চীনের জিনজিয়ান প্রদেশে সংখ্যালঘু উইঘুরদের নির্যাতনের জন্য বরাবরই অভিযুক্ত চীনা কমিউনিস্ট সরকার। এখন চীনা প্রশাসনের বিরুদ্ধে দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য জিনজিয়ানে মসজিদের জায়গায় গণশৌচাগার তৈরির অভিযোগ উঠেছে। নির্যাতনের পুরানো অভিযোগ আর মসজিদের জায়গায় গণশৌচাগার নির্মাণকে দেশটির চীনা সরকারের উইঘুর জাতিগোষ্ঠী নিশ্চিহ্নের পরিকল্পনার আরেকটি প্রমাণ বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।
২০১৬ সালে মসজিদ সংস্কারের নামে মুসলমানদের গণজমায়েতে নামাজ পড়ার স্থানগুলো গুড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনা হাতে নেয় বেইজিং। ‘তোকুল’ মসজিদের জায়গায় শৌচাগার নির্মাণের কয়েকদিন আগে ওই শহরে থাকা তিনটি মসজিদের মধ্যে দুটি মসজিদ গুঁড়িয়ে দেয়া হয়। মুসলমানদের ধর্মীয় বিশ্বাসে আঘাত করার জন্য এসব করা হয়েছে বলে এক প্রতিবেদনে দাবি করেছে রেডিও ফ্রি এশিয়া।
রেডিও ফ্রি এশিয়াকে দেয়া সাক্ষাতকারে আতুশ শহরের সুনতাঘ গ্রামের নেইবারহুড কমিটির প্রধান বলেন, ২০১৮ সালে তোকুল মসজিদ গুড়িয়ে দেয়া হয়। পরে এখানে ওয়াশরুম, গেস্টরুম এবং শৌচারগার তৈরি করে উইঘুরবিরোধী হান গোষ্ঠীর নেতারা।চীনা সরকারের ভয়ে নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি রেডিও ফ্রি এশিয়াকে সাক্ষতকার দেয়া উইঘুর সম্প্রদায়ের ওই ব্যক্তি। তিনি বলেন, এখন এটি একটি গণশৌচাগার। তবে উদ্বোধন করা হয়নি। নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে।
তিনি বলেন, এ এলাকায় গণশৌচাগার তৈরির কোনো প্রয়োজন ছিল না। স্থানীয় প্রতিটি বাড়িতে টয়লেট আছে। সুনতাঘেও খুব একটা পর্যটক আসে না; যাদের জন্য গণশৌচাগার বানাতে হবে। তোকুল মসজিদের স্মৃতি মুছে ফেলার জন্য শৌচাগার বানানো হয়েছে। যাতে এখানে হাতেগোনা যে কয়জন পর্যটন আসেন, তারা যেনো মসজিদের বিষয়টি জানতে না পারেন।
উইঘুরসহ অন্যান্য সংখ্যালঘু মুসলমানদের রীতিনীতি, ধর্মীয় চর্চা, অভ্যাস সমূলে পরিবর্তনে অব্যাহতভাবে কঠোর নীতি গ্রহণ করছেন চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। মুসলমানদের কমিউনিস্ট শিক্ষায় দীক্ষা দেয়ার জন্য তৈরি করা হয় গণকারাগার। মুসলিম শিশুদের তাদের পরিবার থেকে আলাদা করা রাখা হচ্ছে। স্বামী-স্ত্রীকে একজনের কাছ থেকে অন্যকে দূরে থাকতে বাধ্য করা হচ্ছে।
উইঘুর নারীদের জোরপূর্বক বন্ধ্যা করে দেয়াসহ নানা নির্মম নির্যাতন চলছে উইঘুর মুসলমানদের উপর। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করে গণকারাগারকে সংশোধনাগার এবং নির্যাতনের অভিযোগকে উদ্দেশ্য প্রণোদিত আখ্যা দিয়েছে চীন সরকার।
রেডিও ফ্রি এশিয়ার প্রতিবদেনে স্থানীয়দের বরাতে বলা হয়, ২০১৯ সালে সুনতাঘের আরেকটি মসজিদ গুঁড়িয়ে দেয়া হয়। সেখানে একটি পানশালা তৈরি করা হয়েছে। যেখানে বর্তমানে মদ, সিগারেট বিক্রি করা হচ্ছে। যেগুলো পান এবং গ্রহণ ইসলাম ধর্মে নিষিদ্ধ।
২০১৬ সালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, জিনজিয়ানের উইঘুরের হোতানের লোপ কাউন্টির একটি মসজিদ গুড়িয়ে দেয় কর্তৃপক্ষ। পরে সেখানে ব্যায়ামগার এবং বিনোদন কেন্দ্র তৈরি করা হয়েছে।হোতান শহরের ইলছি এলাকার বাসিন্দারা রেডিও ফ্রি এশিয়াকে জানায়, তাদের এলাকার একটি মসজিদকে ফ্যাক্টরি বানানো হয়েছে। এখন সেখানে স্থানীয় সিচুয়ান ভিত্তিক কোম্পানি আন্ডারওয়ার তৈরি করছে।জিনজিয়ানে মুসলমানদের মসজিদ ছাড়াও কবরস্থানকে চীনা কর্তৃপক্ষ পদ্ধতিগতভাবে গুঁড়িয়ে দিচ্ছে। ২০১৬ সাল থেকে ন্যাক্কারজনক এ প্রক্রিয়া জোরদার করে চীন সরকার।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।