বরিশাল আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের নানারকম অনিয়ম ও দুর্নীতি নতুন কিছু নয়। ইতোপূর্বে পাসপোর্ট অফিসের নানা অনিয়মের খবর স্থানীয় ও জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশের পর জেলা প্রশাসনসহ সরকারি বিভিন্ন দফতরে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা সমালোচনার ঝড় ওঠে। এদিকে কর্মকর্তারা বলছেন, জনভোগান্তিসহ যাতে পাসপোর্ট অফিসে মধ্যস্বত্বভোগী (দালাল) চক্র সক্রিয় না থাকে সেই বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। তবে কর্তৃপক্ষের দাবী পাসপোর্ট অফিসের ভেতরে কোন দালাল চক্র নেই।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, টাকা ছাড়া মেলেনা কোন পাসপোর্ট। যারা টাকা দিতে অনীহা প্রকাশ করে তাদের হয়রাণীর সীমা থাকেনা। বিশেষ করে অসুস্থ রোগী যারা ভারতে উন্নত চিকিৎসা করাতে চান তাদের ভোগান্তিতে পড়তে হয় বেশি। অভিযোগ রয়েছে হজ্ব যাত্রীদের কাছেও টাকার বিনিময় পাসপোর্ট দেওয়া হয়। ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন পাসপোর্টের জন্য কেউ যদি সরাসরি আবেদনপত্র জমা দেন তাহলে সেই আবেদনপত্রে যে কোন ভাবে ভুল ধরে পুনরায় আবেদন করতে বাধ্য করা হয় তাদের। তবে আবেদনকারীরা যদি নির্ধারিত কর্মচারীর কাছে ৫শ থেকে ৬শ’ টাকাসহ আবেদনপত্র জমা দেয় তাহলে আর কোন সমস্যা থাকেনা। এখানে প্রতিদিন গড়ে ১৫০টি আবেদনপত্র জমা ও পাসপোর্ট সরবরাহ হয়ে থাকে। প্রতি পাসপোর্ট ৬শ টাকা হিসাবে দৈনিক আদায় হয় ৯০ হাজার টাকা। এ অর্থ শীর্ষ কর্মকর্তারা বেশিরভাগ নেন আর কর্মচারীরা পান খুবই নগন্য।
পাসপোর্ট অফিসে আসা আবেদনকারী আবুল কালাম অভিযোগ করে বলেন, বেশকিছু দিন ধরেই নির্দিষ্ট সময়ে পাসপোর্ট মিলছে না। কিন্তু অফিসের লোকদের নানাভাবে ম্যানেজ করলে পাসপোর্ট হাতে পাওয়া যাচ্ছে। আমার পরিচিত দুইজন আমার পরে পাসপোর্টের জন্য আবেদন করে পাসপোর্ট হাতে পেয়েছে। অথচ আমি ইমার্জেন্সি ফি দিয়ে এখনও পাসপোর্ট পাইনি। নিয়ম অনুযায়ী ইমার্জেন্সির পাসপোর্ট সাত কর্মদিবসের মধ্যে পাওয়ার কথা কাগজেকলমে থাকলেও বাস্তবের চিত্র পুরোপুরি ভিন্ন। ইমার্জেন্সির ফি জমা দিলেও এক মাসেও হাতে পাননি পাসপোর্ট বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভুক্তভোগী।
একাধিক পাসপোর্ট প্রার্থীর সাথে কথা হলে তারা অভিযোগ করেন, সাধারণ ক্যাটাগরিতে ৩ হাজার ৪৫০ টাকা জমা দিয়ে নির্ধারিত ২১ কর্মদিবসের মধ্যে গ্রাহকদের পাসপোর্ট ডেলিভারি দেওয়ার বিধান থাকলেও সেটি দেড় থেকে দুই মাস এবং জরুরি (ইমার্জেন্সি) ক্যাটাগরিতে ৬ হাজার ৯০০ টাকা জমা দিয়ে নির্ধারিত সাত কর্মদিবসের মধ্যে ১০ থেকে ১৫ দিনে গ্রাহকরা পাসপোর্ট ডেলিভারি পাওয়ার কথা। কাগজেকলমে এটা থাকলেও এক মাস সময়ের পরও হাতে মিলছে না পাসপোর্ট।
ভুক্তভোগীরা শুধুমাত্র অফিসের কর্মকর্তা কিংবা কর্মচারীদের হাতেই হয়রাণীর শিকার হয়না। পাসপোর্ট অফিসের দালালদের হাতেও তারা প্রতিনিয়ত হয়রাণীর শিকার হয়। এসকল দালালদের গোটা বরিশাল নগরীতে রয়েছে একটি সিন্ডিকেট। যাদের মধ্যে অন্যতম জামাল, নাছির, মামুন, হুমায়ুন ওরফে টাক হুমায়ুন, মনির, বাইজিদসহ একাধিক দালাল। তারা জেলা ও উপজেলা থেকে আসা আবেদনকারীদের ভুল বুঝিয়ে জিম্মি করে এক একটি পাসপোর্ট দেওয়ার নাম করে হাতিয়ে নিচ্ছে ৯ থেকে ১০ হাজার টাকা। সূত্রমতে, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ২০ দিনের মধ্যে একটি ডিজিটাল পাসপোর্ট বানাতে জনপ্রতি খরচ হয় ৩ হাজার ৪৫০ টাকা ও অতি জরুরী ১২ দিনের মধ্যে ৬ হাজার ৯শত টাকা খরচ হয়। কিন্তু আবেদনকারীরা দ্বিগুন টাকা দিয়েও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কোন পাসপোর্ট পায়না।
অনেক সময় আবার আবেদনকারীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তাদেরকে কোন পাসপোর্ট না দিয়েও টাকা আত্মসাত করে দালালরা। এ নিয়ে বিভিন্ন সময় আবেদনকারী ও দালালদের মধ্যে হাতাহাতি ও সংঘর্ষও হয়েছে। এছাড়া আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী দালালদের আটক করলেও আইনের ফাঁক ফোকড় গলে জামিনে মুক্ত হয়ে চালিয়ে যাচ্ছে প্রতারণা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রশাসনের এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, পাসপোর্ট অফিসে হয়রাণীর কথা। তিনি জানান, সরকারি সেবামূলক প্রতিষ্ঠানগুলোতে এমন হয়রাণী কিছুতেই কাম্য নয়। এক প্রশ্নের জবাবে ওই কর্মকর্তা বলেন, বিষয়টি নিয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিতপূর্বক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বরিশাল আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের উপ পরিচালক মোহাম্মদ কামাল হোসেন খন্দকার মুঠোফোনে বলেন, অফিসের ভেতরে কোন কর্মকর্তা কিংবা কর্মচারী দালালচক্রের সাথে নেই। অফিসের বাইরে যদি কেউ প্রতারণার শিকার হন তার দায়ভার তাদের (ভুক্তভোগীদের)। তিনি বলেন, এ অফিসে কর্মকর্তা কর্মচারী রয়েছেন মোট ২০ জন, আনসার সদস্য ৪ জন এবং পুলিশ সদস্য ৪ জন। দালালমুক্ত রাখবেন পাসপোর্ট অফিস উল্লেখ করে তিনি বলেন, অফিসের কেউ জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার হবে।
ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।