২০১৬ সালে ষোড়শ সংশোধনী মামলার রায়ে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সম্পর্কে বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের বিরূপ মন্তব্যের পর হাইকোর্টের এজলাসে তীব্র উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। একদল আইনজীবী বিচারপতি আশরাফুল কামালকে উদ্দেশ্য করে প্রতিবাদ জানাতে এজলাসে ঢোকেন এবং তার বিরুদ্ধে কঠোর ভাষায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এক পর্যায়ে, ঘটনাটি এমন উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যে, এক আইনজীবী বিচারপতি আশরাফুল কামালের দিকে ডিম ছুড়ে মারে, যদিও সেই ডিম বিচারপতির ডায়াসের সামনে থাকা ডেস্কে এসে পড়ে। এর পর কিছু আইনজীবী হইচই শুরু করলে, বিচারপতি আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি কাজী ওয়ালিউল ইসলাম তাদের এজলাস ছেড়ে খাস কামরায় চলে যান।
এই ঘটনা ২৭ নভেম্বর, বুধবার হাইকোর্টের বেঞ্চে ঘটেছিল, যখন বিচারকাজ চলছিল। প্রত্যক্ষদর্শী আইনজীবীরা জানিয়েছেন, দুপুরের পর এই ঘটনার সূত্রপাত হয়। আইনজীবীরা অভিযোগ করেন যে, বিচারপতি আশরাফুল কামাল ২০১৬ সালে ষোড়শ সংশোধনী মামলার রায়ে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সম্পর্কে একদম অশালীন ও বিরূপ মন্তব্য করেছেন, যার কারণে তারা তার বিচারকাজ পরিচালনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে আসেন। তাদের মধ্যে একজন বিচারপতির দিকে ডিম ছুড়ে মারলে, অন্যান্য আইনজীবীরা উত্তেজিত হয়ে ওঠেন এবং পরিস্থিতি অস্থির হয়ে পড়ে।
২০১৬ সালের রায়ে বিচারপতি আশরাফুল কামাল মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের ক্ষমতা দখল নিয়ে বেশ কঠোর মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, "মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান বাকবাকুম করে ক্ষমতা নিয়ে নিলেন এবং রাষ্ট্রপতির পদ দখল করলেন। তিনি ভাবেননি যে, তিনি একজন সরকারি কর্মচারী এবং তার শপথ ভঙ্গ করেছেন। তিনি ব্যর্থ হয়েছেন নির্বাচিত রাষ্ট্রপতিকে রক্ষা করতে, এমনকি জাতীয় চার নেতাকে রক্ষা করতে।" তিনি আরও মন্তব্য করেন, "মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের হত্যাকারীদের দোসর এবং রাষ্ট্রপতির পদ দখল করেছেন বেআইনিভাবে।"
বিচারপতি আশরাফুল কামালের পর্যবেক্ষণে তিনি মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে "ডাকাতদের মতো ক্ষমতা দখলকারী" হিসেবে চিহ্নিত করেন। রায়ে উল্লেখ করা হয়, জিয়া তার শাসনামলে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিকে পুনর্বাসন করেছিলেন, রাজাকার, আলবদর এবং জামায়াতে ইসলামী নেতাদের রাজনীতি করার অধিকার দেন, এমনকি তাদের মন্ত্রীও বানান। রায়ে আরও বলা হয়, "তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকারীদের দোসর হয়ে তাদের পুরস্কৃত করেছেন, এমনকি দায়মুক্তি আইন প্রণয়ন করে হত্যাকারীদের শাস্তি থেকে রক্ষা করেছেন।"
এই রায়ের পর, আইনজীবীরা একমত হন যে, বিচারপতির এমন মন্তব্য রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের প্রতি চরম অবমাননা এবং বিভক্তি সৃষ্টিকারী ছিল, যা তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে প্ররোচিত করেছে।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।