দীর্ঘ আলোচনার পর শ্রম বিষয়ক সংস্কার কমিশন তাদের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জমা দিয়েছে। সোমবার দুপুরে রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই প্রতিবেদন হস্তান্তর করা হয় বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার ডেপুটি প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার।
প্রতিবেদনে কর্মপরিবেশ, শ্রমিক-মালিক সম্পর্ক, শ্রম আদালত, শ্রম আইনের সংস্কারসহ নানাবিধ গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এসব সুপারিশ বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশের শ্রম ব্যবস্থায় একটি আধুনিক, মানবিক ও দক্ষ কাঠামো গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার ডেপুটি প্রেস সচিব ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে উল্লেখ করেন, প্রতিবেদনটিতে যে সুপারিশটি তাকে সবচেয়ে বেশি আলোড়িত করেছে তা হলো কর্মস্থলে শ্রেণি বৈষম্যের প্রতিচ্ছবি হিসেবে প্রচলিত ‘তুই-তুমি’ সম্বোধন নিষিদ্ধ করা। তার মতে, এমন সংস্কারের মধ্য দিয়েই একটি সম্মানজনক ও সমান মর্যাদার কর্মপরিবেশ গড়ে উঠতে পারে।
২০২৩ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহম্মদকে প্রধান করে গঠিত হয় শ্রম সংস্কার কমিশন। কমিশনকে ৯০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশনা থাকলেও বিভিন্ন কারণে তা সময়মতো সম্ভব হয়নি। একাধিকবার সময় বাড়ানোর পর অবশেষে সোমবার প্রতিবেদন জমা দেওয়া হলো।
কমিশনে ছিলেন সাবেক সচিব ড. মাহফুজুল হক, অধ্যাপক ড. জাকির হোসেন, টিইউসি নেতা তপন দত্ত, আইনজীবী একেএম নাসিম, এমপ্লয়ার ফেডারেশনের সাবেক সভাপতি কামরান টি রহমান, ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের সভাপতি চৌধুরী আশিকুল আলম, লেবার ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক শাকিল আখতার চৌধুরী, শ্রম আন্দোলনের সংগঠক তাসলিমা আখতার এবং এক ছাত্র প্রতিনিধি।
শ্রমিকদের অধিকার রক্ষায় এই কমিশনের প্রতিবেদন কতটা প্রভাব ফেলবে, তা সময়ই বলে দেবে। তবে শ্রমজীবী মানুষের আশা, এই প্রতিবেদন বাস্তবায়নের মাধ্যমে কর্মক্ষেত্রে সম্মান, নিরাপত্তা এবং সুবিচার নিশ্চিত হবে। সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং বিভাগসমূহ এখন এই প্রতিবেদনের সুপারিশগুলো বিবেচনায় নিয়ে পরবর্তী কার্যক্রম শুরু করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।