রাজধানী ঢাকার বাতাস আজও বিশ্বের দূষিত শহরগুলোর তালিকায় শীর্ষস্থানে রয়েছে। সোমবার সকাল সাড়ে আটটায় বায়ু মান সূচক অনুযায়ী ঢাকার স্কোর ছিল ২৬৩, যা ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ হিসেবে চিহ্নিত। সাম্প্রতিক সময়ে প্রায় প্রতিদিনই দূষণের শীর্ষে অবস্থান করছে ঢাকা, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য গুরুতর হুমকি হয়ে উঠেছে। এ তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ভারতের দিল্লি, যার একিউআই স্কোর ২৩৫। তৃতীয় স্থানে আছে চীনের উহান, যেখানে একিউআই স্কোর ১৯০। চতুর্থ ও পঞ্চম স্থানে রয়েছে যথাক্রমে ভারতের মুম্বাই ও চীনের চেংডু, যাদের স্কোর ১৮২। পাকিস্তানের লাহোরও দূষিত শহরের তালিকায় স্থান পেয়েছে, যার স্কোর ১৭৫।
সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউ এয়ার প্রতিদিনের বায়ুর মান পর্যবেক্ষণ করে দূষণের তালিকা তৈরি করে। বায়ুর মান সূচক অনুযায়ী, শূন্য থেকে ৫০ স্কোর ভালো, ৫১ থেকে ১০০ মাঝারি এবং ১০১ থেকে ১৫০ সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর হিসেবে গণ্য হয়। ১৫১ থেকে ২০০ পর্যন্ত স্কোর সাধারণ মানুষের জন্য অস্বাস্থ্যকর, ২০১ থেকে ৩০০ ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ এবং ৩০১ থেকে ৪০০ ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ ধরা হয়।
বায়ুদূষণ মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই দূষণের কারণে শ্বাসকষ্ট, কাশি, ফুসফুসের সংক্রমণসহ নানা রোগ বেড়েছে। শিশু, বয়স্ক ও অসুস্থ ব্যক্তিদের জন্য দূষিত বাতাস আরও বেশি ক্ষতিকর। বিশেষ করে দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হচ্ছে, যা মৃত্যুর হার বৃদ্ধির কারণ হতে পারে।
ঢাকায় বায়ুদূষণের প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে ইটভাটা, যানবাহনের কালো ধোঁয়া এবং নির্মাণকাজ থেকে সৃষ্ট ধুলোবালি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বায়ুদূষণ কমাতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি। বায়ুর মান উন্নত করতে অবিলম্বে দূষণ নিয়ন্ত্রণে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। বিশেষ করে নির্মাণকাজের ধুলো নিয়ন্ত্রণ, ইটভাটা কমানো এবং যানবাহনের ধোঁয়া নিয়ন্ত্রণের ওপর জোর দিতে হবে।
রাজধানীতে বসবাসরত বাসিন্দারা দূষণ থেকে বাঁচতে মাস্ক ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। পাশাপাশি শিশুদের অপ্রয়োজনীয়ভাবে বাইরে কম বের হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। যাদের শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা রয়েছে, তাদের বিশেষ সতর্কতা অবলম্বনের তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
বায়ুদূষণের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব হিসেবে হৃদরোগ, স্ট্রোক, ফুসফুসের ক্যান্সারসহ বিভিন্ন জটিল রোগের আশঙ্কা থাকে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সরকারের পাশাপাশি সাধারণ মানুষকেও সচেতন হতে হবে। নির্দিষ্ট এলাকায় গাছ লাগানো, নির্মাণকাজে ধুলো নিয়ন্ত্রণ এবং যানবাহনের ধোঁয়া কমানোর জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।
সরকার ইতোমধ্যে বায়ুদূষণ কমাতে কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। তবে পরিবেশবিদদের মতে, এ ধরনের সংকট মোকাবিলায় দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নেওয়া জরুরি। দ্রুত ও কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যতে রাজধানীবাসীর জন্য পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।