ইয়াবার কলঙ্ক মুছতে বদি পত্নীর চ্যালেঞ্জ

নিজস্ব প্রতিবেদক
শ.ম.গফুর , উপজেলা প্রতিনিধি উখিয়া- কক্সবাজার
প্রকাশিত: সোমবার ২৮শে জানুয়ারী ২০১৯ ০৫:০৩ অপরাহ্ন
ইয়াবার কলঙ্ক মুছতে বদি পত্নীর চ্যালেঞ্জ

একবিংশ শতাব্দীর কক্সবাজারে এক অভিশাপ এবং কলংকিত নাম ইয়াবা। মরণঘাতক এই মাদকের কবলে পড়ে এখন দেশব্যাপী আলোচিত-সমালোচিত বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের দুই উপজেলা উখিয়া এবং টেকনাফ। অভিযোগ রয়েছে, স্বল্প সময়ে কোটিপতি হওয়ার সুযোগ নিতে ইতোমধ্যেই উপজেলা দুটির বিপুল সংখ্যক মানুষ জড়িয়ে পড়েছে ইয়াবা পাচারে। পুরুষের পাশাপাশি নারী এমনকি শিশুরাও রয়েছে এই তালিকায়। এদিকে ইয়াবার কলংক নিয়েই মার্চে অনুষ্ঠিতব্য উপজেলা নির্বাচনে ভোট দেবেন উখিয়া এবং টেকনাফ উপজেলার মানুষ। উপজেলা দু’টির বাসিন্দারা অন্তত এ নির্বাচনে ইয়াবা সংশ্লি­ষ্ট প্রার্থীদের এড়িয়ে চলতে চাচ্ছেন। ইয়াবায় জড়িত লোকজনই যেকোন প্রকারে বড়-বড় রাজনৈতিক দলগুলোর আশ্রয়ে থাকে। ইয়াবার কালো টাকায় বড় রাজনৈতিক দলের মনোনয়ন পেতে তাঁরা হয়ে পড়েন মরিয়া। ক্ষমতাসীন এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো যদি সীমান্ত জনপদে ইয়াবা পাচারে জড়িত ব্যক্তিদের এড়িয়ে উপজেলা নির্বাচনে দলীয় দেশপ্রেমিক এবং ইমেজধারী ব্যক্তিদের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেয় তাহলে ইয়াবার বদনাম থেকে এলাকাবাসীর অনেকটাই রেহাই মিলবে।

ইয়াবার পরিস্থিতির সবচেয়ে ভয়াবহতম শিকার উখিয়া এবং টেকনাফের সাধারণ মানুষ। যাদের সঙ্গে ইয়াবা নামক মাদকের ন্যূনতম সম্পর্ক নেই। এলাকার বাসিন্দারা অনেক সময় দুঃখ করে বলছেন, ইয়াবার কারণে উপজেলা দুটির অনেক প্রাপ্ত বয়স্কা শিক্ষিত নারী বিয়ের উপযুক্ততা হারাচ্ছে। এমনও রয়েছে, পাত্রপক্ষ স্থায়ী ঠিকানা টেকনাফ শুনলেই বিয়ের ব্যাপারে না সূচক জবাব দেয়। ফলে নিজ কন্যা সন্তানকে সুপাত্রস্থ করতে নানা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে অভিভাবকদের। একই অবস্থা পুরুষের ক্ষেত্রেও। ছেলের বাড়ি টেকনাফ শুনলেই সম্ভাব্য কনে পক্ষ মনে করেন, ছেলে হয়তো ইয়াবা পাচারে জড়িত। এই ভয়ে নিজ মেয়ের টেকনাফের কোন ছেলেকে বর হিসেবে দেখতে চান না মেয়ের মা-বাবা। অভিযোগ রয়েছে, এই মরণনেশা ইয়াবা পাচাররোধে যাদের কার্যকর ভূমিকা থাকার কথা এক সময় তারা নিজেরাও জড়িয়ে পড়েন ইয়াবা পাচারে। সরকারি বিভিন্ন সংস্থার প্রতিবেদনেও এমন তথ্য উঠে এসেছে। যাতে রয়েছে উখিয়া এবং টেকনাফ উপজেলার বিপুল সংখ্যক জনপ্রতিনিধি এবং রাজনৈতিক নেতার নাম। এমনকি নির্বাচিত সংসদ-সদস্য (বর্তমানে সাবেক) পর্যন্ত রয়েছেন এই তালিকায়। ফলে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে প্রভাবশালী রাজনীতিকদের কারণেই উল্লি­খিত উপজেলা দুটিতে ইয়াবা পাচার বন্ধ করা যাচ্ছে না বলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ প্রশাসনের বিভিন্ন স্তর থেকে অভিযোগ।

বাংলাদেশে ইয়াবা পাচার নির্বিঘ্ন করতে নাফ নদ সংলগ্ন মিয়ানমারে গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি ইয়াবা কারখানা। যেখানে প্রতিদিন তৈরি করা হচ্ছে বিপুল সংখ্যক ইয়াবা। পরবর্তীতে এদেশের এজেন্টদের মাধ্যমে যা বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করানো হয়। যেখান থেকে বিভিন্ন পাচারকারীর মাধ্যমে সারাদেশে ছড়িয়ে দেয়া হয় এসব ইয়াবা। এমনও অভিযোগ রয়েছে, বাংলাদেশের কোন কোন প্রভাবশালী ব্যক্তি রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থেকে গোপনে মিয়ানমারের সেইসব ইয়াবা কারখানায় শেয়ারে কারবার চালিয়ে যাচ্ছেন। সীমান্তের কারখানার বিষয়টি রাষ্ট্রীয়ভাবে মিয়ানমারকে অবহিত করেছে বাংলাদেশ। ইয়াবার কারণে টেকনাফের সাধারণ মানুষের অবস্থান কোন্ পর্যায়ে পৌঁছেছে তা কিছুদিন আগে গণমাধ্যমে বর্ণনা করেছেন উপজেলাটির শীর্ষ পর্যায়ের এক রাজনৈতিক নেতা। একটি গণমাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেছেন, টেকনাফের মানুষ শুনলে ঢাকার হোটেলগুলোতে কক্ষ ভাড়া দেয়া হয় না। এছাড়া পদে পদে হেনস্থার শিকার হতে হয়। বর্তমান সংসদ সদস্য শাহীন আকতার চৌধুরী নারী হওয়ায় তার প্রতি এলাকার মানুষের আলাদা দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। সবাই আশা করছেন একজন নারী হিসেবে নিজ এলাকার পাশাপাশি দেশে ইয়াবা পাচার রোধে তার ভূমিকা হবে কার্যকর। তিনি ইয়াবার বিরুদ্ধে প্রকৃত অর্থে কঠোর অবস্থান নিলেই চুনোপুটিরা নিজেদের গুটিয়ে নেবে। এতে দেশ হবে ইয়াবামুক্ত।এক প্রতিক্রিয়ায় সাংসদ শাহীন আকতার চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেছেন,তাঁর স্বামী,সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি ইয়াবা ব্যবসায়ী নন। তিনি কোন দিনই ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত ছিলেন না।কোন প্রমাণ নেই। তালিকায় আসাটা ষড়যন্ত্রমুলক।

ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব