জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে এবার দ্বিতীয়বারের মতো রাজবাড়ী গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া পতীতাপল্লীর যৌনকর্মী রিনা বেগম (৫৫) মৃত্যুর পর ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী তার জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়েছে।গতকাল বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাত ১০টার দিকে দৌলতদিয়া পতীতাপল্লীর পাশে এ জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে তাকে পল্লীর নিদ্দিষ্ট কবরস্থানে দাফন করা হয়।রাজবাড়ী পুলিশ সুপার মোঃ মিজানুর রহমান পিপিএম বারের উদ্যোগে গোয়ালন্দ থানা জামে মসজিদের ইমাম আবু বক্কর সিদ্দিক এ জানাজার নামাজ পড়ান।
বৃহস্পতিবার বিকালে রিনা বেগম নামের এক যৌনকর্মীর মৃত্যু হয়। পরবর্তীতে বিষয়টি রাজবাড়ী পুলিশ সুপারের দৃষ্টিতে আসে এবং তাৎক্ষণিকভাবে তিনি ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী ওই যৌনকর্মীর জানাজা নামাজের উদ্দ্যোগ নেন। কিন্তু যৌনকর্মী বলে স্থানীয় কোনো ইমাম তার জানাজা পড়াতে রাজি হননি। তাই গোয়ালন্দ ঘাট থানা মসজিদের ইমামকে সাথে নিয়ে জানাজার নামাজ পড়ানোর ব্যবস্থা করেন।জানা গেছে, দেশের বৃহৎ পতীতাপল্লী রাজবাড়ী গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া। এখানে দুই থেকে আড়াই হাজার বাসিন্দার বসবাস এবং প্রাপ্তবয়স্কা যৌনকর্মী প্রায় ১২০০। যৌনকর্মী বা পতীতাপল্লীর বাসিন্দা বলে তাদের মৃত্যুর পর কোনো ইমাম জানাজা পড়াতে রাজি হত না। যে কারণে মৃত্যুর পর তাদের কলসি বেঁধে পদ্মায় ডুবিয়ে অথবা মাটিচাপা দেওয়া হতো। তবে এ রেওয়াজ ভেঙ চলতি মাসের ২ ফেব্রুয়ারি প্রথম কোনো যৌনকর্মীর জানাজা পড়ানোর মাধ্যমে নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি আশিকুর রহমান। তারই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার রাতে দ্বিতীয়বারের মতো জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে পল্লীর বাসিন্দাদের মধ্যে স্বস্তির দেখা মেলে।
জানাজার নামাজে উপস্থিত ছিলেন, পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান পিপিএম, বার, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফকির আব্দুল জব্বার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. সালাহউদ্দিন, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আব্দুল্লাহ আল মামুন,গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি আশিকুর রহমান, দৌলতদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান মন্ডলসহ স্থানীয় এলাকাবাসী।এর আগে চলতি মাসের ২ ফেব্রুয়ারি রাতে প্রথমবারের মতো দৌলতদিয়া পতীতাল্লীর যৌনকর্মী হামিদা বেগমের মৃত্যুর পর তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। ওই নামাজের পর স্থানীয় ও দেশি-বিদেশি মিডিয়া ফলাওকরে বিষয়টি তুলে ধরে এবং এই ধারা অব্যাহত থাকা নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন জাগে। দ্বিতীয় যৌনকর্মীর জানাজার মাধ্যমে সে সংশয় অনেকটাই কেটে গেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান এ বিষয়ে বলেন, আল্লাহ সর্বশক্তিমান, আল্লাহ ক্ষমাশীল। একজন মানুষের শেষকৃত্য হওয়ার যে সুযোগ সামাজিক কারণে সেটি যদি না দেই, তাহলে মানুষ হিসেবে মানুষের প্রতি অবিচার করা হবে। সেই আলোকে প্রথম কোনো যৌনকর্মীর জানাজা শেষে আজ দ্বিতীয় যৌনকর্মীর জানাজার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ধারা অব্যাহত থাকবে।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।