সেচ দেখতে বিদেশ যাবেন ২৪ কর্মকর্তা

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: বুধবার ২২শে জানুয়ারী ২০২০ ১২:০৯ অপরাহ্ন
সেচ দেখতে বিদেশ যাবেন ২৪ কর্মকর্তা

মজিববর্ষ সামনে রেখে মুজিবনগরের সেচ ব্যবস্থার উন্নয়ন করতে যাচ্ছে সরকার। এজন্য বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) থেকে ২৫৭ কোটি টাকা ব্যয়ের একটি প্রকল্প প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। আগামী ২৬ জানুয়ারি প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির সভা হবে। প্রকল্পের বেশকিছু খাতে অস্বাভাবিক ব্যয় বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় ২৪ জন কর্মকর্তা ১ কোটি ৬৮ লাখ টাকা ব্যয়ে বিদেশ ভ্রমণ করবেন, যা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন।

এছাড়া অন্য খাতের অস্বাভাবিক ব্যয় কমিয়ে আনারও নির্দেশনা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনা কমিশনের সংশ্লিষ্টরা। মজিবনগর সেচ উন্নয়ন শীর্ষক উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনায় (ডিপিপি) বলা হয়েছে, প্রকল্পের আওতায় খাল খনন ও পুনরুদ্ধার করা হবে।

এতে স্থানীয় কৃষকের চাষাবাদে ভূ-উপরিস্থ পানিনির্ভর সেচ সুবিধা বাড়ানো হবে। এতে ব্যয় হবে ২৫৭ কোটি ১৬ লাখ টাকা। চলতি বছর জুন থেকে ২০২৪ সাল জুন নাগাদ এটি বাস্তবায়ন করবে বিএডিসি। বিদেশ সফর বিষয়ে জানতে চাইলে পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সহকারী প্রধান মোহাম্মদ মিজানুর রহমান তালুকদার বলেন, প্রকল্পের আওতায় বিদেশ ভ্রমণ বাবদ মোটা অঙ্কের বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। ২৪ জন কর্মকর্তা এ অর্থ দিয়ে বিদেশ ভ্রমণ করবেন বলে ডিপিপিতে বলা হয়েছে। পিইসি সভায় এর কোন কোন দেশ কেন ভ্রমণ করবে, তা জানতে চাওয়া হবে। এছাড়া অন্যান্য আরও কয়েকটি বিষয়ে ব্যাখ্যা চাওয়া হবে।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএডিসর এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, বিদেশ ভ্রমণের মাধ্যমে এ সংক্রান্ত অভিজ্ঞতা অর্জিত হয়। প্রকল্প পাস হওয়ার পর অগ্রাধিকার বিবেচনা করে দেশ ঠিক করা হবে। তবে একবারে এসব কর্মকর্তা বিদেশ যাবেন না, আটজনের মোট তিনটি দল ধাপে ধাপে যাবে। প্রকল্প সংশ্লিষ্ট ছাড়াও কৃষি মন্ত্রণালয় ও পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা এই দলে থাকবেন বলে তিনি জানান। তবে মাত্রাতিরিক্ত ব্যয় নিয়ে কোনো কথা বলতে চাননি।

ডিপিপি ঘেঁটে দেখা গেছে, এ প্রকল্পের আওতায় পরিবহন খাতে ব্যয় প্রায় ৪ কোটি টাকা, ভ্রমণভাতা ১ কোটি ৭০ লাখ টাকা, তেল বা জ্বালানি খরচ ১ কোটি ২৫ লাখ প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্পের টাকায় অফিস ভবন মেরামতে ৩ কোটি টাকা, আবাসিক ভবন মেরামতে ৫০ লাখ টাকা, সেচ নিষ্কাশন অবকাঠামো উন্নয়নে দেড় কোটি টাকা, বিদ্যুৎ স্থাপনা মেরামতে ৫ লাখ, পাম্প মোটর সেচের যন্ত্রাংশ ক্রয়ে দেড় কোটি, পাম্প হাউজ নির্মাণে ১ কোটি ৬৫ লাখ, বনায়ন খাতে ৫ কোটি, নিরাপত্তা সেবায় ৪ কোটি ৮৯ লাখ টাকা চাওয়া হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশন বলছে, বিদেশ ভ্রমণসহ বিভিন্ন খাতে ব্যয় কমানোর নির্দেশনা দেওয়া হবে। অনেক ক্ষেত্রেই মাত্রাতিরিক্ত ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে।

ডিপিপিতে আরও দেখা গেছে, প্রকল্পের আওতায় ৫০টি গভীর নলকূপ স্থাপনের প্রি-মিটার স্থাপনে ১ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে ওই অঞ্চলে সেচ যন্ত্রে প্রি-পেইড মিটার বসানোর জন্য একটি আলাদা প্রকল্প চলমান রয়েছে। এজন্য এ ব্যয় বরাদ্দ বাতিল করবে কমিশন।

প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হবে মুজিবনগর এলাকাসহ আশপাশ তিন জেলার ১৩টি উপজেলায়। এর মধ্যে মেহেরপুরের সদর, গাংনী ও মুজিবনগর সদর। চুয়াডাঙ্গা জেলার সদর, আলমডাঙ্গা, দামুড়হুদা ও জীবননগর। কুষ্টিয়া জেলার সদর, কুমারখালী, খোকসা, ভেড়ামারা, মিরপর ও দৌলতপুর উপজেলা।

প্রকল্পের আওতায় ২২০ কিলোমিটার খাল পুনঃখনন, ২০৫টি বিদ্যুৎচালিত লো লিফট পাম্প, ২০টি সৌর বিদ্যুৎচালিত পাম্প স্থাপন, ১২০টি ভূগর্ভস্থ সেচনালা, পুরাতন গভীর নলকূপের জন্য ৪৮টি সেচনালা, ১৬০টি বিদ্যুৎচালিত পাতকুয়া, ৪৩৫টি ক্রস ডেম বা ফুট ব্রিজ নির্মাণসহ অবকাঠামো উন্নয়ন, ৯০টি পাম্প হাউজ, ৫০টি প্রি-পেইড মিটার, ২৩৫টি বৈদ্যুতিক লাইন ও অফিস ভবন স্থাপন করা হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য জাকির হোসেন আকন্দ বলেন, পিইসি সভায় প্রকল্পের অতিরিক্ত ব্যয় ও দেশ-বিদেশ ভ্রমণ নিয়ে জানতে চাওয়া হবে। এছাড়া কোনো দ্বৈততা থাকলে তা বাদ দেওয়া হবে। এর সংশোধিত ডিপিপি এলে প্রকল্প অনুমোদনের বিষয়ে সুপারিশ করা হবে।

ইনিউজ ৭১/এম.আর