বর্তমান সমাজে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। জনরোষ, গুজব, এবং প্রতিশোধের নামে নিরপরাধ মানুষের ওপর হামলার ঘটনা ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য। ইসলামের শিক্ষা অনুসারে, মহান আল্লাহর নবি হজরত মুসার (আ.) আগমনে ফেরাউনের নির্দেশিত বনি ইসরাইলের ছেলেশিশুদের হত্যার ইতিহাস স্মরণ করিয়ে দেয় যে, এই ধরনের হত্যা মহাপাপ।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেছেন, “ফেরাউন বলল, আমরা তাদের পুত্রদের হত্যা করব” (সুরা আরাফ, আয়াত: ১২৭)। ফেরাউনের এই অন্যায়ের ফল ভয়াবহ ছিল, এবং আল্লাহ তাকে ও তার বাহিনীকে সমুদ্রে নিক্ষেপ করেন (সুরা কাসাস, আয়াত: ৩৯, ৪০)। ইসলামে অন্যায় হত্যাকাণ্ড একটি গুরুতর অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। আল্লাহ বলেন, “যে ব্যক্তি নরহত্যা করবে, সে যেন সমগ্র মানবতাকে হত্যা করল” (সুরা: মায়েদা, আয়াত: ৩২)।
অতএব, ইসলামিক শিক্ষায় হত্যাকাণ্ডের পেছনে আইন নিজ হাতে তুলে নেওয়া এবং গণপিটুনি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। প্রিয় নবী (স.) বিদায় হজে ঘোষণা করেন, “তোমাদের জীবন, সম্পদ, সম্মান পরস্পরের কাছে পবিত্র।” তিনি গণহত্যার শাস্তি সম্পর্কে বলেন, “যদি একজন মুমিনকে হত্যা করা হয়, তাহলে সেই হত্যাকারী সকলের শাস্তির যোগ্য।” (তিরমিজি)
হজরত ওমর (রা.) এর সময়ে, গণপিটুনির বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। তিনি বলেছিলেন, “যদি ইয়েমেনের সব মানুষ মিলে হত্যাকাণ্ড ঘটায়, তবে আমি তাদের বিরুদ্ধে আল্লাহর বিধান বাস্তবায়ন করব।” (মুআত্তা ইমাম মালেক)
সমাজের সকল স্তরে এই শিক্ষাগুলো অনুসরণ করার সময় এসেছে। ইসলামের মৌলিক শিক্ষা হল শান্তি, ন্যায়বিচার এবং নিরাপত্তা। বিচারহীনতা এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে। ইসলামী উম্মাহর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, তারা যেন নিজেদের আইন হাতে তুলে না নিয়ে, বরং আল্লাহর নির্দেশনা অনুযায়ী ন্যায় বিচারের পথে চলে।
সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য প্রতিটি মুসলিমের দায়িত্ব হল অপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করা এবং নিরপরাধ মানুষের জীবন ও সম্মান রক্ষা করা। আইন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা ছাড়া মানবতা অগ্রসর হতে পারবে না।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।