মহাসড়ক নিরাপদ করতে এক্সপ্রেসওয়ের পর বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কে থ্রি হইলারসহ কম গতির যান চলাচল বন্ধের দাবি জানিয়েছেন পরিবহন চালক-শ্রমিকরা। পাশাপাশি মহাসড়ক ঘেঁষা হাটবাজার অপসারণেরও দাবী তাদের। ফেরীঘাটের অসহনীয় ভোগান্তি লাঘব হলেও থ্রি-হুইলার যানবাহন পরিবহন চালকদের কাছে গলার কাটা হয়ে দাড়িয়েছে। কেননা পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর বরিশাল তথা দক্ষিণাঞ্চলে পরিবহনের চাপ বেড়েছে। একদিকে সরু রাস্তা, অপরদিকে ভাঙা থেকে বরিশাল পর্যন্ত অসংখ্য স্থানে মহাসড়কের পাশে হাটবাজার রয়েছে। ৬ লেনের মহাসড়ক চালু, থ্রি-হুইলার নিষিদ্ধ এবং হাটবাজার অপসারণ করা না হলে এ অঞ্চলে দুর্ঘটনা বাড়ার আশংকা করছেন সংশ্লিষ্টরা। দক্ষ ও লাইসেন্সধারী চালক নিয়োগ এবং সচেতনতার কথা জানিয়েছেন বাস মালিক নেতৃবৃন্দ।
স্বপ্নের পদ্মাসেতু উদ্বোধনের প্রথম ও দ্বিতীয় দিনেই ঢাকা থেকে বরিশাল হয়ে কুয়াকাটা পর্যন্ত মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বেড়েছে অনেকটা। আর ভাঙ্গার পর থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত মহাসড়ক জুড়ে থ্রি হুইলার যানবাহন অবাধে চলাচল করছে। ফলে নির্বিঘেœ গাড়ি চালানো সম্ভব হয় না। এছাড়া সড়কের পাশে থাকা হাট-বাজার দোকানপাট আরও চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার অনেক জায়গায় দেখা যায় মহাসড়কের পাশ ধরেই গাছ কেটে ফেলে রেখেছেন সমিলের মালিকরা। এক কথায় ভাঙ্গা থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত মহাসড়কটি অনেকটা বিপদজনক। জানা গেছে, শুধু মহাসড়কের পাশে বাজার আর থ্রি-হুইলারের কারণে বরিশাল শহরের কাশিপুর গরিয়ারপাড়, রহমতপুর উজিরপুরের ইচলাদি, জয়শ্রী, গৌরনদীর বাটাজোর, মাহিলারা, টরকী, বার্থীসহ বেশ কিছু স্থানে বাজার এলাকা পার হতে ভোগান্তির শেষ থাকে না আমাদের। আবার বরিশাল থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত যেতে নথুল্লাবাদ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়।
ঢাকার সায়েদাবাদ থেকে বরিশালে আসা পরিবহন চালক মোখলেসুর রহমান বলেন, স্বপ্নের পদ্মাসেতু উদ্বোধনের কারণে ঢাকা-বরিশাল রুটের ফেরিযুগের অবসান ঘটলো। এখন থেকে আর কাউকে ফেরিঘাটের অসহনীয় ভোগান্তি পোহাতে হবে না এবং ফেরিতে বসে এ্যাম্বুলেন্সের মধ্যে আর কোন মৃত্যুর ঘটনাও ঘটবে না। তবে যাত্রা নিরাপদ করতে এখন শুধু প্রয়োজন ভাঙ্গা থেকে বরিশাল পর্যন্ত মহাসড়ক থেকে থ্রি-হুইলার যেমন, অটোরিক্সা, অটোভ্যান, সিএনজি, মাহিন্দ্রা, নছিমন, করিমন, টমটম,ভ্যানগাড়ী এগুলো চলাচল বন্ধ করা। আর এগুলো চলাচল বন্ধ হলে আমরা একটু নিশ্চিন্তে ও নির্বিঘেœ গাড়ি চালাতে পারবো।
ঈগল পরিবহনের চালক জাহাঙ্গীর বলেন, মহাসড়কে যত দুর্ঘটনা ঘটে তার বেশিরভাগের পেছনেই ট্রাক ও বাসের থেকে স্বল্প গতি এবং থ্রি হুইলারের কারণে ঘটে। আর থ্রি হুইলারের চালকরা তেমন একটা দক্ষও নন। খুব দ্রুত থ্রি হুইলারের সঙ্গে মহাসড়কের পাশে থাকা হাট-বাজার দোকান-পাটগুলো অপসারণ প্রয়োজন।
তিনি আরো বলেন, মহাসড়কে যারা থ্রি হুইলার চালান তাদের যে আচরণটি সব থেকে ভয়ের, সেটি হলো আকস্মিক যানবাহন ঘুরিয়ে ফেলা, সড়কের মাঝে চলে আসা নয়তো সাইড লেন থেকে আকস্মিক মহাসড়কে উঠে আসা। আর এ সময় পরিবহন চালকরা আকস্মিক ব্রেক দিলে গতিতে থাকা গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। একইভাবে বাজার এলাকায় মানুষজন আপনমনে রাস্তা পার হন, এখনকার বাসগুলোতে শব্দ না থাকায় কেউ যদি রাস্তা পার হতে ডানে-বামে না তাকান তাহলেই বিপদ। আর বাজার এলাকায় যে যার মতো রাস্তা পার হওয়ার কারণে দুর্ঘটনাও ঘটছে প্রায়ই।
বরিশাল জেলা বাস মালিক গ্রুপের দপ্তর সম্পাদক অমল চন্দ্র দাস বলেন, নছিমন, করিমনসহ মহাসড়কে আতঙ্কের নামই হচ্ছে থ্রি-হুইলারগুলো। এগুলো চলাচল বন্ধ না হলে দুর্ঘটনা বাড়বে। আর এখন তো বরিশাল-ঢাকা রুটে উচ্চ গতি সম্পন্ন বিলাসবহুল গাড়ির সংখ্যা বেড়েছে, এর সংখ্যা আরও বাড়বে। তাই এখন সময় এগুলো মহাসড়ক দিয়ে উঠিয়ে দেওয়ার। তবে পদ্মা সেতু চালুর পর এখনও তেমন কোন কার্যকর কোনো পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছেনা।
এদিকে মহাসড়কে যানবাহন চালনার ক্ষেত্রে দক্ষ চালক নিয়োগের কথা বলছেন যাত্রীরা। এ বিষয়ে বরিশাল জেলা বাস মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক কিশোর কুমার দে বলেন, পদ্মা সেতু চালুর আগেই দূরপাল্লার রুটের বাস মালিকদের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি, যেন এই রুটে দক্ষ ও লাইসেন্সধারী চালক নিয়োগ করা জন্য। কেন না নতুন বাস নিয়ে যেসব চালকরা বরিশালে বা বরিশাল থেকে যাত্রী পরিবহন করবেন তারা সকলে এই রুটেও নতুন। সেতু চালুর পর সচেতনতা আর নির্ধারিত সময়ের বেশি যাতে বাস ড্রাইভিং না করে সেই বিষয়ে কড়া বার্তা দেওয়া হয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।