সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া, রায়গঞ্জ, শাহজাদপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় অজ্ঞান পার্টির দৌরাত্ম্য বেড়েছে। অপরিচিত লোকজন বিভিন্ন কৌশলে সাধারণ মানুষকে অজ্ঞান করে সর্বস্ব লুটে নিচ্ছে। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে স্থানীয়রা। জানা গেছে, একদল প্রতারক বিভিন্ন অজুহাতে মানুষের কাছে গিয়ে একটি কাগজ দেখিয়ে ঠিকানা জানতে চায়, যেখানে আগে থেকেই চেতনা নাশক ওষুধ মিশানো থাকে। কাগজ হাতে নেওয়ার পরপরই ভুক্তভোগী অজ্ঞান হয়ে পড়ে এবং প্রতারকচক্র তার টাকা, স্বর্ণালঙ্কার ও মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে পালিয়ে যায়। এভাবে একাধিক ব্যক্তি প্রতারণার শিকার হয়েছেন। কিছু ক্ষেত্রে প্রতারকরা ভিক্ষুক সেজেও একই পদ্ধতিতে প্রতারণা চালাচ্ছে।
এছাড়া, রাতে জানালা বা ভেন্টিলেটরের মাধ্যমে চেতনা নাশক স্প্রে ছিটিয়ে বাড়ির সবাইকে অজ্ঞান করে লুটপাটের ঘটনাও ঘটছে। উল্লাপাড়ার বিনায়েকপুর গ্রামে আব্দুল গফুর ও আফসার আলীর বাড়িতে এমন কৌশলে চুরি সংঘটিত হয়েছে। একইভাবে রায়গঞ্জের রুপাখাড়া গ্রামে সানোয়ার হাজীর বাড়ি থেকে তিন ভরি স্বর্ণ, নগদ ৫০ হাজার টাকা এবং মূল্যবান সামগ্রী লুট করে নিয়ে গেছে প্রতারকরা। প্রতিবেশীরা সকালে সন্দেহজনক পরিস্থিতি দেখে ডাকাডাকি করেন, কিন্তু সাড়া না পাওয়ায় গেটের তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেন। তারা দেখেন, সানোয়ার হাজী ও তার পরিবারের সদস্যরা অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে আছেন, ঘরের জিনিসপত্র এলোমেলো। পরে পুলিশ এসে তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়।
এ ধরনের প্রতারণার শিকার হয়ে অনেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শরণাপন্ন হয়েছেন। তবে এসব অপরাধীদের চিহ্নিত করা কঠিন হয়ে পড়ছে, কারণ তারা স্থান পরিবর্তন করে বারবার প্রতারণা চালিয়ে যাচ্ছে। এলাকাবাসীর দাবি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও সক্রিয় হতে হবে এবং এসব অপরাধীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে।
এদিকে, পুলিশ এলাকাবাসীকে সতর্ক করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। উল্লাপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রাকিবুল হাসান জানান, স্থানীয় মসজিদে মাইকিং করে জনগণকে সচেতন করা হচ্ছে। ইমামদের নামাজের আগে মুসল্লিদের এ বিষয়ে সতর্ক করতে বলা হয়েছে।
পুলিশ ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাধারণ মানুষকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে যে, অপরিচিত ব্যক্তিদের দেওয়া কোনো কাগজ হাতে না নেওয়া, সন্দেহজনক কোনো ঘটনা ঘটলে দ্রুত থানায় জানানো এবং বাড়ির নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি। বিশেষ করে রাতের বেলায় দরজা-জানালা শক্তভাবে বন্ধ রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য কাজ করছেন। এলাকায় স্বেচ্ছাসেবক দল গঠনের মাধ্যমে রাতের বেলা পাহারা বসানোরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এলাকাবাসী মনে করছে, প্রশাসন যদি দ্রুত ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে অজ্ঞান পার্টির তৎপরতা আরও বেড়ে যেতে পারে। তাই দ্রুত অভিযানের মাধ্যমে অপরাধীদের গ্রেপ্তার করা দরকার বলে দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।