আইসিটি খাতে বিপুল দুর্নীতি: শ্বেতপত্রে প্রকাশিত

নিজস্ব প্রতিবেদক
মোঃ সাইফুল ইসলাম, সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশিত: শুক্রবার ২০শে ডিসেম্বর ২০২৪ ১১:১০ পূর্বাহ্ন
আইসিটি খাতে বিপুল দুর্নীতি: শ্বেতপত্রে প্রকাশিত

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গত দেড় দশকে 'ডিজিটাল বাংলাদেশ' নির্মাণের জন্য প্রায় ২৯ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হলেও, শ্বেতপত্রে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, আইসিটি খাতে ব্যাপক দুর্নীতির চিত্র উঠে এসেছে। ১ ডিসেম্বর প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জমা দেওয়া প্রতিবেদন অনুযায়ী, আইসিটি খাতকে দেশটির সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত খাত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। 


প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করেছে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি, যার চেয়ারম্যান অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি জানান, তথ্যপ্রযুক্তি খাত বাংলাদেশে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলেও, নতুনত্বের সুযোগ নিয়ে বহু প্রকল্পের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ লোপাট করা হয়েছে। শ্বেতপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে যে, রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত সম্পর্কের কারণে কিছু মানুষের হাতে প্রকল্পের কাজ এসেছে, যারা এসব প্রকল্পের মাধ্যমে বিশাল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেছে। 


আইসিটি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে ৫৫টি প্রকল্প নেওয়া হয়, যার মোট ব্যয় ছিল প্রায় ২৮ হাজার কোটি টাকা। তবে, এই প্রকল্পগুলোর সুফল তেমন পরিলক্ষিত হয়নি। উদাহরণ হিসেবে, আইসিটি ডেভেলপমেন্ট ইনডেক্সে ১৭০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১২৯তম, যা অনেকটাই হতাশাজনক। 


প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে যে, অনেক প্রকল্প যাচাই-বাছাই ছাড়াই পাশ করা হয়েছে এবং খরচের ব্যাপারে বড় ধরনের দুর্নীতি হয়েছে। বিশেষ করে যন্ত্রপাতি ও সফটওয়্যার অধিক মূল্যে কেনা হয়েছে এবং অনেক প্রকল্পে ফালতু ব্যয় করা হয়েছে, যার ফলে সরকারের তহবিলের অপব্যবহার ঘটেছে। এসব প্রকল্পে স্বচ্ছতার অভাব ছিল এবং অনেক ক্ষেত্রে সরকারিভাবে বরাদ্দ দেওয়া অর্থ শুধু রাজনৈতিক সুবিধাভোগীদের কাছে পৌঁছেছে।


আইসিটি খাতের বৃহত্তম প্রকল্প 'ডিজিটাল সংযোগ স্থাপন (ইডিসি)' প্রকল্পে প্রায় ৫ হাজার ৯২৩ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে, কিন্তু এখন পর্যন্ত প্রকল্পের মাত্র ২০০ কোটি টাকার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এ বিষয়ে আইসিটি সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী বলেন, "এ ধরনের প্রকল্পগুলোর কেনাকাটা বন্ধ রাখা হয়েছে এবং যা কিছু কাজ হয়েছে, সেখানে স্থগিত রাখা হয়েছে।"


এ পরিস্থিতিতে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি সরকারের কাছে সুপারিশ করেছে যে, এই খাতে আরও অধিক তদন্ত এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হোক, যেন ভবিষ্যতে সরকারি তহবিলের অপচয় রোধ করা যায়। তবে, কিছু প্রকল্পের কাজ আবার শুরু করা হতে পারে, কারণ সরকারের নীতি অনুযায়ী, কিছু প্রকল্প এখনো গুরুত্বপূর্ণ এবং এগুলোর উন্নয়ন প্রয়োজন।


এ অবস্থায়, দেশের জনগণ এবং বিশেষত যুবসমাজের জন্য শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, কারণ এই খাতে ব্যয় হওয়া বিপুল পরিমাণ অর্থের সুফল তারা এখনও পরিলক্ষিত করতে পারেনি।