বছর পেরুলেও সরকারি সহায়তা মেলেনি ১৭ পরিবারের

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: বৃহঃস্পতিবার ২০শে ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০১:২২ অপরাহ্ন
বছর পেরুলেও সরকারি সহায়তা মেলেনি ১৭ পরিবারের

পুরান ঢাকার চকবাজারে চুড়িহাট্টা শাহী মসজিদের পেছনের একটি ভবন থেকে গত বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি রাত পৌনে ১১টার দিকে লাগা ভয়াবহ আগুনের ঘটনায় এক বছর পূর্তি হচ্ছে আজ। ওইদিন দিবাগত রাত ৩টার দিকে স্থানীয়দের সহায়তায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন ফায়ার সার্ভিসের প্রায় ২০০ কর্মী। আগুনে ঘটনাস্থলেই ৬৭ জন নিহত হন। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আরও চারজন।

পুরান ঢাকার ওই অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত, নিহত স্বজনদের চাকরি, আর্থিক সহায়তা ও পুনর্বাসনের উপলক্ষে তাদের সঙ্গে বসছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বিদায়ী মেয়র সাঈদ খোকন। উল্লেখ্য, মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে দায়িত্ব পাবেন ঢাকার নতুন মেয়র দুই শেখ ফজলে নূর তাপস ও আতিকুল ইসলাম।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা উত্তম কুমার রায় বলছিলেন, আজ (বৃহস্পতিবার) দুপুরে ডিএসসিসির নগরভবনের সভাকক্ষে মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন উপস্থিত থেকে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত-নিহতদের স্বজনদের চাকরি, আর্থিক সহায়তা-পুনর্বাসন উপলক্ষে করপোরেশনের পক্ষ থেকে গৃহীত ব্যবস্থাদি হস্তান্তর করবেন।

চুড়িহাট্টা ও পুরান ঢাকার বর্তমান অবস্থা
এক বছর আগে চুড়িহাট্টায় কেমিক্যালের কারণে আগুন লাগায় বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো পুরান ঢাকার আবাসিক ভবন থেকে কেমিক্যাল তুলে দিতে অভিযান চালায়। জব্দ করা হয় কেমিক্যাল, জরিমানা করা হয় অনেকভবন মালিককে।

তবে বুধবার পুরান ঢাকার আরমানিটোলা, শাবিস্তান হল গলি, বংশাল, মাহুৎটুলি, নাজিম উদ্দীন রোড, মিডফোর্ড ঘুরে অসংখ্য আবাসিক ভবনের নিচে কেমিক্যাল তুলতে দেখা গেছে। এমনকি চুড়িহাট্টায়ও দেখা যায় একই চিত্র।

স্থানীয়রা বলছেন, অভিযানের ২-১ মাস পর থেকেই এলাকার আবাসিক ভবনে রাতের আধারে কেমিক্যাল মজুত শুরু হয়। তবে এরপর থেকেই পুলিশের সামনেই দিনের আলোতেই কেমিক্যাল রাখা হয়। অবস্থার পরিবর্তন না হলে আরও বড় বিস্ফোরণ অপেক্ষা করছে পুরান ঢাকাবাসীর জন্য।

মামলার সর্বশেষ অবস্থা
আগুনের ঘটনায় চকবাজারের ওয়াটার ওয়ার্কস রোডের ৩২/৩৩ নম্বর বাড়ির বাসিন্দা মো. আসিফ চকবাজার থানায় একটি অবহেলাজনিত মৃত্যুর মামলা করেন। মামলার এজাহারে আগুনের জন্য ওয়াহেদ ম্যানশনের মালিকের দুই ছেলে মো. হাসান ও সোহেল ওরফে শহীদসহ অজ্ঞাত ১০-১২ জনের অবহেলাকে দায়ী করা হয়। এতে উল্লেখ করা হয়, চারতলা বাড়ির বিভিন্ন ফ্লোরে দাহ্য পদার্থ ছিল। মানুষের জীবনের ঝুঁকি জেনেও অবৈধভাবে রাসায়নিক গুদাম করার জন্য ব্যবসায়ীদের কাছে বাসা ভাড়া দেন তারা।

মামলার প্রধান দুই আসামি হাসান ও সোহেল ইতোমধ্যে আদালত থেকে জামিন নিয়েছেন। তবে উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি নেই এই মামলায়। এ বিষয়ে মামলার বাদী মো. আসিফ আহম্মেদ বলেন, ‘১ বছরেও মামলার কোনো অগ্রগতি নেই, এটা দুঃখজনক।’

জানতে চাইলে চকবাজার থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) কবির হোসেন বলেন, ‘মামলার প্রধান দুই আসামি জামিনে রয়েছেন। এ ছাড়া অজ্ঞাতনামাদের তিনজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন বিলম্বের জন্য চার্জশিট বিলম্ব হচ্ছে। আমাদের তদন্ত প্রায় শেষপর্যায়ে।’

এদিকে বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) পুলিশের কাছে নিহতদের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট জমা দিয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগ। রিপোর্ট প্রদানে বিলম্বের বিষয়ে ফরেনসিক বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ডাক্তার সোহেল মাহমুদ বলেন, আমরা টিমওয়াইজ করে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করি। এর মধ্যে ডিএনএ’র নমুনা সংগ্রহ করে এগুলো সিআইডিতে পাঠানো হয়। ওসব রিপোর্ট আসতে দেরি হওয়ায় এবং ময়নাতদন্তকারী টিমের কারও কারও বদলি হওয়ার কারণে রিপোর্ট প্রস্তুত হতে দেরি হয়েছে। আমরা গত সপ্তাহে ডিএনএ রিপোর্ট পেয়েছি, তাই ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন প্রস্তুত হতে কিছুটা সময় লেগেছে।
ইনিউজ ৭১/এম.আর