প্রকাশ: ১৬ জুন ২০২৫, ১৮:০
মধ্যপ্রাচ্যের বর্তমান উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে ইরান জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পরমাণু বিষয়ক আলোচনা অব্যাহত রাখতে হলে প্রথমেই ওয়াশিংটনকে ইসরাইলি হামলার বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে হবে। ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাঘাই এক বিবৃতিতে জানান, রোববার যে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল, তা বাতিল করা হয়েছে এবং ইসরাইলের হামলার প্রেক্ষাপটে এই মুহূর্তে আলোচনার কোনো যৌক্তিকতা নেই। ইরান মনে করছে, ইসরাইলের সাম্প্রতিক হামলার পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ ভূমিকা রয়েছে, যা তাদেরকে আলোচনায় অবিশ্বাসী করে তুলেছে।
বাঘাই বলেন, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি সব সময় শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে পরিচালিত হয়েছে, অথচ ইসরাইল বরাবরই এ দাবিকে অস্বীকার করে আসছে। পার্লামেন্ট যদি পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি (এনপিটি) থেকে নিজেদের প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয়, তবে তা ‘অবশ্যই’ কার্যকর করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
এই বক্তব্যের মধ্যেই ইসরাইলের তেল আবিব ও হাইফা শহরে ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় অন্তত ৮ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ইরান দাবি করেছে, এটি ছিল তাদের প্রতিরোধের অংশ এবং প্রয়োজনে আরও কড়া জবাব দেওয়া হবে।
এর আগে ইসরাইল তেহরানে বিমান হামলা চালায়, যার ফলে ইরানের বিভিন্ন শহরে বিস্ফোরণের শব্দ ও ধোঁয়ার কুণ্ডলী দেখা যায়। এসব হামলায় ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (IRGC) গোয়েন্দা প্রধানসহ আরও দুই জেনারেল নিহত হয়েছেন। এ ঘটনাকে সামরিক বাহিনীর জন্য বড় ক্ষতি হিসেবে দেখছে দেশটির নেতৃত্ব।
ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে জানানো হয়েছে, ইসরাইলি হামলায় ইরানে ২২০ জন প্রাণ হারিয়েছেন, যাদের মধ্যে ৭০ জনই নারী ও শিশু। এই ঘটনা সারা দেশে শোক ও ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে।
ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তাদের প্রতিরক্ষা বাহিনী সর্বাত্মক জবাবের জন্য প্রস্তুত এবং আক্রমণের উপযুক্ত জবাব খুব দ্রুতই দেওয়া হবে। তারা এই হামলাকে দেশের সার্বভৌমত্বে সরাসরি হস্তক্ষেপ হিসেবে দেখছে।
অন্যদিকে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তারা ইরানের পারমাণবিক এবং সামরিক স্থাপনাগুলোকে লক্ষ্য করেই হামলা চালিয়েছে এবং এই অভিযান আরও চলবে। দুই দেশের পাল্টাপাল্টি হামলায় মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে যুদ্ধের আশঙ্কা বেড়েই চলেছে।
এই পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অবিলম্বে কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে এই উত্তেজনা প্রশমিত না হলে তা বড় ধরনের যুদ্ধের দিকে গড়াতে পারে।