“২১শে পদক নয়, চাই রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি”: ভাষা সৈনিক নায়েব আঃ কুদ্দুস

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: রবিবার ১৭ই ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৭:১৭ অপরাহ্ন
“২১শে পদক নয়, চাই রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি”: ভাষা সৈনিক নায়েব আঃ কুদ্দুস

২১ শে পদক নয়, তিনি চাচ্ছেন সংস্কৃতি মন্ত্রনালয়ে তার নাম তালিকা ভুক্ত করা হোক, এতেই তিনি পাবেন ভাষা সৈনিক হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি। এমনটাই বলেছিলেন ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের ভাষা সৈনিক নায়েব আবদুল কুদ্দুস। তিনি বরিশাল জেলার হিজলা উপজেলার বড়জালিয়া গ্রামের মৃত আবদুর রহিম নায়েব এর সন্তান। তিনি তার সেই সময়ের স্মৃতি চারনে ইনিউজ ৭১ কে জানান, হিংস্র পাক সেনা ও পুলিশের সামনে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে জীবন বাজি রেখে মায়ের ভাষার জন্য যারা মিছিল করেছিল, আমি তাদেরই একজন। ১৯৫২ সনের তিনি তেজগাঁও পলিটেকনিক হাই স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। ১৯৫২ সনের ২০ ফেব্রুয়ারী ভাষা শহীদ বরবত ভাই ও আরো তিন চারজন ছাত্র নেতা এই স্কুলের মাঠের সম্মুখে আমতলায় ছাত্রদের জড়ো করে ২১ ফেব্রুয়ারীর মিছিলে যোগ দেওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করেন।

তাদের কথায় উদ্ধুদ্ধ হয়ে ২১ তারিখ সকাল ৮ টায় তার স্কুলের অন্যান্য ছাত্রদের সাথে মিছিলে যোগ দেন। স্কুলের মিছিলটি চাঁনখার পুলে বড় মিছিলে মিলিত হয়। মিছিলটি হোসনী দালান, কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে দিয়ে ইসলামপুর, নওয়াবপুর হয়ে রেলওয়ে পুলিশ হাসপাতাল ডানে ফেলে চাঁনখার পুলের দিকে অগ্রসর হলে পাকসেনা ও পুলিশের বাঁধার সম্মুখীন হয় এবং গোলাগুলি শুরু হয়। গুলিবিদ্ধ হয়ে বরকত, সালাম, রফিক ও জব্বার শহীদ হন। মিছিল ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। তিনিও পায়ে ব্যাথা পেয়ে আহত হয়ে বাসায় ফিরে আসেন। তার পর সব ইতিহাস। তার মতো বাংলার বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে অবহেলায় রয়েছে ভাষা সৈনিকেরা। তিনি আরো জানান, ১৯৫৩ সনে মুসলিম লীগ শাসনের বিরুদ্ধে ঢাকার নওয়াবপুর রোডে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ভুখা মিছিলে যোগদেন, ১৯৫৪ সালে তিনি ছাত্রাবস্থায় যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে নির্বাচনী প্রচারনায় অংশগ্রহন করেন। এর পর কেটে গেছে দীর্ঘ বছর। রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে কেউ খবর রাখেনি ভাষা সৈনিকদের। ২০০৫ সালে ৮ অক্টোবর “জাতীয় দৈনিক নয়া দিগন্ত পত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানতে পারেন ৫২ এর ভাষা আন্দোলনের পিডিয়ার জন্য তথ্য সরবরাহের জন্য আহবান জানানো হয়েছে। সে কারনে তিনি ২০০৫ সনের ১৫ নভেম্বর ৫২ এর ভাষা আন্দোলনের মিছিলে যোগদানকারী হিসেবে তার স্মৃতিতে থাকা কিছু কথা এম,এ বার্ণিক সাহেবের বরাবরে লিখে পাঠিয়ে ছিলেন, পিডিয়াতে এই ভাষা সৈনিক এর নাম সংযোজিত হয়েছি কি না তা আজও অজানা।

কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের মর্যাদা রক্ষা, ভাষা সংগ্রামীদের তালিকা তৈরী, ভাষা জাদুঘর নির্মান সহ বেশ কিছু বিষয়ে নির্দেশনা চেয়ে ২০১০ সালে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করে মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস এন্ড পিস ফর বাংলাদেশ। ২০১০ সালের ২৫ আগষ্ট ৮ দফা নির্দেশনা সহ রায় দেন হাইকোর্ট। কিন্তু নির্দেশনা বাস্তবায়ন না হওয়ায় ২০১২ সালে সংশ্লিটদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ দাখিল করে সংগঠনটি। আবেদনের প্রক্ষিতে আদালত ওই নির্দেশনা গুলো বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নিতে সংস্কৃতি সচিবকে নির্দেশ দিয়েছেন। ২০১৭ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে, বরিশাল -০৪ (হিজলা-মেহেন্দিগঞ্জ) আসনের এম,পি পংকজ নাথ এর উদ্যোগে হিজলা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে গন সংবর্ধনা প্রদান করা হয়। ২০১৭ সালের ১৬ মার্চ হিজলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু জাফর রাশেদ এর স্বাক্ষরিত, ১৯৫২ সালের ভাষা সৈনিকদের নামের তালিকায় নায়েব আবদুর কুদ্দুসকে অন্তর্ভূক্তির জন্য সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রনালয়ে আবেদন পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু আজো তালিকায় অন্তুভূক্ত হতে পারেননি এই ভাষা সৈনিক।  

ইনিউজ ৭১/এম.আর