প্রকাশ: ৭ মে ২০২৫, ১০:৩২
কাশ্মীরে নিহত ২৬ জনের ঘটনায় জঙ্গি সংগঠনের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক হামলার সিদ্ধান্ত নেয় ভারত। এই সিদ্ধান্তের ফলেই মঙ্গলবার দিবাগত রাতে পাকিস্তান ও আজাদ কাশ্মীরের নয়টি স্থাপনার ওপর চালানো হয় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, যেটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘অপারেশন সিন্দুর’। এই অভিযানের পরপরই আন্তর্জাতিক মহলে শুরু হয়েছে নানা প্রতিক্রিয়া, যার মধ্যে ইসরাইল ও তুরস্কের অবস্থান ছিল সম্পূর্ণ বিপরীত।
ভারতে নিযুক্ত ইসরাইলি রাষ্ট্রদূত রেউভেন আজার এক্স-এ এক বার্তায় জানান, সন্ত্রাসীদের কোনো নিরাপদ আশ্রয় থাকা উচিত নয় এবং ইসরাইল ভারতের আত্মরক্ষার অধিকারকে পূর্ণ সমর্থন জানায়। এই বিবৃতির মাধ্যমে ইসরাইল স্পষ্টভাবে ভারতের এই পদক্ষেপকে সমর্থন করে, যা দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
অন্যদিকে, পাকিস্তানের পাশে দাঁড়িয়েছে তুরস্ক। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান ফোনে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইশাক দারকে জানিয়েছেন, ভারতের এই হামলা একতরফা ও অপ্রস্তুত আগ্রাসন হিসেবে বিবেচিত। তুরস্কের এই অবস্থান পাকিস্তানকে কৌশলগত সমর্থন জোগাবে বলে মনে করা হচ্ছে।
ভারতের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই হামলা ছিল সম্পূর্ণ সুনির্দিষ্ট ও সীমিত পরিসরের, শুধুমাত্র জঙ্গি ঘাঁটিগুলোকেই লক্ষ্য করা হয়েছে এবং এটি কোনও সামরিক স্থাপনায় আঘাত নয়। দেশটির গোয়েন্দা সূত্র বলছে, পহেলগাঁও হামলার পেছনে জড়িত গোষ্ঠীগুলোর অবস্থান নিশ্চিত করেই অভিযান চালানো হয়।
তবে এই অভিযানে প্রধানমন্ত্রী মোদির ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। বিরোধী দল কংগ্রেস দাবি করেছে, মোদি আগেই গোয়েন্দা প্রতিবেদন পেয়েছিলেন, অথচ কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেননি, যার ফলে প্রাণ হারাতে হয় ২৬ জনকে। এটি নিয়ে অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও বিতর্ক তৈরি হয়েছে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়ার অংশ হিসেবে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এই হামলা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি ভারত ও পাকিস্তান উভয়পক্ষকেই সামরিক সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছেন এবং যুদ্ধ পরিস্থিতি এড়াতে আলোচনার পথে ফিরে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
এই বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, "এটি লজ্জাজনক ও হতাশাজনক। বহু যুগ ধরে দুই দেশ সংঘাতে জড়িয়ে আছে, কিন্তু এই উত্তেজনা যেন দ্রুত শেষ হয়, সেটিই আমাদের প্রত্যাশা।" ট্রাম্পের এই মন্তব্যও আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে বিশেষভাবে আলোচিত হচ্ছে।
অপারেশন সিন্দুরের মাধ্যমে ভারত যে কড়া বার্তা দিতে চেয়েছে, তা আন্তর্জাতিক মঞ্চে প্রতিফলিত হলেও তার বিপরীতে যে সমান শক্তির কূটনৈতিক প্রতিক্রিয়া আসছে, তাতে পরিস্থিতি যে জটিল হয়ে উঠছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এখন দেখার বিষয়, এই হামলা দ্বিপাক্ষিক উত্তেজনাকে কোথায় নিয়ে যায় এবং আন্তর্জাতিক মহল কীভাবে ভারসাম্য বজায় রাখে।