যে গ্রামে স্কুলে যাওয়ার একমাত্র ভরসা নৌকা

নিজস্ব প্রতিবেদক
মোঃ আতিকুর রহমান আজাদ,উপজেলা প্রতিনিধি কালকিনি (মাদারীপুর)
প্রকাশিত: শনিবার ২০শে আগস্ট ২০২২ ১২:৪০ অপরাহ্ন
যে গ্রামে স্কুলে যাওয়ার একমাত্র ভরসা নৌকা

মাদারীপুরের ডাসার উপজেলার নবগ্রাম ইউনিয়নের দক্ষিন চলবল খা উচ্চ বিদ্যালয় ওদক্ষিন চলবল খা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যাতায়াতের কোনো রাস্তা না থাকায় চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী। বর্ষার মৌসুমে চলাচলের এক মাত্র ভরসা ডিঙ্গী নৌকা।


সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়,মাদারীপুর জেলার ডাসার উপজেলার নবগ্রাম ইউনিয়নের দক্ষিন চলবল খা উচ্চ বিদ্যালয়টি ১৯৯৭ সালে এলাকার জনসাধারন প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই অত্যান্ত শুনামের সাথে স্কুলটি চলিতেছে। ছাত্র/ছাত্রীদের শিক্ষার মান অত্যান্ত ভাল। বর্তমানে স্কুলটিতে প্রায় দেড় শতাধীক শিক্ষার্থী রয়েছে এবং বিদ্যালয়টি এমপিও ভুক্ত করা হয়েছ্। পাশেই রয়েছে ৩৭ নং দক্ষিন চলবল খা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং একটি হরে কৃঞ্চ পাগলের আশ্রাম। এখানেও প্রায় দেড় শতাধীক ছোট ছোট কোমলমতি শিক্ষার্থীরা পড়াশুনা করে আসছে।


স্কুল দুটি ও হরে কৃঞ্চ পাগলের আশ্রামটি মাদারীপুর ও গোপালগঞ্জ সিমান্ত এলাকায় অবস্থিত স্কুলের পড়াশুনার মান ভাল থাকায় গোপালগঞ্জ এলাকার অনেক শিক্ষার্থীরাও দক্ষিন চলবল খা উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশুনা করতে আসে,আশেপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে আশ্রামে প্রাথর্না করার জন্য অনেক ভক্তদের সমাগম ঘটে।


যাতায়াতের রাস্তা না থাকার কারনে প্রতিদিনই ছোট ডিঙ্গী নৌকা বেয়ে স্কুলে যেতে হয় শিক্ষকওশিক্ষার্থীদের। বিদ্যালয়টিতে যাতায়াতে মাঝে মধ্যেই ঘটে


দুর্ঘটনা। বর্ষা মৌসুমে ছোট ডেঙি নৌকা দিয়ে পারাপার করতে গিয়ে শিক্ষার্থীরা অনেক সময় পানিতে পড়ে গিয়ে কাপড়, বই ভিজিয়ে ফেলে। এতে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ারও শঙ্কা থাকে শিক্ষার্থীদের অভিবাবকদের। বর্ষা মৌসুম ছাড়াও বছরের অন্যান্য সময় শিক্ষার্থীরা জমির আইল দিয়ে আসতে গিয়ে ধান খেতে পড়ে বইখাতা ভিজে যাওয়ারও ঘটনাও ঘটে।


দক্ষিন চলবল খা গ্রামটিতে প্রায় পনেরো শত লোকের বসবাস। তাদের হাট বাজার সহ নিত্য প্রয়োজনীয় কাজে যেতে হলে নৌকায় চরে পাকা রাস্তায় উটতে হয়। তাই তাদের যাতায়াতের এক মাত্র মাধ্যমও ছোট ডিঙি নৌকা। অত্র বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সংগীতা বাড়ৈ,সজিব হালদার,প্রান্তি বিশ্বাস, ও প্রত্যাসা বাড়ৈ বলেন, রাস্তা না থাকায় বর্ষাকালে আমাদের নৌকায় করে স্কুলে আসতে হয়। অনেক সময় নৌকা থেকে পড়ে গিয়ে বই-খাতা সব ভিজে যায়। স্কুলের জন্য একটা রাস্তা নির্মাণ হলে আমাদের স্কুলে আসতে অনেক সুবিধা হয়।


শিক্ষার্থীদের অভিবাবক বীর মুক্তিযোদ্ধা ধীরেন্দ্র নাথ বাড়ৈ বলেন, আমরা এলাকায় যারাই বসবাস করি,তারা খুবই যাতায়াতের সমস্যায় আছি। নিন্ম এলাকা রাস্তা যাও আছে,তা সামান্য বৃস্টিতে ডুবে যায়। পরে নৌকাই আমাদের ভরসা। সব চেয়ে বেশী কষ্ট করে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। এখানে জরুরী প্রয়োজন রাস্তার।


দক্ষিন চলবল খা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিজন চন্দ্র হালদার বলেন, বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা হয়ে অদ্যাবর্তি অত্যান্ত শুনামের সাথে পাঠদান হয়ে আসছে। জেএসি ও এসএসসি পরিক্ষার ফলাফল শতভাগ পাশ।এখানে অত্যান্ত মান সম্মত শিক্ষা প্রদান করা হয়। কিন্তু দুঃখের বিষয়, যাতায়াতের রাস্তার অভাবে শিক্ষার্থীরা নিজেরাই নৌকা বেয়ে স্কুলে আসে,অনেক সময় নৌকা থেকে পরে বই খাতা ভিজে যায়। তাই নবগ্রাম মিশন বাড়ি থেকে দক্ষিন চলবল কা উচ্চ বিদ্যালয় হয়ে সাবেক ইউপি সদস্য ভরৎ সরকারের বাড়ি এবং ভক্তবাড়ির ব্রীজ থেকে মেজর জয়ধর এর বাড়ির ব্রীজ পযর্ন্ত একটি রাস্তা খুবিই প্রয়োজন। রাস্তা না থাকায় অনেক ভোগান্তি হয়। স্কুলে ছাত্র-ছাত্রীরা আসতে চায় না। অভিভাবকরা বাচ্চাদের দিতে চান না। বর্ষা মৌসুমে সমস্যা আরও বেশি হয়। ডেঙি নৌকা দিয়ে আসতে গিয়ে অনেক সময় পড়ে বইখাতা ভিজে যাওয়ারও ঘটনাও ঘটছে। বর্তমানে সব শ্রেণি মিলিয়ে স্কুলে শিক্ষার্থী রয়েছে প্রায়১৫০ জন। 


হরে কৃঞ্চ পাগলের আশ্রামের সহ-সভাপতি বলেন, প্রতিবছর আশ্রামে অনেক বড় বড় অনুষ্ঠান হয়। দুরদূরান্ত থেকে অনেক ভক্তবৃন্দ আসে। কিন্তু রাস্তা না থাকায় আসা যাওয়ার অনেক সমস্যা । আমাদের দাবি সরকার যাহাতে খুবই দ্রুত একটি রাস্তা নিমার্ন করে দেন।


এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মিন্টু লাল বালা বলেন,নবগ্রাম মিশন বাড়ি থেকে যে রাস্তাটি স্কুল পযর্ন্ত আছে,তাও ভাংগাচুরা চলাচলের উপযুগি না। এবং নিচু হওয়ায় সামান্য বর্ষায় পানিতে ডুবে যায় এবং স্কুল থেকে ভরৎ সরকারের বাড়ি পযর্ন্ত কোন রাস্তা না থাকার কারনে চরম ভোগান্তিতে শিক্ষক,শিক্ষার্থীসহ এলাকার জনসাধারন। ডিঙী নৌকায় করে স্কুলে আসতে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের। গত কিছু দিন আগে স্থানীয় এমপি ড.আবদুস সোবহান গোলাপ দক্ষিন চলবল খা স্কুল মাঠে একটি অনুষ্ঠানে গিয়ে ছিল। তখন আমরা যাতায়াতের ভোগান্তির কথা বলেছি এবং তিনি আমাদের রাস্তা নির্মান করে দেয়ার প্রতিসূর্তি দিয়েছেন।