প্রাণসংহারি ভাইরাস করোনা বিশ্ব অর্থনীতিকে ভয়াবহ যে মন্দার মুখে ফেলে দিয়েছে তা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আর কখনোই ঘটেনি বলে জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক। মারাত্মক এ সংকটের কারণে চলতি বছরে বিশ্ব অর্থনীতি ৫ দশমিক ২ শতাংশ সংকুচিত হবে বলে জানানো হয়ে।বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস অনুসারে, করোনা মহামারির কারণে এ বছর বিশ্ব অর্থনীতি ৫ দশমিক ২ হারে সংকুচিত হবে। বিশ্বের বড় অংশের অর্থনীতিতে মাথা পিছু আয়ে যে হ্রাস দেখা দেবে তা ১৮৭০ সালের পর সর্বোচ্চ হবে। এর ফলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর প্রথম মহামন্দা দেখা দেবে।
বিশ্ব অর্থনীতির হালনাগাদ পরিস্থিতি নিয়ে মঙ্গলবার প্রকাশিত আন্তর্জাতিক ঋণদাতা সংস্থাটির অর্ধবার্ষিক প্রতিবেদন ‘ওয়ার্ল্ড ইকনোমিক আউটলুকের’ জুন সংখ্যায় এ পূর্বাভাস তুলে ধরা হয়। পরে বিশ্বব্যাংকের প্রধান কার্যালয় ওয়াশিংটন ডিসি থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিশ্ব ব্যাংক আরও জানায়, বৈশ্বিক অর্থনীতি এখন সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক মন্দায় পড়েছে। সব অঞ্চলে মাথাপিছু আয় কমার পাশাপাশি বাড়ছে বেকারত্বের হাহাকার। চলতি ২০২০ সালে বিশ্বের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ৩ শতাংশ সংকুচিত হবে। তবে পরের বছরেই অর্থাৎ ২০২১ সালেই বৈশ্বিক জিডিপি ঘুরে দাঁড়াবে। তখন জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার হবে ৫ দশমিক ৯ শতাংশ।
আন্তর্জাতিক ঋণদাতা সংস্থাটির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ‘দেশীয় চাহিদা এবং সরবরাহ, বাণিজ্য এবং আর্থিক কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হওয়ায় ২০২০ সালে বিশ্বে উন্নত অর্থনীতির দেশগুলোর অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ৭ শতাংশ হ্রাস পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এছাড়া উদীয়মান বাজার এবং উন্নয়নশীল অর্থনীতির (ইএমডিই) দেশগুলোর অর্থনীতি এই বছর ২ দশমিক ৫ শতাংশ সংকুচিত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। একসঙ্গে এই দলভূক্ত দেশগুলোর হিসেবে কমপক্ষে বিগত ষাট বছরে প্রথম কোনো সংকোচনের ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে’ বলে প্রতিবেদনে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ‘চলতি বছর মাথাপিছু আয় ৩ দশমিক ৬ শতাংশ হ্রাস পাবে, যা এই বছর লক্ষ লক্ষ মানুষকে চরম দারিদ্র্যের দিকে ঠেলে দেবে।’বিশ্ব ব্যাংকের সংজ্ঞা অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি যদি দিনে ১ দশমিক ৯০ ডলার বা ১৬১ টাকার চেয়ে কম অর্থে জীবন যাপন করেন তবে তা চরম দারিদ্র্যসীমার নিচে।গ্লোবাল ইকোনমিক প্রসপেক্টাস ২০২০ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ‘এই মহামারি সবচেয়ে বেশি আঘাত হেনেছে সেসব দেশের অর্থনীতিতে যেখানে ভাইরাসটির সংক্রমণ সবচেয়ে মারাত্মক এবং যেসব দেশ বিশ্ব বাণিজ্য, পর্যটন, পণ্য রপ্তানি এবং বাহ্যিক অর্থায়নের ওপর অতিরিক্ত মাত্রায় নির্ভরশীল।’
চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ১ দশমিক ৬ শতাংশে নেমে আসতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। এ ছাড়া আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি আরও কমে ১ শতাংশে আসতে পারে বলে মনে করছে বিশ্বব্যাংক। দক্ষিণ এশিয়ায় করোনা পরিস্থিতি প্রকট হলে দারিদ্র্য আরও বাড়বে বলে মনে করে আন্তর্জাতিক ঋণদাতা সংস্থাটি।
বিশ্বব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট সায়লা পাজারবাসিয়োগলু বলেন, কোভিড-১৯ গভীরভাবে বিশ্বকে সংকটে ফেলে দিয়েছে। বিশ্বব্যাপী বড় ধরনের ঝুঁকি রয়েছে। আমাদের ব্যবসার প্রথম আদেশ হলো বিশ্ব স্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক জরুরিভাবে সমাধান করা। এর বাইরে আরও বেশি মানুষ দারিদ্র্য ও বেকারত্বের কবলে পড়বে।