলো। গ্রেপ্তারকৃত তিন আসামি আদালতে জবানবন্দি দিয়েছিলো। রোববার স্কুলছাত্রীর তথ্য মেলে সে ইকবাল নামে এক যুবকের সঙ্গে ছিলো। পুলিশ ইকবালকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে।ইকবাল প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশে জানিয়েছেন, তারা বিয়ে করে বন্দর এলাকায় একটি বাড়িতে বসবাস করছেন।
যদিও এর আগে মামলার তদন্তকারী অফিসার শামীম আল মামুন অভিযুক্তদের জবানবন্দি প্রসঙ্গে জানিয়েছিলেন, নারায়ণগঞ্জ শহরের দেওভোগ পাক্কারোড এলাকার গার্মেন্ট শ্রমিক জাহাঙ্গীরের ছোট মেয়ে জিসার সঙ্গে বখাটে আবদুল্লাহ তার বন্ধু ইজিবাইক চালক রকিবের মোবাইল দিয়ে ৩ মাস প্রেম করেছে। ঘটনার দিন ৪ জুলাই ঘোরাফেরার কথা বলে তাকে ইস্পাহানি ঘাটে ডেকে নেয় আবদুল্লাহ। এরপর বন্দরের বিভিন্ন স্থানে রকিবের ইজিবাইক দিয়ে ঘোরাফেরা করে।
পরে রাত ৮টায় ইস্পাহানি ঘাটে এসে খলিলুর রহমানের নৌকায় উঠে শীতলক্ষ্যা নদীতে ঘুরতে থাকে। এক পর্যায়ে নৌকার মধ্যেই আবদুল্লাহ প্রথমে জিসাকে ধর্ষণ করে। এরপর মাঝি খলিলুর রহমানও জোর করে মেয়েটিকে ধর্ষণ করে। এতে কিশোরী বাকবিতণ্ডা করলে ক্ষিপ্ত হয়ে খলিলুর রহমান সেই কিশোরীর দুই পা চেপে ধরে আর আবদুল্লাহ গলাটিপে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। তারপর দুইজনে মিলে সেই ৫ম শ্রেণির স্কুল ছাত্রী কিশোরীকে শীতলক্ষ্যা নদীর মাঝখানে ফেলে দেয়।
গত ৪ জুলাই থেকে নিখোঁজ হয় নারায়ণগঞ্জ শহরের দেওভোগ পাক্কা রোড সরকারি প্রাইমারি স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির ওই ছাত্রী (১৩)। নিখোঁজের প্রায় দুই সপ্তাহ পর ১৭ জুলাই নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় গিয়ে মেয়ের নিখোঁজ জিডি করেন মা। আর ৬ আগস্ট থানায় অপহরণ মামলা করেন বাবা। মামলায় উল্লেখ করেন, আসামি আব্দুল্লাহ তার মেয়েকে স্কুলে যাওয়া আসার পথে প্রেমের প্রস্তাব দিত। এতে বাধা দিলে মেয়েকে অপহরণের হুমকি দেয়। ৪ জুলাই সন্ধ্যায় আব্দুল্লাহ ফোনে ঠিকানা দিলে আমার মেয়ে ওই ঠিকানায় যায়। পরে তাকে গাড়ি দিয়ে অপহরণ করে আব্দুল্লাহ ও তার সহযোগিরা। এরপর থেকেই আমার মেয়ের কোনো খোঁজ নেই।
মেয়েটির মায়ের মোবাইলের কললিস্ট চেক করে রকিবের সন্ধান পায় পুলিশ। রকিবের মোবাইল নম্বর দিয়ে আব্দুল্লাহ ওই স্কুলছাত্রীর সাথে যোগাযোগ করতো।ঘটনার দিনও ওই নম্বর দিয়ে কল করে আব্দুল্লাহ। এ ঘটনায় রকিব, আব্দুল্লাহ ও নৌকার মাঝি খলিলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
৯ আগস্ট নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মিল্টন হোসেন ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আহমেদ হুমায়ুন কবিরের পৃথক আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন আসামিরা। স্বীকারোক্তিতে তারা জানান, পঞ্চম শ্রেণির ওই স্কুলছাত্রীকে গণধর্ষণের পর হত্যা করে লাশ ভাসিয়ে দেয়া হয়েছে শীতলক্ষ্যা নদীতে।