প্রকাশ: ১৩ জুন ২০২৫, ২১:৫৭
ইরানের রাজধানী তেহরানসহ বিভিন্ন সামরিক ঘাঁটি, পরমাণু গবেষণা কেন্দ্র ও আবাসিক এলাকায় ইসরায়েলের চালানো হামলায় অন্তত ৭০ জনের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে এবং আহত হয়েছে তিন শতাধিক। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে ইসরায়েল ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ নামে এই সামরিক অভিযান শুরু করে, যা দেশের ভেতরে পাঁচটি ভিন্ন স্থানে সংঘটিত হয়। এ হামলার লক্ষ্য ছিল মূলত ইরানের সামরিক ও কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো।
ফার্স নিউজ এজেন্সির বরাতে ইরানের আধা-সরকারি গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, তেহরানের পাশাপাশি হামলার শিকার হয়েছে পরমাণু গবেষণাগার, সামরিক কমান্ড সেন্টার এবং ঘনবসতিপূর্ণ কিছু আবাসিক এলাকা। ভয়াবহ এই হামলায় হতাহতের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে, যা ইরানজুড়ে গভীর উদ্বেগ ও শোকের সৃষ্টি করেছে।
হামলায় নিহতদের মধ্যে রয়েছেন ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান মোহাম্মদ বাঘেরি, আইআরজিসি প্রধান হোসেইন সালামি, খাতাম আল-আনবিয়া সদরদপ্তরের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা গোলাম আলি রশিদসহ একাধিক সামরিক শীর্ষ কর্মকর্তা। এ ছাড়াও প্রাণ হারিয়েছেন দেশটির ছয়জন পরমাণু বিজ্ঞানী, যাদের মধ্যে রয়েছে ফেরেয়দুন আব্বাসি, মোহাম্মদ মাহদি তেহরানচি ও আমিরহোসেইন ফেকহির মতো গুরুত্বপূর্ণ নাম।
ইসরায়েলি এই আক্রমণ ইরান সরকারের জন্য চরম নিরাপত্তা ও অস্তিত্ব সংকট তৈরি করেছে বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা। দেশটির শীর্ষ নেতৃবৃন্দ একে যুদ্ধ ঘোষণা বলে আখ্যা দিয়েছেন এবং প্রতিশোধের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি এই হামলাকে বর্বরতা ও রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, ইহুদিবাদী সরকার আবাসিক এলাকায় হামলা চালিয়ে তাদের কলঙ্কিত হাত আরও রক্তাক্ত করেছে এবং এই হামলার জন্য তাদের কঠিন মূল্য দিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, এই হামলার মাধ্যমে ইসরায়েল নিজেই এক তিক্ত ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা এই অপরাধের উপযুক্ত জবাব দেব এবং তা হবে দৃঢ় ও নির্দয়।
এই হামলার পর মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা তুঙ্গে পৌঁছেছে। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা আশঙ্কা করছেন, ইরান-ইসরায়েল সংঘাত এবার সরাসরি যুদ্ধে রূপ নিতে পারে। ফলে পুরো অঞ্চলজুড়ে নিরাপত্তা সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
এদিকে ইসরায়েল সরকার তাদের অভিযানের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানায়নি, তবে দেশটির সামরিক সূত্র জানিয়েছে, এটি ছিল একটি ‘প্রতিরক্ষামূলক পদক্ষেপ’, যা তারা প্রয়োজনে আবারও চালাতে প্রস্তুত।