ফেব্রুয়ারি মাসে সড়কে ৫০৪ টি দুর্ঘটনা নিহত ৫৩৪

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: সোমবার ২রা মার্চ ২০২০ ০১:২৪ অপরাহ্ন
ফেব্রুয়ারি মাসে সড়কে ৫০৪ টি দুর্ঘটনা নিহত ৫৩৪

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে সড়কে ৫০৪টি দুর্ঘটনায় ৫৩৪ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন এক হাজার ১৬৯ জন। একই মাসে রেলপথে ৫৬ দুর্ঘটনায় ৪৮ জনের প্রাণহানি হয়েছে। রেলপথে আহত হয়েছেন ১৩ জন। এছাড়া ফেব্রুয়ারিতে নৌ-পথে নয়টি দুর্ঘটনায় ৪০ জন নিহত এবং ৫৬ জন আহত হয়েছেন। নিখোঁজ হয়েছেন ৬৪ জন।বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির সড়ক দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে। দেশের সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে সোমবার সকালে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে সংগঠনটি।সংগঠনটির পক্ষ থেকে পাঠানো প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফেব্রুয়ারি মাসে সড়কে দুর্ঘটনায় আক্রান্ত ২১২জন পথচারী, ১৩৪জন চালক, ৭৩জন পরিবহন শ্রমিক, ২৬০জন শিক্ষার্থী, ১৩জন শিক্ষক, ০২জন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ৮৮জন নারী, ৭৬জন শিশু, ০১জন সাংবাদিক, ০১জন প্রকৌশলী, ০২জন মুক্তিযোদ্ধা এবং ১৬জন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীর পরিচয় সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে। এর মধ্যে নিহত হয়েছে ৯৯জন চালক, ১৮৭জন পথচারী, ৬২জন নারী, ৭১জন ছাত্র-ছাত্রী, ৪৫জন পরিবহন শ্রমিক, ৫৪জন শিশু, ১৩জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, ০২জন বীর মুক্তিযোদ্ধা, ১১জন শিক্ষক, ০১জন প্রকৌশলী।মোট সংগঠিত দুর্ঘটনায় ১৫.৭৫ শতাংশ বাস, ২৭.৯৩ শতাংশ ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান, ৪.৩০ শতাংশ কার-জিপ-মাইক্রোবাস, ৮.১৭ শতাংশ সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ২০.৯৫ শতাংশ মোটরসাইকেল, ১০.৫৪ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক, ১২.৩৩ শতাংশ নছিমন-করিমন-মাহিন্দ্রা-ট্রাক্টর ও লেগুনা সড়ক দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে।বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মোট দুর্ঘটনার ৫৭.৫৩ শতাংশ গাড়ি চাপা দেওয়ার ঘটনা, ১৮.০৫ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ১৬.৬৭ শতাংশ খাদে পড়ে, ৫.৯৫ শতাংশ বিবিধ কারণে, ০.৫৯ শতাংশ চাকায় ওড়না পেঁচিয়ে এবং ১.৩৮ শতাংশ ট্রেন-যানবাহন সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। জানুয়ারি মাসের তুলনায় ফেব্রুয়ারি মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় ২.৪৫ শতাংশ আহতের হার বৃদ্ধি পেলেও সড়কে দুর্ঘটনার ৫.৩৫ শতাংশ ও নিহত ২.৪৩ শতাংশ কমেছে।পরিসংখ্যানের তুলনামূলক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসের তুলনায় ফেব্রুয়ারি মাসে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ার ঘটনা ১.০৪ শতাংশ, পথচারীকে গাড়ি চাপা দেওয়ার ঘটনা ১.৬৩ শতাংশ এবং বেপরোয়া গতির কারণে মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ০.০২ শতাংশ কম সংঘটিত হয়েছে।দুর্ঘটনার ধরন বিশ্লেষণে দেখা গেছে এই মাসে মোট সংঘটিত দুর্ঘটনার ৪৫.০৪ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে, ২৬.১৯ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ২৩.০২ শতাংশ ফিডার রোডে সংঘটিত হয়। এছাড়াও সারা দেশে সংঘটিত মোট দুর্ঘটনার ৩.১৭ শতাংশ ঢাকা মহানগরীতে, ১.১৯ শতাংশ চট্টগ্রাম মহানগরীতে ও ১.৩৮ শতাংশ রেলক্রসিংয়ে সংঘটিত হয়। ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসের তুলনায় ফেব্রুয়ারি মাসে সড়ক-মহাসড়কের উন্নয়নের ফলে যানবাহনের গতি বাড়ার কারণে আঞ্চলিক মহাসড়কে ৩.৪৩ শতাংশ ও ফিডার রোডে ১.৭৪ শতাংশ সড়ক দুর্ঘটনা বৃদ্ধি পেলেও জাতীয় মহাসড়কে ২.৮১ শতাংশ সড়ক দুর্ঘটনা কমেছে।ফেব্রুয়ারি মাসে সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা সংগঠিত হয় ১৬ ফেব্রুয়ারি। এই দিনে ২৫টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২৭ জন নিহত এবং ৪০ জন আহত হয়। সবচেয়ে কম সড়ক দুর্ঘটনা হয় ২৭ ফেব্রুয়ারি। এইদিনে ৬টি সড়ক দুর্ঘটনায় চারজন নিহত এবং পাঁচজন আহত হয়। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণ মতে সড়ক দুর্ঘটনার কারণসমূহ হলো- বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালনা, বিপদজনক ওভারটেকিং, রাস্তা-ঘাটের ক্রটি, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, যাত্রী ও পথচারীদের অসতর্কতা, চালকের অদক্ষতা, চলন্ত অবস্থায় মোবাইল বা হেডফোন ব্যবহার, মাদক সেবন করে যানবাহন চালানো, রেলক্রসিং ও মহাসড়কে হঠাৎ ফিডার রোড থেকে যানবাহন উঠে আসা, রাস্তায় ফুটপাত না থাকা বা ফুটপাত বেদখলে থাকা, ট্রাফিক আইনের দুর্বল প্রয়োগ এবং ছোট যানবাহন বৃদ্ধি।যাত্রী কল্যাণ সমিতির পক্ষ থেকে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়। সুপারিশগুলো হলো-

