তীব্র তাপদাহ: রাতে টর্চের আলোয় ধান কাটছেন শরীয়তপুরের কৃষকরা

Ziaul Hoque
জিয়াউল হক, নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ৪:৮

শেয়ার করুনঃ
তীব্র তাপদাহ: রাতে টর্চের আলোয় ধান কাটছেন শরীয়তপুরের কৃষকরা

বোরো ধান ঘরে তোলার মৌসুম চলছে। কিন্তু তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে সারাদেশে জারি করা হয়েছে ‘হিট এলার্ট’। তাপ প্রবাহের মধ্যে কৃষকরা মাঠে ধান কাটতে গেলে হিট স্ট্রোক করতে পারেন- এমন শঙ্কা থেকে কৃষকদেরকে বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত ধান কাটার পরামর্শ দিয়েছে শরীয়তপুর কৃষি অফিস। কৃষি অফিসের পরামর্শ অনুযায়ী সন্ধ্যার পর টর্চ লাইটের সাহায্যে ধান কাটছেন কৃষকরা।

গত কয়েকদিন ধরে শরীয়তপুর সদর উপজেলাসহ বিভিন্ন উপজেলার ফসলি মাঠে কৃষকদেরকে টর্চ লাইট জ্বালিয়ে ধান কাটতে দেখা গেছে।

শরীয়তপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, গত বছরের তুলনায় এ বছর আমাদের বোরো ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা বেশি। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী জেলায় বেশ ভালো ফলন হলেও সারাদেশে চলমান তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে হিট স্ট্রোকের ভয়ে দিনের বেলা কৃষকরা মাঠে ধান কাটতে যেতে পারছেন না। বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত টর্চ লাইট জ্বালিয়ে কৃষকদেরকে ধান কাটার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে কৃষি বিভাগ থেকে। গত মৌসুমের তুলনায় চলতি মৌসুমে ৩৩৬ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়ে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৫ হাজার ৫২৬ হেক্টর। গত মৌসুমে বোরো উৎপাদন হয়েছিল ১ লাখ ১৫ হাজার ৯০৬ মেট্রিক টন। চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ১৭ হাজার ৬২৭ মেট্রিক টন। তীব্র তাপপ্রবাহ চলমান থাকলেও উৎপাদন কম হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তাপ প্রবাহের কারণে দিনের বেলা মাঠে গিয়ে ফসল কাটা কষ্টসাধ্য কাজ। এছাড়াও কৃষকরা যেন হিট স্ট্রোকের ঝুঁকিতে না পড়েন- সেজন্য কৃষি বিভাগ থেকে তাদেরকে বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত ধান কাটতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

গোসাইরহাটের বিনুইট্টা গ্রামের মো. হাকিম ঢালী এ বছর ৭০ শতাংশ জমিতে বোরো ধানের আবাদ করেছেন। তার চাষাবাদকৃত জমিতে বেশ ভালো ফলন হলেও তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে দিনের বেলা তিনি ধান কাটতে না পেরে বেশ চিন্তিত ছিলেন। কিন্তু কৃষি অফিসের পরামর্শে তিনি টর্চ লাইটের আলোতে সন্ধ্যার পর থেকে ধান কাটা শুরু করেছেন। 

https://enews71.com/storage/ads/01JQ184AJV9F0T856X9BBSG85X.gif

হাকিম ঢালী বলেন, যে গরম এ বছর পড়েছে, তা আমি আমার ৬০ বছরের জীবনে কোনোদিন দেখিনি। ধান পেকে কাঁটার সময় হয়েছে। কিন্তু গরমের কারণে কোনো শ্রমিক ধান কাটতে রাজি না হওয়ায় কৃষি বিভাগের সহযোগিতা চাইছিলাম। তাদের পরামর্শে এখন সন্ধ্যার পর থেকে টর্চ লাইট জ্বালিয়ে ধান কাটতেছি, যদিও এতে বেশ সময় ব্যয় হচ্ছে। কিন্তু আমার ফসল ঘরে তুলতে পারব, এতেই আমি খুশি।

সদর উপজেলার আজিজুল ইসলাম নামে একজন বলেন, রাতের বেলা তুলনামূলক গরম কম থাকে, সূর্যের তাপ থাকে না। গরমের কারণে শ্রমিকরা দিনের বেলা হিট স্ট্রোকের ভয়ে মাঠে ধান কাটার কাজ করতে চান না। তাই রাতের বেলা শ্রমিকদের নিয়ে জমির ধান কাটতেছি। সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত ধান কাটব। 

শরীয়তপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, সারাদেশে তীব্র তাপপ্রবাহ চলছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে হিট এলার্ট জারি করা হয়েছে। এমন তাপের মধ্যে কৃষকরা মাঠে ধান কাটতে গেলে হিট স্ট্রোকসহ অন্যান্য স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়তে পারেন। এজন্য কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদেরকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে রাতের বেলা টর্চ লাইট বা অন্য উপায়ে আলোর ব্যবস্থা করে যেন তারা ধান কাটেন। দিনের তুলনায় রাতে তুলনামূলক গরম কম হওয়ায় কৃষকরা স্বস্তিতে ফসল ঘরে তুলতে পারবেন। 

তিনি বলেন, ইতোমধ্যে জেলার বিভিন্ন স্থানে কৃষকরা রাতের বেলা ধান কাটা শুরু করে দিয়েছেন। মাঠের বোরো ধান পেকে যাওয়ায় গরমের কারণে উৎপাদন কম হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তীব্র গরমের কারণে কৃষি বিভাগের পরামর্শ অনুযায়ী রাতের বেলা যদি কৃষকরা ধান কাটতে পারেন, তাহলে তারা লোকসানেও পড়বেন না।

https://enews71.com/storage/ads/01JR36BQSKCPE69WB8Z3TARXE3.jpg

সোশ্যাল মিডিয়াতে আমরা

https://enews71.com/storage/ads/01JR3CX28Y9BM01PRE4TXCNDWF.jpg

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

ঝড়-বৃষ্টিতে সিরাজগঞ্জে রোপা আমনসহ হাজারো বিঘা ফসলের ক্ষতি

ঝড়-বৃষ্টিতে সিরাজগঞ্জে রোপা আমনসহ হাজারো বিঘা ফসলের ক্ষতি

সিরাজগঞ্জে হঠাৎ করে শুরু হওয়া ঝড়ো হাওয়া ও প্রবল বৃষ্টিপাতে রোপা আমনসহ বিভিন্ন মৌসুমি ফসল ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে। জেলার বিভিন্ন উপজেলার মাঠ এখন পানির নিচে। কৃষকরা বলছেন, এ ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে তাদের দীর্ঘ সময় লেগে যাবে। গত শুক্রবার মধ্যরাতের পর হালকা গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়। অল্প সময়ের মধ্যেই বৃষ্টি রূপ নেয় প্রবল বর্ষণে। সাথে যুক্ত হয় প্রচণ্ড ঝড়ো হাওয়া।

ধান কাটার আগেই ঝড়-বৃষ্টি, হিলিতে কৃষকের মুখে হতাশার ছাপ

ধান কাটার আগেই ঝড়-বৃষ্টি, হিলিতে কৃষকের মুখে হতাশার ছাপ

দিনাজপুরের হাকিমপুর হিলি উপজেলার মাঠজুড়ে এখন কৃষকদের চরম হতাশা। কয়েকদিনের টানা বৃষ্টি, ঝড়ো হাওয়া এবং বৈরী আবহাওয়ার কারণে পাকা আমন ধান মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে। ফলে ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কায় দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন স্থানীয় হাজারো কৃষক। যাদের সারা বছরের স্বপ্ন, শ্রম আর ঘাম মিশে আছে এই ধানের মাঠে। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলের ধানক্ষেতে পানি জমে গেছে। ঝড়ো হাওয়ায় ধানের গাছ

গোপালপুরে ধানের চেয়ে খড় দামি, কৃষকের চিন্তার ভাঁজ

গোপালপুরে ধানের চেয়ে খড় দামি, কৃষকের চিন্তার ভাঁজ

টাঙ্গাইলের গোপালপুরে ধান কাটার মৌসুম এলেও কৃষকদের মুখে ফিরে আসেনি হাসি। বরং নতুন উদ্বেগ ঘিরে ধরেছে তাদের। মাঠে সোনালি ধান পেকে গেলেও বাজারে দেখা দিয়েছে অদ্ভুত এক চিত্র—ধানের চেয়ে খড়ের দামই বেশি। যে খড় সাধারণত ধান কাটার পর অবহেলিতভাবে পড়ে থাকে, সেই খড়ই এখন যেন ‘সোনার খড়’ হয়ে উঠেছে। বর্তমানে গোপালপুরে এক মণ ধান বিক্রি হচ্ছে ১,২০০ থেকে ১,৪০০ টাকায়। অথচ

আত্রাইয়ে প্রনোদনার সার-বীজ বিতরণ কার্যক্রম উদ্বোধন

আত্রাইয়ে প্রনোদনার সার-বীজ বিতরণ কার্যক্রম উদ্বোধন

নওগাঁর আত্রাইয়ে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের আয়োজনে বিনামূল্যে প্রনোদনার সার-বীজ বিতরণের উদ্বোধন করা হয়েছে। বুধবার (২৯ অক্টোবর) সকালে উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গনে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের সহায়তার জন্য ২০২৫-২৬ অর্থ বছরে রবি মৌসুমে কৃষি প্রনোদনা কর্মসূচির আওতায় বিনামূল্যে সার ও বীজ বিতরণের উদ্বোধন করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) নূরে আলম সিদ্দিক। কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এ মৌসুমে ৫ হাজার কৃষককে বিনামূল্যে প্রনোদনার

শ্রীমঙ্গলে মাল্টা চাষে সফল কৃষক আতর আলী

শ্রীমঙ্গলে মাল্টা চাষে সফল কৃষক আতর আলী

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে মাল্টা চাষ করে সফলতার স্বপ্ন পূরণ করেছেন শ্রীমঙ্গল সদর ইউনিয়নের ডলুছড়া গ্রামের কৃষক মোঃ আতর আলী। ২০২২ সালে কৃষি বিভাগ থেকে প্রাপ্ত ২০০টি মাল্টার চারা ও জৈব সার প্রণোদনা পেয়ে তিনি পাহাড়ি টিলায় পরীক্ষামূলকভাবে মাল্টা চাষ শুরু করেন। চারা রোপণের দুই বছর পর প্রথমবার ফলন আসার পর বাণিজ্যিকভাবে চাষ শুরু করেন। সরেজমিনে দেখা যায়, আতর আলীর ১৫ বিঘা জমিজুড়ে