কারা যেন পুড়িয়ে দিল বৃদ্ধ দম্পতির শেষ আশ্রয়স্থল

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: মঙ্গলবার ২৭শে আগস্ট ২০১৯ ১০:১৪ অপরাহ্ন
কারা যেন পুড়িয়ে দিল বৃদ্ধ দম্পতির শেষ আশ্রয়স্থল

ফরিদপুর শহরের ঝিলটুলীতে রাতের আঁধারে পেট্রল ঢেলে হতদরিদ্র এক বৃদ্ধ দম্পতিকে পুড়িয়ে হত্যা চেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আগুনে পুড়ে গেছে ওই অসহায় পরিবারের সর্বস্ব। শেষ আশ্রয়স্থল হারিয়ে বর্তমানে অসহায় ওই দম্পতি সামনের একটি বাড়ির খোলা আকাশের নিচে অবস্থান নিয়েছেন। হৃদয়বিদারক এ ঘটনাটি ঘটে সোমবার ভোররাতে শহরের ঝিলটুলী মহল্লার আব্দুল করিম মিয়া সড়কে। ওই সড়কে অবস্থিত সাবেক আইনজীবী মরহুম আব্দুর রাজ্জাকের একটি টিনের ঘর রয়েছে। সেখানে তাদের কেউ থাকেন না। জরাজীর্ণ ওই টিনের ঘরেই বসবাস করতেন শহরের প্রবীণ রিকশাচালক আব্দুল মজিদ শেখ (৭৭) ও তার স্ত্রী ওসিরন নেসা বিবি (৭২)। নিঃসন্তান ওই দম্পতির উপার্জনের অক্ষম হওয়ায় পরিচিতজনদের সাহায্য সহযোগিতায় চলতো তাদের জীবন-জীবিকা।

ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, আগুনে অসহায় ওই দম্পতির সব সম্বলই পুড়ে গেছে। দরিদ্র ওই দম্পতি বিভিন্ন সময় সাহায্য বাবদ পাওয়া নতুন কাপড়ের কিছু পুড়ে গেছে। ঘরের মধ্যে তাদের সঙ্গে বিড়ালের দুটি ছানা ছিল। তারাও আগুনে পুড়ে মারা গেছে। ওসিরন নেসা বিবি জানান, সোমবার রাত ২টার দিকে হঠাৎ তার ঘুম ভেঙে যায়। এসময় তিনি কয়েকজনের ফিসফিস আওয়াজ শুনতে পান। তাদের ‘একজন কয়, এই ঘরের মধ্যেই আছে। তোরা ঢুইক্যা গলা কাইট্যা ফেলাবি। তহন আরেকজন কয়, গলা কাটতে গেলে চিল্ল্যাবেনে। তার চেয়ে পুড়ায় মারি।’

তিনি বলেন, ‘এই কথা শুইন্যা ভয়ে আমার পরান চইম্কে উঠে। কিছুক্ষণ বাদে ঘরের চাইর পাশে হাঁটার আওয়াজ পাই। তারপরই পেট্রলের গন্ধ। ঘরের পোষা বিলাই তহন ঝপাৎ কইর‌্যা আমার গায়ে আছড়ায় পড়ে। তারপর দরজা দিয়ে বাইর হইয়্যা যায়। আমরাও ওর সঙ্গে ঘর থিকা বাইর‌্যায় আসি। এরপরই আগুনে সব পুইড়্যা যায়।’ প্রবীণ রিকশাচালক মজিদ শেখ বলেন, ‘ওই জমিতে মার্কেট করার জন্য শত্রুরা ঘরে আগুন দিছে। আমাগো মারতে পারে নাই তয় বিলাই দুইড্যা পুইড়্যা মরলো।’ ফরিদপুর ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন ম্যানেজার নুরুল আলম দুলাল জানান, রাত ২টার দিকে আগুনের সূত্রপাত। এরপর খবর পেয়ে দমকল বাহিনী গিয়ে পৌনে ৩টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। বিদ্যুৎ সংযোগবিহীন ওই টিনের ঘরে কি কারণে আগুনের সূত্রপাত সেটি তদন্ত সাপেক্ষে বলা সম্ভব হবে বলে তিনি জানান।

মরহুম অ্যাডভোকেট মৌলভী আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে মোহাম্মদ জামান জানান, তারা এ ঘটনায় থানায় কোনো অভিযোগ করেননি। ওই বৃদ্ধ দম্পতিকে সেখানে বসবাসের জন্য একটি সেমিপাকা টিনের ঘর করে দেয়ার ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান তিনি। ফরিদপুর কোতোয়ালি থানা পুলিশের ওসি এ এফ এম নাসিম জানান, কোনো অভিযোগ পাইনি। কেউ অভিযোগ করলে খতিয়ে দেখবো। প্রসঙ্গত, বয়সে প্রবীণ আব্দুল মজিদ ফরিদপুর শহরে দীর্ঘদিন ধরে রিকশা চালানোর সুবাদে প্রায় সব মহলেরই পরিচিত মুখ। দরিদ্র হলেও তার সততা ও বিনয়ী আচরণে অনেকের প্রিয়ভাজন তিনি। নিঃসন্তান এ দম্পতির কেউই এখন উপার্জনক্ষম নন। পরিচিতদের সাহায্য সহযোগিতায় তাদের দিন চলে।

ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব