নওগাঁর বদলগাছীতে গভীর নলকুপ নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে কৃষক উজ্জল হোসেন হত্যা মামলায় ১০ জনের যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়েছে আদালত। এছাড়াও আসামীদের প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো দুই বছরের সশ্রম কারাদন্ড প্রদান করা হয়েছে। এসময় আসামীরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন। বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টায় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালত এর বিচারক ফেরদৌস ওয়াহিদ এ রায় প্রদান করেন।
মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ছিলেন- অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট আব্দুল বাকী এবং আসামীপক্ষের আইনজীবী ছিলেন- অ্যাডভোকেট মামুনুর রশিদ।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার সারঙ্গপাড়া মৌজায় সমবায় থেকে নিবন্ধিত গভীর নলকুপ পরিচালনা করতেন দূর্গাপুর গ্রামের নিহত কৃষক উজ্জল হোসেনের চাচা সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম। ২০১৩ সালে ৯ মে ওই নলকুপকে কেন্দ্র করে পূর্ব শত্রুতার জেরে দখলে নেওয়ার জন্য দূর্গাপুর গ্রামের কামরুজ্জামান, ওয়াহেদ আলী, সামসুজ্জামান, রকেট হোসেন, ডাবলু হোসেন, আব্দুল হামিদ, এনামুল হক, মোশারফ হোসেন, বজলুর রহমান, এমদাদুল হক, কারিমা বেগম, জলি আক্তার এবং জয়পুরহাট জেলার বাঁশকাটা গ্রামের মোছা. জীবন নেছা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা করেন। এসময় নলকূপের দরজার তালা ভেঙে তারা ঘরের ভেতরে প্রবেশ করে কৃষকদের কাছ থেকে টাকা আদায়ের রশিদ ছিড়ে ফেলে। এছাড়াও বাক্সে রাখা কৃষকদের নিকট থেকে আদায়কৃত ১৭ হাজার ৫০০ টাকা নিয়ে যায়। এসময় উজ্জল হোসেনসহ কয়েকজন বাঁধা দিলে লাঠিসোটা ও লোহার রড দিয়ে মারপিট করে আহত করে। এসময় প্রতিপক্ষরা গরম পানিতে মরিচের গুড়া মিশিয়ে কৃষক উজ্জলের শরীরে ছিটিয়ে দিলে পেটের বামপাশে ঝলসে যায়। উজ্জল গুরুত্বর আহত হলে তাকে উদ্ধার করে বদলগাছী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং পরে নওগাঁ সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। তার অবস্থার অবনতি হলে রাজশাহী মেকিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে পরদিন মারা যায় উজ্জল।
এ ঘটনায় নিহতের চাচা মাজহারুল ইসলাম বাদী হয়ে ১৩জনকে আসামী করে থানায় মামলা করে। মামলার দীর্ঘ শুনানি শেষে সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিত্বে ১০ জনের যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেয় আদালত। এছাড়াও আসামীদের প্রত্যেক ২০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো দুই বছরের সশ্রম কারাদন্ড প্রদান করে। তবে মামলায় আরো তিনজনের কোন ( মহিলা) সম্পৃক্ততা না থাকায় বেকসুর খালাস দেয় আদালত।
ন্যায় বিচারে আদালতের প্রতি সন্তুষ্ট প্রকাশ করেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আব্দুল বাকী। তিনি বলেন, দেশে যে ন্যায় বিচার আছে তা এই রায়ের াধ্যমে আবারও প্রমাণিত হয়েছে। ভবিষ্যতে যেনো কেউ এ ধরণের অপরাধ করার সাহস না পায়। বাঁদী পক্ষ ও তাদের পরিবার এ রায়ে সন্তুষ্ট।
অপরদিকে, আসামী পক্ষের আইনজীবী মামুনুর রশিদ-২ বলেন, এ মামলায় আমাদের বিপক্ষে যারা স্বাক্ষ্য প্রদান করেছেন তাদের প্রত্যেকের স্বাক্ষী হিসেবে জবানমন্দী ও জেরা এবং পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণে অবশ্যই আসামীদের বিপক্ষে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়নি। তারপরও আসামীদের যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়েছে আদালত। এতে করে আমরা ক্ষুদ্ধ, খুন্ন ও ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছি। আমরা এ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করা হবে।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।