উখিয়ায় লকডাউনের প্রথম দিনে কঠোর অবস্থানে প্রশাসন

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: সোমবার ৮ই জুন ২০২০ ০৪:১২ অপরাহ্ন
উখিয়ায় লকডাউনের প্রথম দিনে কঠোর অবস্থানে প্রশাসন

করোনাভাইরাস মহামারি আকার ধারণ করায় দেশের প্রথম রেড জোন ঘোষণা দিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো লকডাউন শুরু হয়েছে উখিয়ায়।৮ জুন(সোমবার) অবরুদ্ধের প্রথম দিনে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ছিল কঠোর অবস্থানে। এর ফলে যে কোনো ধরণের পরিবহন, মার্কেট, দোকান ও বিপণিবিতান বন্ধ রাখার জন্য প্রশাসনের নির্দেশনা থাকায় সকলে তা মেনে চলেছেন।উখিয়া সদর রাজাপালং ও পালংখালী রেড জোন এলাকায় ওষুধের দোকান ছাড়া সব রকমের দোকানপাট বন্ধ ছিল। জরুরী প্রয়োজনে প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া কেউ এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে পারেননি। নির্মাণ শ্রমিক বাবুল দীর্ঘপথ হেটে বাজারে ওষুধ কিনতে এসেছেন বলে জানান।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে খাদ্য সহায়তা ও স্বাস্থ্য সেবায় নিয়োজিত এনজিও কর্মীরা অবাধে ক্যাম্পে ঢুকেছেন। তবে যে সমস্ত এলাকা রেড জোনের আওতায় নয়, সে সব এলাকায় পরিবহনের অভাবে অনেককে হেটে চলাচল করতে দেখা গেছে। উখিয়া থেকে বালুখালী ও পালংখালী এলাকায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যাওয়ার জন্যে বের হয়ে মুমিনা ও ইয়াছমিন ফিরে এসেছেন বাসা বাড়িতে। তাদের ফিরে আসার কারণ জানতে চাইলে তারা যথাসময়ে গাড়ি না পেয়ে ফিরে এসেছেন বলে জানান।

সীমিত আকারে দু-একটি রিক্সা টমটম ও সিএনজি চলাচল করতে দেখা গেছে। আগের মতো মানুষকে অবাধে চলাচল করতে দেখা যায়নি। দু-একজন যারা প্রয়োজনে বের হয়েছেন তারা মুখে মাস্ক ব্যবহার করেছেন। এমনকি রিক্সা চালকও মুখে মাস্ক পরে, হাতে গ্লাবস ব্যবহার করে বের হয়েছেন। উখিয়া থানা প্রশাসন প্রথম থেকে মানুষকে সচেতন করতে কিছুটা নমনীয় ছিলেন। তবে নির্দেশনা অমান্য করলে প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে।

এ ব্যাপারে উখিয়া থানা অফিসার ইনচার্জ মরজিনা আক্তার মরজুর কাছে মোবাইলে জানতে চাওয়া হলে তিনি কোটবাজার এলাকায় লকডাউনের দায়িত্ব পালন করছেন এবং সরেজমিন এসে দেখে নিউজ করার আহবান জানান। করোনা ভাইরাসের আগ্রাসী থাবায় দিন দিন সংক্রমণের সংখ্যা বাড়ছে উখিয়ায়। এ অবস্থায় উপজেলার কিছু অংশ অধিক হারে করোনা ঝুঁকিতে থাকায় রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করে ১৪ দিনের জন্য কঠোর লকডাউনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। উখিয়া ইউএনও ও উপজেলা করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি নিকারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, উখিয়ায় আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে করোনা সংক্রমণ।

এ অবস্থায় যেখানে যেখানে করোনা রোগীর সংখ্যা বাড়ার আশংকা থাকায় সেই এলাকাকে রেড জোনের আওতায় আনা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের ঘোষণা অনুযায়ী, সপ্তাহের সোম ও বৃহস্পতিবার রেড জোন এলাকায় মুদির দোকান ও কাঁচাবাজার স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত আকারে সকাল ৮ টা থেকে বিকেল ৪ টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। সেই সঙ্গে সপ্তাহের এ দুদিন খোলা থাকবে ব্যাংকসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। এছাড়া লকডাউনের এ সময়ে নিত্যপণ্য বহনকারী হালকা ও ভারি যানবাহন  শুধু রাত ৮ টা থেকে সকাল ৮ টা পর্যন্ত রেড জোন এলাকায় চলাচল করতে পারবে।

পাশাপাশি কোভিড ১৯ মোকোবিলা ও জরুরী সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সীমিত আকারে খোলা রাখা যাবে। কোভিড-১৯ মোকাবিলায় কাজ করা বেসরকারি সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানসমূহের গাড়ি চলাচলের জন্য প্রশাসনের অনুমতি নিতে হবে। উখিয়া উপজেলার রাজাপালং ও পালংখালীতে আক্রমণের সংখ্যা বেশি হওয়ায় কুতুপালং,থাইংখালীসহ বেশ কয়েকটি এলাকা রেড জোনের আওতায় আনা হয়েছে।

এসব এলাকায় কঠোর লকডাউন চলছে।কুতুপালং বাজারে লকডাউন বাস্তবায়নে মাঠে সেচ্ছাসেবক নিয়ে দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে খোদ বাজার কমিটির সভাপতি হেলাল উদ্দিন কে।বালুখালীতে উখিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহীম আজাদ বিশাল কর্মী সমর্থক নিয়ে সেচ্ছাসেবকের দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়।থাইংখালীতে ইউপি চেয়ারম্যান এম.গফুর উদ্দিন চৌধুরী দায়িত্ব পালন করছেন।তবে তাকে রোহিঙ্গা ঠেকাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে বলে জানা গেছে।

 উখিয়া উপজেলা সম্মেলন কক্ষে শনিবার উখিয়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার সভাপতিত্বে কোভিড-১৯ প্রতিরোধ করণীয়বিষয়ক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।সভায় উপস্থিত ছিলেন-উখিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী, উখিয়া থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী, পালংখালী ইউনিয়ন চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী, উপজেলা কমিশনার (ভূমি) আমিমুল এহসান খান, উখিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডাক্তার রনজন বড়ুয়া রাজন, উখিয়া থানার ওসি মর্জিনা আক্তার প্রমুখ। উখিয়া রাজাপালং ইউনিয়নের ২,৫,৬ এবং ৯ নং ওয়ার্ড ও পালংখালী ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত।