আসছে বৃষ্টি, চলছে শৈত্যপ্রবাহ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: শুক্রবার ২১শে জানুয়ারী ২০২২ ১০:০৮ পূর্বাহ্ন
আসছে বৃষ্টি, চলছে শৈত্যপ্রবাহ

পশ্চিমী ঝঞ্ঝার ভ্রুকুটি পিছু ছাড়ছে না। এক দিন বিরতি দিয়ে ফের শুরু হয়েছে শৈত্যপ্রবাহ। রাজশাহী, পাবনা, নওগাঁ ও কুড়িগ্রাম—এই চার জেলার ওপর দিয়ে বর্তমানে বছরের চতুর্থ মৃদু শৈত্যপ্রবাহ চলছে, যা অব্যাহত থাকার আভাস রয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বৃষ্টিপাতের প্রবণতাও। ফলে বাড়তে পারে ভোগান্তি। 


আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, শুরুতে সিলেট বিভাগ, এরপর উত্তর-পূর্বাঞ্চল হয়ে সারা দেশে আগামী ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত বৃষ্টি থাকতে পারে। বৃষ্টির পর রোদের দেখা মিলবে। তখন মেঘ সরে যাওয়ার পর বাড়বে শীত। ঐ সময় আরেকটি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। 



কানাডার সাসকাচুয়ান ইউনিভার্সিটির আবহাওয়া ও জলবায়ুবিষয়ক বাংলাদেশি পিএইচডি গবেষক মোস্তফা কামাল বলেন, আগামী ২৩, ২৪ ও ২৫ জানুয়ারি বৃষ্টি হতে পারে। এরপর ১, ২ ও ৩ ফেব্রুয়ারি আবারও বৃষ্টি হতে পারে। এই দুই বৃষ্টির মধ্যবর্তী সময়ে শীত বাড়বে।


আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ আবদুল হামিদ বলেন, হিমালয়ের পাদদেশে ভারতীয় অংশ হয়ে ইতিমধ্যে একটি মেঘমালা ভেসে এসে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল দিয়ে প্রবেশ করেছে। পর্যায়ক্রমে তা দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে ঝিরঝির ও হালকা বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে আকাশ আংশিক মেঘাচ্ছন্ন থাকতে পারে।



আবহাওয়া বিশ্লেষণকারী ওয়েবসাইটগুলোতে দেখা যাচ্ছে, আগামী সোমবার ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ৯০ শতাংশ। রবিবার ৪০ শতাংশ।


আবহাওয়াবিদ মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, মাঘের প্রথম সপ্তাহ চলছে। এই পর্যায়ে দেশের বিভিন্ন স্হানে শীতের তীব্রতা বেড়েছে। 


আগামী ২৪ ঘণ্টায় রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় হালকা বৃষ্টি বা গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া দেশের অন্যত্র আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের কোথাও কোথাও হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে। এই সময়ে সারা দেশে রাত ও দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে বলেও জানান তিনি।


আবুল কালাম মল্লিক আরো জানান, রাজশাহী, পাবনা, নওগাঁ ও কুড়িগ্রাম জেলার ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। গতকাল বৃহস্পতিবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে রাজশাহীতে। এছাড়া সকালে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা পাবনার ঈশ্বরদীতে ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি, নওগাঁর বদলগাছীতে ৯ দশমিক ৬, কুড়িগ্রামের রাজারহাটে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল। পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় তাপমাত্রা কিছুটা বেড়ে হয়েছে ১০ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়া গতকাল ময়মনসিংহে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১২ দশমিক ৮, চট্টগ্রামে ১৫ দশমিক ৪, সিলেটে ১৫ দশমিক শূন্য, রংপুরে ১০ দশমিক ৫, খুলনায় ১৩ দশমিক শূন্য এবং বরিশালে ১১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।


আবহাওয়ার পরিমাপ অনুযায়ী, দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা সাধারণত ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে বলা হয় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। তাপমাত্রা ৬ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে তাকে বলা হয় মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ। আর তাপমাত্রা ৬ থেকে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে গেলে তাকে অতি তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়। 


এদিকে গত দুই দিন উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে সারা দিন সূর্যের দেখা মিলছে না। ঘন কুয়াশার কারণে দৃষ্টিসীমা কমে গেছে ১০-১২ গজের মধ্যে। দিনের বেলায়ও হেডলাইট জ্বালিয়ে যানবাহনগুলো চলাচল করছে। শীতের কারণে ছিন্নমূল মানুষের কষ্ট বেড়েছে বেশি। এ ছাড়া আলু, টমেটো ও বোরো বীজতলায় মড়ক দেখা দিয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বর্তমান অবস্হায় ফসলের খেতে ঘন ঘন বালইনাশক স্প্রের এবং বোরো ধানের বীজতলা ঢেকে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।