ডিজিটাল পদ্ধতিতে সি সি ক্যামেরা স্থাপন করে সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ কঠোর ভাবে প্রয়োগ করা, টিভি চ্যানেল ও সংবাদপত্রসমূহে সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে ব্যাপক প্রচারের ব্যবস্থা করা, জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশ থেকে হাট-বাজার অপসারণ করা, ফুটপাত বেদখল মুক্ত করা, দেশের সড়ক-মহাসড়কে রোড সাইন (ট্রাফিক চিহ্ন) স্থাপন করা। জেব্রাক্রসিং অঙ্কন করা, গণপরিবহন চালকদের প্রফেশনাল ট্রেনিং ও নৈতিক শিক্ষার ব্যবস্থা করা, যাত্রী, পথচারী ও গণপরিবহনবান্ধব সড়ক পরিবহন বিধিমালা জরুরি ভিত্তিতে প্রণয়ন, গাড়ির ফিটনেস ও চালকদের লাইসেন্স প্রদানের পদ্ধতি উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আধুনিকায়ন করা। সুপারিশের মধ্যে আরও আছে- সড়ক দুর্ঘটনায় আর্থিক সহায়তা তহবিল গঠনপূর্বক হতাহতদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা, দেশব্যাপী চাহিদানুযায়ী পর্যাপ্ত মানসম্মত নতুন গণপরিবহন নামানোর উদ্যোগ নেয়া, ট্রাফিক পুলিশের কর্মকর্তা ও সদস্যদের প্রশিক্ষণের জন্য ট্রেনিং একাডেমি গড়ে তোলা, গণপরিবহনে সেবা ও নিরাপত্তার মান পর্যবেক্ষণের জন্য দেশের সকল মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, সচিব, জেলা প্রশাসকসহ জনপ্রতিনিধি ও সরকারি কর্মকর্তাদের প্রতিমাসে একদিন গণপরিবহন ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা, সড়কে চাদাঁবাজি বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা।