আটক হতে পারেন ওমর ফারুক

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: সোমবার ৭ই অক্টোবর ২০১৯ ১১:১৪ পূর্বাহ্ন
আটক হতে পারেন ওমর ফারুক

ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সদ্য বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটের গডফাদারদেরও খুঁজে বের করা হবে। সম্রাটকে আটকের ফুটেজ গণমাধ্যমে সরবরাহ করা হবে। একই সঙ্গে অবৈধ মাদক, অস্ত্র ও বন্যপ্রাণীর চামড়া রাখায় তার বিরুদ্ধে তিনটি মামলা দায়ের করা হবে। সম্রাটকে ধরতে অভিযান পরিচালনকারী র‌্যাব-১ অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম ও র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম এ তথ্য জানিয়েছেন। তারা বলেন, ক্যাসিনো সম্রাটের গডফাদার কারা সেটিও তদন্তের মাধ্যমে খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা হবে।

সম্রাটের কাকরাইল কার্যালয়ে অভিযান শেষে সন্ধ্যার দিকে র‌্যাব-১ অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম বলেন, আমরা সম্রাটকে আদালতে সোপর্দ করে রিমান্ড চাইব। সম্রাট যে ক্যাসিনোর সম্রাট হয়ে উঠেছেন, তার পেছনের গডফাদার ও পৃষ্ঠপোষক কারা, তাদেরও খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা হবে। তিনি বলেন, সম্রাটের কার্যালয়ে অভিযানে এক হাজার ১৬০ পিস ইয়াবা, একটি বিদেশি অস্ত্র ও গুলি, বিদেশি মদ ও দুটি ক্যাঙ্গারুর চামড়া জব্দ করা হয়। সারওয়ার বিন কাশেম বলেন, আরমান ও সম্রাটকে যখন কুমিল্লা থেকে আটক করা হয় তখনও মাদক উদ্ধার করা হয়।

আরমান মাদকাসক্ত অবস্থায় ছিল। এজন্য র‌্যাবের ম্যাজিস্ট্রেট তাকে ছয় মাসের জেল দেন। ঢাকায় আনার পর তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। তিনি বলেন, ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরুর পর থেকে সম্রাটের নাম বিভিন্ন মাধ্যম থেকে আসে। ক্যাসিনোর পেছনে তার হাত রয়েছে। এরপর আমাদের গোয়েন্দা সংস্থা তৎপর হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে আজ তাকে আটক করতে সক্ষম হই। র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম বলেন, সম্রাটের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা হচ্ছে। মাদক, অস্ত্র ও বন্যপ্রাণীর চামড়া রাখার অভিযোগে রমনা থানায় তার বিরুদ্ধে তিনটি মামলা হবে। পরে তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে প্রেরণ করা হবে।

সম্রাটের কার্যালয় থেকে ইলেকট্রিক শকিং মেশিন উদ্ধারের বিষয়ে তিনি বলেন, এখানে কাউকে নির্যাতন করা হতো কি-না, এটা আমরা পরবর্তীতে তদন্ত করে দেখব। বিভিন্ন মাধ্যমে বলা হচ্ছিল সম্রাট এখনও ঢাকায় নেই- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক বলেন, সম্রাট আমাদের কাছে আছে। একটু পরে আপনাদের ফুটেজ দেয়া হবে। এদিকে সম্রাটের গডফাদার হিসেবে আলোচিত যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীর ভারতে পলায়ন ঠেকাতে বেনাপোল চেকপোস্ট পুলিশ ইমিগ্রেশনে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। ক্যাসিনো কেলেঙ্কারিতে জড়িত ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল হোসেন সম্রাটসহ একাধিক নেতা গ্রেপ্তার হওয়ার পর ওমর ফারুক চৌধুরীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।

রবিবার সন্ধ্যায় বেনাপোল পুলিশ ইমিগ্রেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহসিন খান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ থেকে তাদের কাছে মৌখিক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী ও নেপালের নাগরিকরা যাতে কোনোভাবেই দেশ ত্যাগ করতে না পারেন সে জন্য সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে, বলেন তিনি। প্রতিদিন নতুন নতুন নামের তালিকা তাদের কাছে আসছে বলেও জানান ওসি। তিনি জানান, বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশনে ভারতগামী পাসপোর্টধারী যাত্রীদের নাম, ঠিকানা যাচাই ও পাসপোর্টের সঙ্গে তাদের ছবি মিলিয়ে দেখা হচ্ছে। জাল পাসপোর্ট যাতে ব্যবহার করতে না পারেন সে জন্য যাত্রীদের হাতের ছাপ ও ছবি তুলে রাখা হচ্ছে।

এদিকে নিজ সংগঠনের প্রভাবশালী নেতাদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চলমান অভিযানে হতভম্ব আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী। সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয় বা যুব জাগরণের অফিসে না গেলেও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন তিনি। সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে স্বাভাবিক গতি ফিরিয়ে আনতে কিছুটা সময় লাগবে বলেও জানান যুবলীগ চেয়ারম্যান। রোববার সন্ধ্যায় আলাপকালে তিনি আরও বলেন, একটা মানুষের পক্ষে সব কিছু জানা সম্ভব নয়। আজ যে আটকের ঘটনা ঘটেছে তা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দালিলিক প্রমাণের ভিত্তিতে করেছে। বিষয়টি আমার জন্যও উপকার হচ্ছে, আমি বিষয়গুলো পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পারছি।

ওমর ফারুক চৌধুরী বলেন, রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা আমাকে শিখিয়েছেন, রাজনীতি মানে সমঝোতা। আমি দায়িত্বটা কাকে দেব, সেটা এখন বিবেচনা করে দেখতে হবে। সে কি টাকার জন্য দায়িত্ব পালন করছে না মানবকল্যাণের জন্য? বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে কিছু নেতাকর্মীর আসা-যাওয়া থাকলেও ধানমন্ডিতে যুব জাগরণ কার্যালয়ে তেমন একটা আনাগোনা নেই যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতাকর্মীদের। যুবলীগের কেন্দ্রীয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে যুবলীগের কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, প্রায় প্রতিদিনই আমরা বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বসি। গত পরশু কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মো. হারুনুর রশীদসহ আমরা অফিস করেছি। আমি নিজে গতকালও গিয়েছি অফিসে।

তিনি আরও জানান, ধানমন্ডিতে তো যুব জাগরণের অফিস। ওইখানে সাধারণত চেয়ারম্যান বসেন। উনি আসেন না বলেই নেতাকর্মীরাও ওখানে যান না। যুবলীগ সূত্রে জানা গেছে, চলমান ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু হওয়ার দুদিন পর থেকে স্বাভাবিক চলাফেরা বন্ধ করে দিয়েছেন সংগঠনটির চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী। গণমাধ্যমের সঙ্গেও কথা বলছেন না তিনি। যদিও মতিঝিলের ফকিরাপুল এলাকায় ইয়াংম্যানস ক্লাবের অবৈধ ক্যাসিনোর মালিক ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে আটকের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগ অত্যন্ত সুসংগঠিত একটি ইউনিট।

তাদের বিরুদ্ধে এতদিন কোনো অভিযোগ এলো না, হঠাৎ কেন অভিযোগ এলো? অভিযোগ থাকলে এতদিন কেন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি? খালেদের গ্রেফতার দল ও যুবলীগকে পঙ্গু করার ষড়যন্ত্র কি-না, সে প্রশ্নও রাখেন যুবলীগ চেয়ারম্যান।সংগঠন সূত্রে আরও জানা যায়, তিনি ধানমন্ডির যুব জাগরণের অফিসে কিংবা বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের অফিসে আসছেন না। তবে ঠিক কী কারণে আসছেন না সে বিষয়ে পরিষ্কার করে কিছু বলতে পারেননি সংগঠনটির নেতাকর্মীরা।

রোববার (৬ অক্টোবর) ভোর ৫টার দিকে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের আলকরা ইউনিয়নের কুঞ্জুশ্রীপুর গ্রাম থেকে যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী ওরফে সম্রাটকে আটক করে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। এ সময় তার সহযোগী আরমানকেও আটক করা হয়। সম্প্রতি মতিঝিলের ইয়ংমেনস, ওয়ান্ডারার্স, মুক্তিযোদ্ধা ক্রীড়া চক্র ও বনানীর গোল্ডেন ঢাকা ক্লাবে র‌্যাব অভিযান চালিয়ে সেগুলো সিলগালা করে দেয়। এ অভিযানের ধারাবাহিকতায় দেশের বিভিন্ন স্থানে ক্লাব ও জুয়ার আসরে অভিযান চালায় পুলিশ।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, মতিঝিলের ক্লাবপাড়ায় মোহামেডান, আরামবাগ, দিলকুশা, ওয়ান্ডারার্স, ভিক্টোরিয়া ও ফকিরেরপুল ইয়ংমেনস ক্লাবে ক্যাসিনো ছিল। এর মধ্যে ইয়ংমেনস ক্লাবে ক্যাসিনো চালাতেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া। বাকি পাঁচটি ক্লাবে ক্যাসিনো চালাতেন সম্রাটের লোকজন। সম্রাট নিজে ক্যাসিনো দেখাশোনা না করলেও তার ক্যাসিনো চালাতেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা মো. আবু কাওসার এবং ওয়ার্ড কাউন্সিলর এ কে এম মমিনুল হক ওরফে সাঈদ।

ইনিউজ ৭১/এম.আর