বরিশাল নগরীর ফুটপাতেই ভোগান্তি পথচারীদের

নিজস্ব প্রতিবেদক
এইচ.এম.এ রাতুল, জেলা প্রতিনিধি, বরিশাল।
প্রকাশিত: মঙ্গলবার ২৬শে জুলাই ২০২২ ১০:৪৩ অপরাহ্ন
বরিশাল নগরীর ফুটপাতেই ভোগান্তি পথচারীদের

বরিশাল নগরীর ফুটপাত পথচারীদের নাকি হকারদের তা বোঝা মুশকিল। নগরীর প্রায় সব ব্যস্ত সড়কের ফুটপাত এখন হকারদের দখলে। অনেক ফুটপাতে যেন স্থায়ীভাবে গেড়ে বসেছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। দৈনিক মাসোহারা নিয়ে তাদের বৈধতা দিয়ে যাচ্ছেন স্থানীয় বাজার কমিটি। আর ভ্রাম্যমাণ ও অস্থায়ী হকারদের কারণে ফুটপাত ধরে হাঁটতে বেগ পেতে হয় পথচারীদের। ফুটপাতই এখন যেন পথচারীদের ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নগরবাসীর এই ভোগান্তি যেন দেখার কেউ নেই। সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা বলছেন, হকারদের পুনর্বাসন না করা গেলে তারাই বা যাবে কোথায়? তবে ভ্রাম্যমাণ হকারদের পুনর্বাসনের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।


সরজমিন নগরীর নতুনবাজার, কাটপট্টি, পোর্টরোড, লঞ্চঘাট, নথুল্লাবাদ এবং সদর রোড ঘুরে দেখা গেছে, ফুটপাতের পুরোটাই বেশিরভাগ সময় থাকে হকারদের দখলে। কিছু কিছু দোকান রাস্তার ওপরই রীতিমতো ‘স্থায়ী’ রূপ নেয়। বাহারি রকমের ফল, সবজি, কসমেটিক্স সামগ্রী, পোশাক এমন কিছু নেই যা এখানে বিক্রি হয় না। প্রায় সব এলাকাতেই সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে ফুটপাতগুলো হকার ও ব্যবসায়ীদের দখলে চলে যায়। এলাকাভেদে রাত ১০টা বা ১১টা পর্যন্ত তাদের দখলেই থাকে ফুটপাত। পথচারীরা ফেরার আগেই আবারো হকারদের দখলে চলে যায় ফুটপাত। পথচারীরা বলেন, এ দুর্ভোগ যেন শেষ হওয়ার নয়। আসলে ফুটপাত দখলমুক্ত রাখতে টেকসই কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয় না বিধায় এ ভোগান্তি চলতেই থাকে। 


সন্তান নিয়ে স্কুলগামী এক নারী বলেন, ফুটপাতে আমাদের জন্য চলাচল করা খুবই কঠিন। যেখানে সড়কে দুর্ঘটনার শিকার হতে হয়, সেখানে ফুটপাতেরও যদি এমন অবস্থা হয়, তাহলে সেটা কোনোভাবেই মানা যায় না। চলার পথে হকার-ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে ক্রেতাদের যে ভিড়, এর মাঝে চলাচল করা সত্যিই কঠিন। তিনি বলেন, ফুটপাত দখলমুক্ত করা হোক।’


নতুনবাজার এলাকায় স্কুলগামী শিক্ষার্থী রাইসা বলেন, ফুটপাত যে যার মতো করে দখল করেছে। পথচারীদের ভোগান্তি দেখার সময়


কারো নেই। ঝুঁকি নিয়েই চলতে হয়। আরেক শিক্ষার্থী মাকসুদা বলেন, ফুটপাত দিয়ে হাঁটার সময় অনেক মানুষের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। আবার কেউ কেউ ইচ্ছা করেই ধাক্কা দেয়। এতে খুবই বিব্রত হই। বিশেষ করে ফুটপাত ব্যবহারে নারী পথচারীদের বিড়ম্বনা খুব বেশি।


স্থানীয় একটি প্রাইভেট ক্লিনিকের নার্স ফাতেমা বলেন, অফিস থেকে ফেরার পথে ফুটপাত ধরে বাসায় ফিরি। কিন্তু নগরীর বেশিরভাগ এলাকার ফুটপাত ব্যবসায়ীদের দখলে। এতে করে বেশি ভোগান্তির শিকার হন পথচারীরা। বছরের পর বছর এই ভোগান্তি চললেও সিটি করপোরেশনের স্থায়ী কোনো উদ্যোগ আমরা দেখিনি।


এদিকে ফুটপাতের একাধিক হকার ও ব্যবসায়ীরা বলেন, ফুটপাতেই ব্যবসা করে সংসার চালান তারা। ফুটপাত থেকে তুলে দিলে পেটের দায়ে আবার ফুটপাতে এসে বসেন বলেও স্বীকার করেন তারা। শাকসবজি নিয়ে বসা এক হকার বলেন, নিরুপায় হয়েই ফুটপাতে ব্যবসা করি। বাজারে সীমিতসংখ্যক ব্যবসায়ীর স্থান হলেও সবার সুযোগ হয় না। তাই সরকার একটি জায়গায় ব্যবসা করার সুযোগ করে দিলে হয়তো সবাই ফুটপাতে অবস্থান নিত না।


বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রশাসনিক কর্মকর্তা বলেন, ফুটপাত দখলমুক্ত রাখতে অভিযান চালানো আমাদের রুটিনওয়ার্ক। প্রতিনিয়ত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। এছাড়া ভ্রাম্যমাণ হকারদের পুনর্বাসনের বিষয়টি সিটি করপোরেশনে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, তাদের পুনর্বাসন করা না হলে তারা কোথায় যাবে? তাদেরওতো জীবন রয়েছে।