প্রকাশ: ২১ জুন ২০২৫, ১১:২১
ইসরাইল-ইরান চলমান উত্তেজনার মধ্যে ইরান গত ৬০ ঘণ্টা ধরে বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেট অ্যাক্সেস থেকে বিচ্ছিন্ন রয়েছে বলে জানিয়েছে ইন্টারনেট পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা নেটব্লকস। সংস্থাটির মতে, এ সময়ে ইরানের নাগরিকরা রাজনৈতিক মতামত প্রকাশ, অবাধ যোগাযোগ এবং নিরাপত্তা নির্দেশনা অনুসরণে মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হয়েছেন। ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ থাকায় দেশে কার্যত এক ধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি হয়েছে।
নেটব্লকসের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, এই ইন্টারনেট বিচ্ছিন্নতা কোনো সাধারণ প্রযুক্তিগত ত্রুটি নয়, বরং এটি একটি পরিকল্পিত ও সম্পূর্ণ জাতীয় পর্যায়ের ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউট। সরকার পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, ইসরাইলি সাইবার হামলা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তবে সাধারণ মানুষের জীবনে এর প্রভাব অত্যন্ত নেতিবাচক ও অস্থিরতা সৃষ্টিকারী হিসেবে দেখা দিয়েছে।
গত ১৯ জুন টাইমস অব ইসরাইলের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছিল, ইরান ইতোমধ্যে ১২ ঘণ্টারও বেশি সময় ইন্টারনেট বিচ্ছিন্ন ছিল এবং সেই বিচ্ছিন্নতা ধীরে ধীরে আরও দীর্ঘায়িত হয়ে ৬০ ঘণ্টায় পৌঁছেছে। পরিস্থিতি ক্রমাগত অবনতির দিকে যাচ্ছে, আর ইরান সরকার তথ্যপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণে রাখতেই এ পদক্ষেপে অটল রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এই সময়ে ইরান-ইসরাইল সংঘর্ষও নতুন মাত্রা পেয়েছে। গত ১৩ জুন থেকে ইসরাইল ইরানের বিভিন্ন স্থাপনা, বিশেষ করে পারমাণবিক ইনস্টলেশনের ওপর আঘাত হানছে। জবাবে ইরানও ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ইসরাইলের অভ্যন্তরে পাল্টা আঘাত চালাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে ইরানে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও জনমত নিয়ন্ত্রণে রাখতে ইন্টারনেট বন্ধ রাখার কৌশল হিসেবে দেখা হচ্ছে।
তবে আন্তর্জাতিক মহল ইরানের এই পদক্ষেপকে নাগরিক অধিকার লঙ্ঘনের দৃষ্টিতে দেখছে। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন ইতিমধ্যে ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউটের নিন্দা জানিয়ে এটিকে স্বাধীন মতপ্রকাশের ওপর হস্তক্ষেপ বলে আখ্যা দিয়েছে।
ইরানের অনেক নাগরিক সামাজিক মাধ্যমে জানান, তারা VPN-সহ বিকল্প উপায়ে যোগাযোগের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হচ্ছেন। এতে দেশের ভিতরে ও বাইরে থাকা পরিবারের সদস্যদের মধ্যে তথ্য আদান-প্রদান মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, দীর্ঘমেয়াদী ইন্টারনেট অবরোধ দেশের অর্থনীতি, শিক্ষা ও গণমাধ্যম কার্যক্রমে মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। রাজনৈতিক সংকটের পাশাপাশি এ ধরনের প্রযুক্তিগত বিচ্ছিন্নতা জাতীয় স্থিতিশীলতার ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হবে সে বিষয়ে ইরান সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য জানানো হয়নি। তবে সংঘাত যত দিন গড়াবে, ততদিন এই ব্ল্যাকআউট অব্যাহত থাকতে পারে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।