প্রকাশ: ১১ ডিসেম্বর ২০২০, ২:৪০
আশাশুনিতে গ্রামীন ঐতিহ্যবাহী লাঠি, সার্কাস ও মুকুষ খেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। লাঠি খেলোয়াড় ও শিল্পীর মর্যাদা বা উপযুক্ত পারিশ্রমিক না পাওয়াসহ বিভিন্ন সমস্যার কারনে দিন দিন লাঠি খেলা গ্রামীন সংস্কৃতি থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে। আগের দিনে প্রবীন খেলোয়াড়রা মন্ত্র-তন্ত্র আর আল্লাহু তায়ালার নাম নিয়ে খেলা শুরু করত। আজ সে সব মন্ত্র-তন্ত্র দেয়ার লোককে দেখা তো দূরের কথা তাদের শিষ্যদের সাথে খেলার মাঠেও হাজির হতে দেখা যায় না। আবার এলাকার অনেক নামী ও প্রতিথযষা খেলোয়ারড়া এ পৃথিবী ছেড়ে চলেও গেছেন।
এলাকার কিছু শহরে থাকা ধর্ণাঢ্য ব্যক্তি এলাকায় বিনোদনে বা বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন মাঝে মধ্যে লাঠি খেলার আয়োজন করেন। আবার জনপ্রতিনিধি হতে নির্বাচন করতে ইচ্ছুক ব্যক্তি বা রাজনৈতিক সংগঠন লাঠিখেলার আয়োজন করে থাকেন, শুধুমাত্র কিছু জনগন একত্রিত করে তাদের বক্তব্য বা তার নির্বাচনী ইসতেহার জানান দিতে। কিন্তু কে বা খোজ রাখে তাদের খেলার প্রতি অনিহা বা এ হারিয়ে যাওয়া পেছনে কারন কি ? নেই উপযুক্ত পারিশ্রমিক, খেলার যন্ত্রপাতি, সর্বপরি খেলা করার মত সে পরিবেশ।
এমনই এক মুহুর্তে আশাশুনি সদরের শ্রীকলস এলাকার চা বিক্রেতা আশারাফ হোসেন, খোকন, রহমানসহ সাধারণ কয়েকজন ব্যক্তি বিনোদনে উদ্যোগ নেয় ঐতিহ্যবাহী লাঠিখেলা ও সার্কেস খেলা। তারা আলোচনা করেন লাঠি খেলা জগতের ওস্তাদ মরহুম ওহেদ আলী গাজীর পুত্র বাবার নিকট থেকে শেখা নামী লাঠি খেলোয়াড় সিদ্দিকুর রহমান সিদ্দিকের সাথে। সিদ্দিকের নেতৃত্বে সাতক্ষীরা জেলার বিভিন্ন এলাকার নামী ও অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের সমন্বয়ে লাঠি খেলা ও সার্কাস খেলাড়দের একত্রিত করেন ১১ ডিসেম্বর শুক্রবার বিকালে আশাশুনি মরিচ্চাপ ব্রীজ সংলগ্ন শ্রীকলস ফেমাস চিংড়ী পোনা হ্যাচারী চত্বরে এক আনন্দঘন পরিবেশে। খেলায় নানান অঙ্গ-ভঙ্গিতে লাঠি বা অন্যান্য খেলার সরঞ্জাম নিয়ে অংশ গ্রহন করে।
বিভিন্ন রকমারি খেলা প্রদর্শন করে সাতক্ষীরা জেলার বাছাইকৃত লাঠি খেলোয়াড় সাতক্ষীরা সদরের মধুমল্লার ডাঙ্গীর সাইফুল ইসলাম, কালিগঞ্জের ইন্দননগর-কাজলার মোসলেম উদ্দীন, আশাশুনি সদরের সিদ্দিক নিয়ন্ত্রিত ইশারের দল ও নৈশ প্রহরী বদরুদ্দিন মোড়ল, গদাইপুরের মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রশিদের দলসহ বিভিন্ন নামী ও অভিজ্ঞ খেলোয়াড়রা। এছাড়া আশাশুনি সদরের জবেদ আলী সরদারের পুত্র সার্কেস মাষ্টার আরিফুল ইসলাম মিনি সার্কাস বারের খেলা, তারের উপর দাড়িয়ে বল, দা, আগুনের মশাল নিয়ে খেলা ও বারের উপর সাইকেল চালানোসহ বিভিন্ন অঙ্গ ভঙ্গিতে খেলা প্রদর্শন করে। খেলা চলাকালিন বাদ্য যন্ত্রে সহযোগীতা করে ঋষি গোষ্ট দাশ, কান্তি লাল দাশসহ তাদের দল।
হাজারও দর্শক শ্রোতার উল্লাসের মধ্যদিয়ে খেলা চালাকালিন উপস্থিত ছিলেন ও পুরষ্কৃত করেন সাবেক উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ও লাঠি খেলা দলের উপদেষ্টা আব্দুল হান্নান, আশাশুনি প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি এসএম আহসান হাবিব, ইউপি সদস্য তারিকুল আওয়াল সেজ, রোজিনা পারভীন ময়না, ইউপি সদস্য প্রার্থী প্রাক্তন সেনা সদস্য রাকিবুল ইসলাম, ঠেকাদার নজরুল ইসলাম, শাহানারা মোর্শারফ, মারুফা খাতুনসহ গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ। সন্ধ্যায় দেশ স্বাধীন পরবর্তী প্রথম সংসদ সদস্য মুক্তিযোদ্ধা প্রয়ত নওয়াব আলী রচিত ও ঋষি স্বর্গীয় নগেন দাশ কর্তৃক গঠিত কৌতুক দল কৌতুক পরিবেশন ও মুকুষ খেলা পরিদর্শন করেন।
এ সময় লাঠি খোলা দলের অধিনায়ক সিদ্দিকুর রহমান এ প্রতিবেদককে অত্যান্ত ক্ষোভ ও দুঃখের সাথে বলেন, আজ কঠিন ও ঝুকিপূর্ণ এ খেলায় কোন সরকার বা প্রতিষ্ঠান ফিরে দেখেনি বা তাদের দুঃখ দুর্দশার খোজ নেয়নি। অভাবের তাড়নায় আর উপযুক্ত পারিশ্রমিক প্রবনাতা না থাকায় খেলোয়াড়রা দিন দিন হারিয়ে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছে। অনেকে বিপথগামীও হয়ে গেছে। তিনি জেলা প্রশাসকসহ সরকারের উচ্চ পদস্থ কর্তা ব্যক্তিদের গ্রামীন সংস্কৃতি ঐতিহ্যবাহী লাঠিখেলাদের সহযোগীতায় এগিয়ে আসার জন্য আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।