পলাশে উপকার করতে গিয়ে প্রতারণার শিকার শিক্ষক

নিজস্ব প্রতিবেদক
আল-আমিন মিয়া, উপজেলা প্রতিনিধি পলাশ (নরসিংদী)
প্রকাশিত: মঙ্গলবার ১৬ই জুলাই ২০১৯ ০৩:১২ অপরাহ্ন
পলাশে উপকার করতে গিয়ে প্রতারণার শিকার শিক্ষক

নরসিংদীর পলাশে অসহায় এক পরিবারকে উপকার করতে গিয়ে প্রতারণার শিকার হয়ে ৬ লাখ টাকার মিথ্যা মামলায় দিশেহারা নূরুল ইসলাম নামে এক শিক্ষক। উপজেলার ঘোড়াশাল পৌর এলাকার গড়পাড়া গ্রামের রহমত উল্লাহর স্ত্রী পারভীন আক্তার নামে ঋণগ্রস্থ অসহায় মহিলার পক্ষে জামীনদার হয়ে প্রতারণার শিকার ওই শিক্ষক। জানা যায়, ঘোড়াশাল পৌর এলাকার বালুচর পাড়া নামক গ্রামের মৃত সোলেমান মিয়ার ছেলে নূরুল ইসলাম দীর্ঘ বছর যাবত স্থানীয় বিভিন্ন স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রাইভেট পড়িয়ে আসছে। ছাত্র-ছাত্রীদের প্রাইভেট পড়ানোর সুবাদে দুই বছর ধরে পারভীন আক্তারের স্কুল পড়–য়া দুই মেয়েকে তাদের বাড়ি গিয়ে প্রাইভেট পড়ায়। সেই সুবাদে পারভীন আক্তারের পরিবারের সদস্যদের সাথে একটি ভালো সম্পর্ক তৈরি হয়। কিন্তু পারভীন আক্তার শিক্ষক নূরুল ইসলামের সেই সরলতার সুযোগ নিয়ে নিজের মাথা থেকে ঋণের বোঝা কমাতে নূরুল ইসলামকে অনুরোধ করে জামীনদার বানিয়ে গত ১৪/৩/২০১৮ সালে পল্লী মঙ্গল কর্মসূচি পলাশ শাখা নামক একটি এনজিউ থেকে ২ লাখ টাকা ঋণ তুলে পারভীন আক্তার। সেই ঋণ তুলার সময় শিক্ষক নূরুল ইসলামকে জামীনদার বানিয়ে তার কাছ থেকে জনতা ব্যাংকের একটি খালি চেক জামানত হিসেবে ওই এনজিউর কাছে জমা দেয় তিনি।

হয়রানির শিকার ভুক্তভোগি নূরুল ইসলাম বলেন, পারভীন আক্তারের স্কুল পড়–য়া দুই মেয়েকে প্রায় দুই বছর তাদের বাড়ি গিয়ে প্রাইভেট পড়িয়েছি। পারভীনের মেয়েদেরকে প্রাইভেট পড়ানোর সুবাদে তাদের পরিবারের সাথে একটি ভালো সম্পর্ক তৈরি হয়। ওনার স্বামী রহমত উল্লাহ বিদেশ যাওয়ার সময় পারভীন আক্তার অনেক টাকা ঋণ করে স্বামীকে বিদেশ পাঠায়। কিন্তু স্বামী বিদেশ গিয়ে নিয়মিত টাকা না পাঠানোর কারণে মানুষের পাওনা টাকা পরিশোধ করতে গিয়ে সুদে টাকা নিয়ে পারভীন আক্তার আরও অনেক টাকা ঋণগ্রস্থ হয়। তখন এই পরিবারটি মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ ও সংসার চালাতে গিয়ে অনেকটা অসহায় হয়ে পড়ে। ওই সময় প্রায় সাত মাসের প্রাইভেট পড়ানোর টাকাও তারা দিতে পারছিল না। তিনি আরও বলেন, ঋণগ্রস্থ অসহায় অবস্থায় পারভীন আক্তার একদিন আমাকে অনুরোধ করে বলেন যে, স্যার আমি পল্লী মঙ্গল কর্মসূচি থেকে ২ লাখ টাকা ঋণ তুলার একটি আবেদন করেছি। সেখানে আপনি জামীনদার হয়ে আপনার ব্যাংক একাউন্টের একটি খালি চেক দিয়ে জমা দিলে আমি ওই ২ লাখ টাকা ঋণ তুলতে পারবো। তখন মানবিক দিক চিন্তা করে আমি জামীনদার হয়ে আমার জনতা ব্যাংক একাউন্টের একটি খালি চেক পল্লী মঙ্গল কর্মসূচির নামে দিয়ে ওই অসহায় পরিবারটিকে সহযোগিতা করি।

