দেশে অনুমিত ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা প্রায় ১৫ লাখ, প্রতি বছর নতুন করে যুক্ত হয় আড়াই থেকে তিন লাখ মানুষ। বেশিরভাগই চিকিৎসার বাইরে থাকেন বা অপচিকিৎসার শিকার হন। মাত্র এক-চতুর্থাংশ রোগী সঠিক চিকিৎসার সুযোগ পান, তবে তাদেরও অনেকে দেরিতে আসেন, যখন সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। ব্যয়বহুল চিকিৎসার কারণে অনেকের পক্ষেই এটি সম্ভব হয় না। এসব পরিস্থিতির মধ্যেই বাংলাদেশসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব ক্যান্সার দিবস, যার প্রতিপাদ্য ‘ইউনাইটেড বাই ইউনিক’।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রার পরিবর্তন আনলে বিপুলসংখ্যক মানুষকে ক্যান্সার থেকে রক্ষা করা সম্ভব। কারণ ক্যান্সার প্রতিরোধের চেয়ে চিকিৎসা অনেক ব্যয়বহুল ও কষ্টকর। বিশ্বায়নের প্রভাবে বাংলাদেশে ফাস্ট ফুড, জাঙ্ক ফুড ও ক্যান ফুডের ব্যবহার বেড়েছে, যা ক্যান্সারের অন্যতম কারণ। এসব খাবারে উচ্চমাত্রার চিনি, লবণ ও ট্রান্সফ্যাট থাকে, যা হৃদরোগের পাশাপাশি ক্যান্সারের ঝুঁকিও বাড়ায়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ঝলসানো বা গ্রিল করা মাংস নিয়মিত খাওয়া বিপজ্জনক, কারণ উচ্চ তাপে রান্নার ফলে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী রাসায়নিক উৎপন্ন হয়। অনেক সোডা পানীয় ও মাইক্রোওয়েভ পপকর্নের মোড়কের রাসায়নিক উপাদানও বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারের জন্য দায়ী। এছাড়া দীর্ঘদিন সংরক্ষিত ক্যানে থাকা খাবার ও প্রক্রিয়াজাত মাংস ক্যান্সারের ঝুঁকি বহন করে।
বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষের সময় জীবাণুনাশক ও কীটনাশকের ব্যবহার স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি। কৃত্রিম সুইটেনার ব্যবহারে শরীরে ক্ষতিকর টক্সিন তৈরি হয়, যা মস্তিষ্কের টিউমারসহ বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। এমনকি সাধারণ আটাও স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হতে পারে, কারণ পরিশোধনের সময় পুষ্টিগুণ নষ্ট হয় এবং পরে ক্লোরিন গ্যাস দিয়ে ব্লিচ করা হয়।
প্রসেসড খাবার যেমন সসেজ ও হট ডগ অন্ত্রে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। এছাড়া চিপস ও অন্যান্য ভাজা খাবারে অতিরিক্ত লবণ ও উচ্চ তাপমাত্রায় তৈরি হওয়া অ্যাক্রিলামাইড নামক উপাদানও ক্যান্সারের জন্য দায়ী। গবেষণা বলছে, প্রতিদিন অল্প পরিমাণ চিপস খেলেও বছরে ওজন উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়তে পারে, যা স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে।
জেনেটিক্যালি মডিফাইড অর্গানিজম (জিএমও) নিয়ে গবেষণায় দেখা গেছে, এসব ফসল মানবদেহে হজম না হয়ে রক্তে মিশে যায় এবং ব্রেস্ট, প্রোস্টেট ও কোলন ক্যান্সারের আশঙ্কা বাড়িয়ে তোলে। অন্যদিকে অতিরিক্ত অ্যালকোহল গ্রহণ রক্তের ট্রাইগ্লিসারাইড বাড়ায়, যা অগ্ন্যাশয়ের প্রদাহ সৃষ্টি করে ও ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।
কৃত্রিম চিনি ও প্রক্রিয়াজাত খাবার শরীরে ইনসুলিনের মাত্রা বৃদ্ধি করে, যা ক্যান্সার কোষ বৃদ্ধিতে সহায়ক। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রাকৃতিক খাবার গ্রহণ, নিয়মিত ব্যায়াম ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার মাধ্যমে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমানো সম্ভব। সচেতনতা বাড়ানো ও খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনই হতে পারে ক্যান্সার প্রতিরোধের মূল হাতিয়ার।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।