প্রকাশ: ১১ ডিসেম্বর ২০২০, ১৬:৩২
এখন হেমন্ত কাল। শরৎ কে বিদায় জানিয়ে ঋতুর পালাক্রমে শীতের আগমনী বার্তা নিয়ে প্রকৃতির মাঝে হাজির হয়েছে হেমন্ত। হেমন্তরে আগমনে উত্তপ্ত এই প্রকৃতি এখন শান্ত হয়ে উঠেছে। সকালে সোনালী ধান ও সবুজ ঘাসের মাথায় জমে থাকা শিশির কনা, সন্ধ্যার মৃদু কুয়াশা, গা শিনশিন করা হিমেল বাতাস, রাতের রানী শিউলী, টগরই জানান দিচ্ছে প্রকৃতিতে শীতের বারতা এনে দিয়েছে হেমন্ত। হেমন্তের আগমনে আজ যেনো প্রকৃতি সেজেছে নতুন রুপে।
তাইতো প্রকৃতি প্রেমী কবি সুফিয়া কামাল ‘হেমন্ত’ কবিতায় লিখেছেন, ‘সবুজ পাতার খামের ভেতর হলুদ গাঁদা চিঠি লেখে কোন পাথরের ওপার থেকে আনল ডেকে হেমন্তকে?’। ঠিক তেমনি হেমন্তের আগমনে প্রকৃতি সেজেছে এক অপরূপ সাজে। হেমন্তের আগমনে মাঠে মাঠে শিশির কনা মাথায় নিয়ে দুলছে সোনালী রোপা ধান। পাকা ধানের সুমিষ্ট সুবাসে মুখরিত চারিপাশ। কৃষকের ঘরে ঘরে উঠতে শুরু করেছে রক্তজল করা সোনালী রোপা ধান। প্রায় এলাকাতেই গ্রামবাংলার কৃষক পরিবারে পালিত হচ্ছে নবান্ন উৎসব।
হেমন্ত মানেই শীতের আগমনী বার্তা। আগে হেমন্ত এলেই লালপুরের মানুষের মাঝে আনন্দ বিরাজ করতো। গ্রামের পুরুষেরা সকাল থেকে শুরু করে জমিতে নতুন ধান কাটতো আর গৃহবধুরা লালপেড়ে শাড়ী পরে গ্রামের মেঠোপথ বেয়ে খাবার নিয়ে কৃষি জমিতে যেতো। সারাদিনের কাটা ধান রাতভর বাড়িরর উঠানে মাড়াই করতো বাড়ির পুরুষেরা আর মধুর কন্ঠে বারশিয়া গান গাইতো ‘বাড়ির পাশে বেতের আড়া হাল জুড়াইছে ছোট্ট দেওরা রে’।
গৃহবধুরা সেই ধান সারাদিন রোদে শুকিয়ে ঘরে তুলতো আর শুকনো নতুন ধান ঢেঁকিতে কুড়ে গুড়া তৈরী করে নতুন খেজুরের গুড় দিয়ে প্রতিটি বাড়িতে বাড়িতে তৈরী হতো পিঠা-পুলি, খির ও পায়েশ। গ্রামগুলিতে পালিত হতো নবান্ন উৎসব। উৎসব কে কেন্দ্র করে আসতে শুরু করতো মেয়ে-জামাই ও আত্মীয় পরিজন। কিন্তু আধুনিকতার যুগে কালের আবর্তে এই রিতিনিতি গুলি এখন সবই যেন পুথিকথা হয়ে গেছে।’ বাংলাদেশ ষড়ঋতুর দেশে প্রতি দুই মাস পর পর প্রকৃতি বদলায় তার রুপ আর রং।
তবে জলবায়ু পরিবর্তনের কারনে এখন দুইমাস পর পর আর ঋতু পরিবর্তন হয়না। ভৌগোলিক কারনে নাটোরের লালপুর উপজেলা সবচেয়ে উচুঁ ও কমবৃষ্টিপাতের এলাকা হিসেবে পরিচিত। তার পরেও এবার এই উপজেলায় কার্তিকের শুরুতেই দেখাদিয়েছে শীত। শীতের আগমনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় শুরু হয়েছে লেপ-তোষক তৈরীর কাজ। শুরু হয়েছে পথে ঘাটে চটি পেতে পুরাতন কাপড় বিক্রয়। বাজার গুলিতে উঠতে শুরু করেছে শীতের আগাম সবজি। বিল ঝিলে ফুটছে লাল-সাদা শাপলা, ফুটেছে কলমিলতা ও কচুরিপানার ফুল। গাছিরাও ব্যস্ত শীতের অন্যতম খেজুর রস সংগ্রহে।