দিনাজপুরের বোচাগঞ্জ উপজেলায় প্রথমবারের মতো টিউলিপ ফুলের চাষ করে সফল হয়েছেন তরুণ উদ্যোক্তা হাসিনুর রহমান চৌধুরী। তার বাগানে ইতোমধ্যে ফুটেছে হলুদ রঙের টিউলিপ, যা দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ ছুটে আসছেন। শীতপ্রধান দেশের এ ফুলের চাষ দিনাজপুরের কৃষিতে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেছে।
বোচাগঞ্জ উপজেলার আটগাঁও ইউনিয়নের বন্ধুগাঁও এলাকায় দুই শতাংশ জমিতে পাঁচ রঙের টিউলিপের চারা রোপণ করেছেন হাসিনুর। ইউটিউব দেখে চাষ পদ্ধতি শিখে পরীক্ষামূলকভাবে এ উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি। চারা লাগানোর ১৩ দিনের মধ্যেই হলুদ টিউলিপ ফুটেছে, আর কয়েকদিনের মধ্যেই সবগুলো গাছে ফুল ফুটবে বলে আশা করছেন তিনি।
হাসিনুর জানান, পঞ্চগড়ে চাকরিরত তার ভাতিজার পরামর্শে টিউলিপ চাষের আগ্রহ জন্মায়। প্রতিটি চারা ১০০ টাকা দরে ৫০০ চারা কিনে তিনি পরীক্ষামূলক চাষ শুরু করেন। শীত মৌসুম দীর্ঘ থাকায় টিউলিপ চাষে তেমন বেগ পেতে হয়নি। আসন্ন বসন্ত উৎসব ও ভালোবাসা দিবসে ফুল বিক্রির পরিকল্পনা করছেন তিনি।
টিউলিপ চাষের জমি প্রস্তুতে তিনি ইউটিউবের নির্দেশনা অনুসরণ করেছেন। প্রথমে জমি চাষ করে সেচ দেওয়া হয়, এরপর গোবর সার ও রাসায়নিক সার মিশিয়ে মাটি উর্বর করা হয়। উঁচু জমিতে টিউলিপ চাষ বেশি উপযোগী হওয়ায় তিনি সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিয়েছেন। নিয়মিত পানি সেচ ও পরিচর্যার জন্য দুজন শ্রমিকও নিয়োজিত রয়েছেন।
বাগানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চারপাশে বেড়া দেওয়া হয়েছে। উৎসুক মানুষ ভিড় করলেও কাউকে ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। হাসিনুর জানান, এখন পর্যন্ত চারা কেনা, সেচ, বেড়া ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক খরচ মিলিয়ে প্রায় ৭৫ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। তবে সফল হলে আগামীতে পাঁচ একর জমিতে টিউলিপ চাষের পরিকল্পনা রয়েছে।
টিউলিপের প্রায় ১৫০টি জাত থাকলেও তার বাগানে সানরাইজ, অ্যান্টার্কটিকা হোয়াইট, লা বেলা রেড, স্ট্রং গোল্ড ও মিল্কশেক জাতের চাষ হচ্ছে। সূর্যের আলো নিয়ন্ত্রণে পলিথিন ও ছোট ছিদ্রযুক্ত নেট ব্যবহার করা হয়েছে। সব ফুল ফুটলে বাগানের সৌন্দর্য আরও বাড়বে বলে মনে করছেন তিনি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নয়ন কুমার শাহা জানান, জনপ্রতিনিধি ও উদ্যোক্তা হিসেবে হাসিনুরের এ উদ্যোগ প্রশংসনীয়। তিনি ইউটিউব দেখে টিউলিপ চাষ করলেও স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ নিয়েছেন। নিয়ম মেনে পরিচর্যা করায় তিনি ইতোমধ্যে সফল হয়েছেন।
দিনাজপুরে গাঁদা, গোলাপ ও রজনীগন্ধার চাষ আগে থেকেই প্রচলিত থাকলেও টিউলিপ চাষ এবারই প্রথম। কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা মনে করছেন, সফল হলে এটি জেলার ফুলের অর্থনীতিতে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দেবে।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।