আত্রাইয়ে বিলুপ্তপ্রায় বসন্তের রুপকন্যা শিমুল, পরিবেশে নেতিবাচক প্রভাব

নিজস্ব প্রতিবেদক
নাজমুল হক নাহিদ, আত্রাই প্রতিনিধি, নওগা:
প্রকাশিত: বুধবার ২৬শে ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৬:৫৪ অপরাহ্ন
আত্রাইয়ে বিলুপ্তপ্রায় বসন্তের রুপকন্যা শিমুল, পরিবেশে নেতিবাচক প্রভাব

ঋতুরাজ বসন্তের আগমনে প্রকৃতিতে নতুন সজীবতা এনে দিয়েছে শিমুল ফুল। বসন্তের আগমনে শিমুল গাছের অপরূপ সৌন্দর্য আর দ্যুতি গ্রামবাংলাকে রাঙিয়ে তোলে। কিন্তু কালের বিবর্তনে আজ নওগাঁর আত্রাই উপজেলায় শিমুল গাছ এখন বিলুপ্তপ্রায়। এক সময় এ অঞ্চলের বিভিন্ন গ্রামে, বাড়ির আনাচে কানাচে ও রাস্তার ঢালে শিমুল গাছের অবাধ রাজত্ব ছিল। প্রতিটি শিমুল গাছ বসন্তে ফুলে ফুলে সজ্জিত থাকতো, যা প্রকৃতির রূপকে আরও অনন্য করে তুলতো। তবে এখন শিমুল গাছের সংখ্যা কমে গেছে এবং বিলুপ্তির পথে চলে গেছে।


শিমুল গাছের শাখাগুলো বসন্তে এমন এক রূপ ধারণ করতো, যেন গ্রামের নববধূ লাল শাড়ি পরিধান করে সজ্জিত হয়ে উঠেছে। এসব গাছের উচ্চতা এতটাই ছিল যে, বহু দূর থেকে এক নজরে সেই মনোরম দৃশ্য চোখে পড়তো। তবে শিমুল গাছের সৌন্দর্য কেবল চোখের আরামই দেয় না, এর রয়েছে নানা উপকারিতা ও অর্থনৈতিক গুরুত্বও। শিমুল গাছ প্রাকৃতিকভাবে তুলা উৎপাদনের অন্যতম উৎস। এটি একটি ঔষধি গাছ, যার বিভিন্ন অংশ ব্যবহার করা হয় আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায়।


বিজ্ঞান অনুসারে, শিমুল গাছের বৈজ্ঞানিক নাম "বোমবাক্স সাইবা লিন"। এটি বোমবাকাসিয়াক পরিবারের উদ্ভিদ। গাছটির বীজ ও কাণ্ডের মাধ্যমে বংশবিস্তার হয় এবং এটি প্রায় ১০০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। শিমুল গাছের গায়ে ফুল ফুটে বসন্তের সূচনা হয়, আর ফল পুষ্ট হয় চৈত্র মাসে। বৈশাখে ফল শুকিয়ে গিয়ে বাতাসে ছড়িয়ে পড়া বীজ থেকেই জন্ম নেয় নতুন শিমুল গাছ। তবে দুঃখজনকভাবে, এসব গাছ আজ একে একে উজাড় হয়ে যাচ্ছে।


শিমুল গাছের প্রায় সব অংশই কাজে লাগে। এর ছাল, পাতা ও ফুল গবাদিপশুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বালিশ, তোষক, লেপ তৈরিতেও শিমুল তুলার ব্যবহার ব্যাপক। তবে, বর্তমানে মানুষের উদাসীনতা এবং অবহেলার কারণে এসব গাছ কেটে ফেলতে শুরু হয়েছে। এক সময় শিমুল গাছের কাঠ এবং তুলার ব্যবহারে প্রচুর আয় হতো, কিন্তু এখন রোপণ কমেছে।


এভাবে শিমুল গাছের সংখ্যা কমে যাওয়ার ফলে পরিবেশে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। শিমুল গাছের উচ্চতা অনেক, তাই বিভিন্ন প্রজাতির পাখি যেমন কাক, কোকিল, চিল, বক এসব গাছে বাসা বাঁধতো। কিন্তু এখন গাছের সংখ্যা কমে যাওয়ায় এসব পাখি আবাসস্থল হারিয়ে ফেলেছে।


এ প্রসঙ্গে মির্জাপুর গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তি রহমত আলী জানান, আগে গ্রামে অনেক শিমুল গাছ ছিল। এই গাছ ঔষধি গাছ হিসেবেও পরিচিত। গ্রামের মানুষ বিষফোঁড়া এবং কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়ের জন্য এ গাছের মূল ব্যবহার করতো।


ভবানীপুর গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তি মুনিরুল ইসলাম বলেন, “একটি বড় শিমুল গাছ থেকে তুলা বিক্রি করে ১০-১৫ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব। তবে এখন শিমুল তুলার দাম বেড়ে গেলেও, গাছগুলো এখনও তুচ্ছভাবে কেটে ফেলা হচ্ছে।”


এ বিষয়ে শিরোনাম সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদক এমরান মাহমুদ প্রত্যয় বলেন, শিমুল গাছের রক্ষায় এখনই ব্যবস্থা না নিলে এক সময় এটি বিলুপ্ত হয়ে যাবে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এ গাছের অস্তিত্ব সম্পর্কে জানতেও পারবে না।