আরও ১ হাজার কোটি টাকা দিতে ৩ মাস সময় পেল গ্রামীণফোন

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: সোমবার ২৪শে ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১২:২৪ অপরাহ্ন
আরও ১ হাজার কোটি টাকা দিতে ৩ মাস সময় পেল গ্রামীণফোন

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে (বিটিআরসি) পাওনা বাবদ আরও ১ হাজার কোটি টাকা দিতে গ্রামীণফোন কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। আগামী তিন মাসের মধ্যে এই টাকা পরিশোধ করতে বলা হয়েছে। আদালতের নির্দেশ মেনে ২ হাজার কোটি টাকার মধ্যে ১ হাজার কোটি টাকা গতকাল রোববার বিটিআরসিকে দেয় গ্রামীণফোন। এই তথ্য জানিয়ে বাকি অর্থ দিতে গ্রামীণফোনের আইনজীবীর সময়ের আর্জির পরিপ্রেক্ষিতে ৩ মাস সময় দেন আপিল বিভাগ।

গ্রামীণফোনের পক্ষ থেকে বিটিআরসিকে রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি ) ১ হাজার কোটি টাকার পে-অর্ডার দেয়া হয়েছে বলে জানানোর পর সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) সকালে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হাসানের নেতৃত্বাধীন ৬ সদস্যের আপিল বিভাগের বৃহত্তর পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ এ আদেশ দেন। সোমবার আদালতে বিটিআরসির পক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও ব্যারিস্টার খন্দকার রেজা-ই-রাকিব। গ্রামীণফোনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী এ এম আমিন উদ্দিন ও মোহাম্মদ মেহেদী হাসান চৌধুরী।

পরে মেহেদী হাসান চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশে গতকাল রোববার এক হাজার কোটি টাকা পরিশোধ করেছে গ্রামীণফোন। বাকি এক হাজার কোটি টাকা দিতে গ্রামীণফোনকে তিন মাস সময় দিয়েছেন আপিল বিভাগ। নিরীক্ষা পাওনা দাবি নিয়ে করা মামলাটি (নিম্ন আদালতে থাকা) নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত হাইকোর্টের দেয়া নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে বলেছেন আপিল বিভাগ। একই সঙ্গে গ্রামীণফোন যাতে নির্বিঘ্নে ব্যবসা করতে পারে, সে বিষয়টি নিশ্চিতের কথা বলেছেন সর্বোচ্চ আদালত।

এর আগে গত বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি ) প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম কোর্টের সাত সদস্যের আপিল বিভাগ সোমবারের (২৪ ফেব্রুয়ারি) মধ্যে বিটিআরসিকে এক হাজার কোটি টাকা পরিশোধ করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। সে মোতাবেক রোববার গ্রামীণফোনের পক্ষ থেকে চার সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল বিটিআরসিতে গিয়ে ১ হাজার কোটি টাকার পে-অর্ডার কমিশনের চেয়ারম্যান জহুরুল হকের কাছে হস্তান্তর করে।

গ্রামীণফোনের কাছে নিরীক্ষা আপত্তির ১২ হাজার ৫৭৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে বলে গত বছর দাবি করে বিটিআরসি। একপর্যায়ে বিটিআরসির দাবি করা টাকার অঙ্ক নিয়ে আপত্তি তুলে নিম্ন আদালতে একটি টাইটেল স্যুট (স্বত্ত্বের মামলা) মামলা করে গ্রামীণফোন। ওই মামলাটি আদালত গ্রহণ করে। ওই টাইটেল স্যুটের অধীনেই গ্রামীণফোন বিটিআরসির পাওনা আদায়ের ওপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আবেদন করে, যা গত ২৮ আগস্ট নিম্ন আদালত খারিজ করে দেন। নিম্ন আদালতের খারিজ আদেশের বিরুদ্ধে পরে হাইকোর্টে আপিল করেন গ্রামীণফোন। সে আপিলটি শুনানির পর বিটিআরসির পাওনা আদায়ের ওপর দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা দেন হাইকোর্ট।

তবে, হাইকোর্টের ওই আদেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আবেদন করে বিটিআরসি। সে আবেদনের শুনানি নিয়ে গত ২৪ নভেম্বর আপিল বিভাগ ৩ মাসের মধ্যে বিটিআরসিকে ২ হাজার কোটি টাকা দিতে গ্রামীণফোনের প্রতি নির্দেশ দেন। এছাড়া সর্বোচ্চ আদালত ওইদিন তার আদেশে বলেন, ২ হাজার কোটি টাকা দেওয়ার আদেশটি বাস্তবায়ন না হলে গ্রামীণফোনের কাছে বিটিআরসির নিরীক্ষা দাবির ১২ হাজার ৫৭৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকার বিষয়ে হাইকোর্টের দেওয়া নিষেধাজ্ঞার আদেশটি বাতিল হয়ে যাবে।

এরপর বিটিআরসিকে ৩ মাসের মধ্যে ২ হাজার কোটি টাকা দেয়ার আদেশটি পুনঃবিবেচনা চেয়ে ২৬ জানুয়ারি গ্রামীণফোন আপিল বিভাগে রিভিউ আবেদন করে। গত ২০ ফেব্রুয়ারি সে রিভিউ আবেদনের শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগ ২৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বিটিআরসিকে ১ হাজার কোটি টাকা দিতে গ্রামীণফোনের প্রতি নির্দেশ দেন এবং এ বিষয়ে আদেশের জন্য ২৪ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেন।

সর্বোচ্চ আদালতের আদেশ অনুযায়ী বিটিআরসি চেয়ারম্যান জহুরুল হকের কাছে ২৩ ফেব্রুয়ারি এক হাজার কোটি টাকার পে-অর্ডার তুলে দেন গ্রামীণফোনের হেড অব রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স হোসেন সাদাত। এই পে-অর্ডার হস্তান্তরের বিষয়টি সোমবার আপিল বিভাগকে জানান গ্রামীণফোনের আইনজীবী এ এম আমিন উদ্দিন। এরপর সর্বোচ্চ আদালত আগামী তিন মাসের মধ্যে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসিকে আরও ১ হাজার কোটি টাকা দিতে গ্রামীণফোনের প্রতি নির্দেশ দেন।

গ্রামীণফোনের কাছে বিটিআরসি পাওনা বাবদ ১২ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা দাবি করলে বিরোধের সৃষ্টি হয়। গ্রামীণফোনের ওপর ১৯৯৭ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত নিরীক্ষা করে এই পাওনা নির্ধারণ করা হয়। পাওনার মধ্যে রয়েছে রাজস্বের ভাগাভাগি, কর ও অন্যান্য খাত। তবে প্রথম থেকেই গ্রামীণফোন এই দাবি নিয়ে আপত্তি জানিয়ে আসছিল।

পাওনা আদায় ও বিরোধ নিষ্পত্তির লক্ষ্যে গত অক্টোবরে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সমঝোতার উদ্যোগ নিলেও তা ব্যর্থ হয়। ওই বৈঠকে তখন কয়েকটি প্রস্তাব পেশ করা হয়। এগুলো হচ্ছে দুই পক্ষ একটি কমিটি গঠন করে পাওনা পরীক্ষা অথবা পরীক্ষার পদ্ধতি বের করা, বিটিআরসির লাইসেন্স বাতিলের কারণ দর্শানোর নোটিশ ও নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা, অপারেটরদের মামলা প্রত্যাহারের পদক্ষেপ নেয়া, কমিটির কার্যক্রম পর্যবেক্ষণে রাখা ইত্যাদি। তবে শেষ পর্যন্ত আদালতের নির্দেশ মানলো গ্রামীণফোন।
ইনিউজ ৭১/এম.আর