ভূপতি ভূষণ বর্মা, একজন বিশিষ্ট ভাওয়াইয়া গানের শিল্পী এবং গবেষক, তাঁর জীবনের অমূল্য অবদান দিয়ে এই দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে এক বিশেষ স্থান দখল করে আছেন। তিনি কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর উপজেলার বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের আঠারো পাইকা গ্রামে ১৯৫৮ সালে জন্মগ্রহণ করেন। ভাওয়াইয়া গানের প্রতি তার ভালোবাসা ছোটবেলা থেকেই ছিল, এবং তার বাবা নরেন্দ্রনাথ বর্মা তাকে হারমোনিয়াম বাজানোর জন্য উৎসাহিত করেন। সেই থেকে সংগীতের প্রতি তার আগ্রহ আরো বাড়ে।
শিল্পী ভূপতি ভূষণ বর্মা ১৯৮২ সালে রংপুর বেতারের তালিকাভুক্ত শিল্পী হিসেবে গানের জগতে পা রাখেন এবং ২০০৭ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশনের তালিকাভুক্ত হন। তার গানে রয়েছে পাঁচ শতাধিক রেকর্ড, যা তাকে ভাওয়াইয়া গানের অন্যতম কিংবদন্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। তিনি ১৯৯৩ সালে "বাংলাদেশ ভাওয়াইয়া একাডেমি" প্রতিষ্ঠা করেন, যেখানে বিনামূল্যে ছাত্র-ছাত্রীরা সংগীত শিখতে পারে।
ভূপতি ভূষণ বর্মা সংগীতের মাধ্যমেই তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ভাওয়াইয়া গানের প্রসার ঘটানোর জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, আজকাল শিক্ষকদের মাধ্যমেই বাচ্চারা সংস্কৃতির থেকে দূরে সরে যাচ্ছে, ফলে তারা নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। তিনি মনে করেন, আমাদের নতুন প্রজন্মকে সংগীতের প্রকৃত রুচি ও শিক্ষা দিতে হবে।
এছাড়া, তার গানের মধ্যে জনপ্রিয় গানের ক্যাসেটগুলো যেমন "ফেরিওয়ালা", "মনে জানে মনের কথা", "ঢালুয়া খোপা" প্রভৃতি আজও শ্রোতাদের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছে। তার গানে বিশেষভাবে উঠে আসে মাটি, মানুষ এবং সংস্কৃতির নানা রূপ, যা তার ভাওয়াইয়া গানের বিশেষত্ব।
ভূপতি ভূষণ বর্মার অবদানের জন্য তিনি বহু সম্মাননা এবং পদক পেয়েছেন, যার মধ্যে "আব্বাস উদ্দিন পদক", "পশ্চিমবঙ্গ মণীষি পঞ্চানন স্মৃতি রক্ষা কমিটি কর্তৃক সম্মাননা" অন্যতম। ২০১৯ সালে তার জীবনের উপর একটি সংবর্ধনা গ্রন্থ প্রকাশিত হয়, যা তার জীবন ও কর্মের এক গুরুত্বপূর্ণ দলিল।
তিনি শুধু বাংলাদেশেই নয়, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ এবং দক্ষিণ কোরিয়াতেও সংগীত পরিবেশন করেছেন, যা তার আন্তর্জাতিক খ্যাতি প্রমাণ করে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহারের পঞ্চানন বর্মা বিশ্ববিদ্যালয়ে "Introduction to Indigenous Instruments Related to Bhawaya" কোর্সে তাঁর জীবনী পড়ানো হয়।
তিনি বলেন, "ভাওয়াইয়া গানের মাধ্যমে আমরা আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে সমুন্নত রাখতে পারব, যা পরবর্তী প্রজন্মের জন্য অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ।"
আমরা শিল্পী ভূপতি ভূষণ বর্মার দীর্ঘায়ু কামনা করি এবং আশা করি তিনি তাঁর গানের মাধ্যমে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে আরও সমৃদ্ধ করবেন।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।