সারা দেশে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য, উৎসবমুখর পরিবেশ ও কোরবানির ত্যাগের মহিমা নিয়ে পালিত হচ্ছে মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা। শনিবার সকাল থেকেই রাজধানী ঢাকা সহ দেশের প্রতিটি অঞ্চল ঈদের আনন্দে মুখর হয়ে ওঠে। ভোর থেকেই মানুষ ঈদের নামাজ আদায়ের জন্য সমবেত হতে থাকে স্থানীয় মসজিদ ও ঈদগাহে। রাজধানীর জাতীয় ঈদগাহে অনুষ্ঠিত হয় প্রধান ঈদ জামাত, যাতে অংশ নেন রাষ্ট্রের উচ্চপদস্থ ব্যক্তিসহ হাজারো মুসল্লি। নামাজ শেষে মুসল্লিরা কোলাকুলি করে পরস্পরের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন এবং কোরবানির উদ্দেশ্যে পশু জবাইয়ের প্রস্তুতি নেন।
ঘরের আঙিনায়, গলি-মহল্লায় ও খোলা স্থানে পশু জবাই করে তা দ্রুততার সঙ্গে প্রক্রিয়াকরণ করা হচ্ছে। অধিকাংশ পরিবারই কোরবানির মাংস তিন ভাগ করে আত্মীয়, দরিদ্র ও নিজেদের মধ্যে ভাগ করে দিচ্ছেন। অনেক সামাজিক সংগঠন ও সংস্থা দরিদ্র জনগণের মধ্যে মাংস পৌঁছে দেওয়ার কার্যক্রম চালাচ্ছে।
এবারের ঈদুল আজহায় কোরবানির ব্যবস্থাপনায় দেখা গেছে আশাজাগানিয়া শৃঙ্খলা। বিশেষ করে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন আগে থেকেই বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সক্রিয় ভূমিকা নেয়। সিটি কর্পোরেশনের একাধিক সূত্র জানায়, ঈদের দিন দুপুরের মধ্যেই অধিকাংশ ওয়ার্ডে বর্জ্য অপসারণের কার্যক্রম সম্পন্ন হয় এবং রাতের মধ্যেই তা পুরোপুরি সম্পন্ন করার পরিকল্পনা রয়েছে।
ঈদ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. ইউনূস দেশবাসীর প্রতি ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে শান্তি, সহমর্মিতা ও ত্যাগের চেতনায় উজ্জীবিত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। ঈদের এই উৎসব কেবল ধর্মীয় রীতি নয়, বরং সমাজে সহানুভূতি, সমবেদনা ও মানবিক বোধ জাগ্রত করার এক অনন্য উপলক্ষ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
পরিচ্ছন্ন ব্যবস্থাপনায় নজির:
পবিত্র ঈদুল আজহায় কোরবানির পশু জবাই ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় এবার দেখা গেছে প্রশংসনীয় শৃঙ্খলা ও দ্রুততার উদাহরণ। কোরবানির দিনে সকাল থেকেই মুসলিম ধর্মাবলম্বীরা যথানিয়মে পশু জবাই শুরু করেন এবং দ্রুততার সঙ্গে মাংস প্রক্রিয়াজাত করে আত্মীয়-স্বজন ও দরিদ্রদের মধ্যে বিতরণ করেন।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কসাই ও পরিবারের সদস্যদের সহায়তায় পশু জবাইয়ের পরই তা পরিচ্ছন্নভাবে প্রক্রিয়া করা হচ্ছে। পুরনো সমস্যাগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল কোরবানির বর্জ্য সঠিকভাবে না সরানো। তবে এবার সেই চিত্র অনেকটাই বদলে গেছে।
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন আগাম প্রস্তুতি হিসেবে জনসচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন, পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের অতিরিক্ত মোতায়েন এবং দ্রুত বর্জ্য অপসারণের জন্য বিশেষ যানবাহন ও প্রযুক্তি ব্যবহার করেছে। সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তারা জানান, ঈদের দিন দুপুরের মধ্যেই অধিকাংশ ওয়ার্ডে বর্জ্য পরিষ্কারের কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। রাতের মধ্যেই পুরো শহরকে পরিচ্ছন্ন রাখার পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে।
এই উদ্যোগে নাগরিকদের অংশগ্রহণও ছিল চোখে পড়ার মতো। অনেকেই নির্ধারিত জায়গায় কোরবানি দিয়েছেন এবং পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে সচেতন থেকেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ উদ্যোগকে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করেছে অনেক নাগরিক।
ঈদুল আজহা কেবল একটি ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি ত্যাগ, সহানুভূতি ও সামাজিক সমতার প্রতীক। এই উৎসবের প্রকৃত আবেদন তখনই বাস্তবায়িত হয়, যখন তা পরিবেশবান্ধব ও পরিচ্ছন্নতার সাথে সম্পন্ন করা যায়। এবারের ঈদ সেই চিত্রকেই সামনে এনেছে।