পরে ১৪/৩/২০১৮ সালে পল্লী মঙ্গল কর্মসূচি থেকে আমার জামীন নামায় তিনি ২ লাখ টাকা ঋণ তুলে। ওই ঋণের টাকা তিনি সঠিকভাবে পরিশোধও করে। ওই সময়ের ভিতর খুলনার একটি প্রাইভেট কোম্পানীতে আমার চাকরি হয়। তখন থেকে আমি ছাত্র-ছাত্রীদের প্রাইভেট পড়ানো বাদ দিয়ে চাকরিতে চলে যাই। কিন্তু ৬/২/২০১৯ সালে আমাকে না জানিয়ে পারভীন আক্তার পল্লী মঙ্গল কর্মসূচি থেকে আমার দেওয়া জনতা ব্যাংকের খালি চেকটি তুলে এনে ওই খালি চেকে ৬ লাখ টাকা লিখে জনতা ব্যাংক থেকে চেকটি ডিজঅনার করিয়ে আমাকে কোনো লিগ্যাল নোটিশ না দিয়ে পারভীন আক্তার গত ১১/৭/২০১৯ইং আমার নামে নরসিংদী আদালতে একটি মামলা করে। ওই মামলাতে তিনি আরও উল্লেখ করে যে, আমি পল্লী মঙ্গল কর্মসূচি এনজিউ থেকে ৬ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ করছি না। পারভীন আক্তার পল্লী মঙ্গল কর্মসূচির একজন সদস্য হওয়ায় তিনি পল্লী মঙ্গল কর্মসূচি ঘোড়াশাল শাখার ব্যবস্থাপক নূরুজ্জামানের অনুমতি পত্রের ক্ষমতাবলে আমার বিরুদ্ধে মামলা করেছে। কিন্তু আমি তো ওই এনজিউ থেকে কখনো ঋণ-ই তুলি-নি।

এসব বিষয়ে পল্লী মঙ্গল কর্মসূচির ঘোড়াশাল শাখার ব্যবস্থাপক নূরুজ্জামান জানান, ২০১৮ সালে নূরুল ইসলামের জামীন নামায় ও জনতা ব্যাংকের একটি খালি চেক পেয়ে পারভীন আক্তারকে ২ লাখ টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছিল। ওই ঋণ পরিশোধ হওয়ার পর গত ৬/২/২০১৯ইং এ পারভীন আক্তার ওই চেকটি নিয়ে যায়। যেহেতু পারভীন আক্তারের ঋণের টাকা পরিশোধ হয়েছে। তাই তিনি চেকটি চাওয়া মাত্র আমরা দিয়ে দেই। কিন্তু ওই চেক নিয়ে তিনি যে নূরুল ইসলামের বিরুদ্ধে আমাদের এনজিউর নাম ভাঙ্গিয়ে মামলা করবে তা আমরা জানি না। বিষয়টি নিয়ে আমাদের পল্লী মঙ্গল কর্মসূচির উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে আলাপ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ব্যাপারে পারভীন আক্তারের মুঠোফেনো যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, এখন রান্নার কাজে ব্যস্ত আছি। এসব বিষয়ে পরে সরাসরি কথা বলবো, ফোনে বলা সম্ভব নয়। 

ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব