দুই দশকেরও বেশি সময়ের নিষেধাজ্ঞার অবসান ঘটিয়ে তালেবানকে সন্ত্রাসী সংগঠনের তালিকা থেকে বাদ দিয়ে নজিরবিহীন সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাশিয়া। বৃহস্পতিবার রুশ সুপ্রিম কোর্টের এক রায়ে এই সিদ্ধান্ত ঘোষিত হয় এবং রায়টি কার্যকর হয়েছে তাৎক্ষণিকভাবে। এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে আফগানিস্তানের তালেবান সরকারের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্কের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হলো।
এখনও পর্যন্ত কোনো দেশ তালেবান সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি না দিলেও রাশিয়া ধীরে ধীরে তাদের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নে আগ্রহ দেখিয়ে আসছে। এই সিদ্ধান্ত সেই আগ্রহেরই ধারাবাহিকতা। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এর আগেও মন্তব্য করেছিলেন যে, তালেবান বর্তমানে সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে রাশিয়ার এক ধরনের মিত্র হিসেবে কাজ করছে।
আফগানিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, এই সিদ্ধান্তকে রাশিয়া ও আফগানিস্তানের সম্পর্কের একটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হিসেবে দেখা হচ্ছে। এদিকে কাবুলে নিযুক্ত রুশ রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠকে আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি জানান, এই সিদ্ধান্তের ফলে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার পথে থাকা বড় বাধাগুলোর একটি দূর হলো।
উল্লেখ্য, ২০০৩ সালে তালেবানকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছিল রাশিয়া। তবে সাম্প্রতিক সময়ে ইসলামিক স্টেট (আইএস) সহ বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের হুমকি মোকাবিলায় তালেবানকে একটি কার্যকর শক্তি হিসেবে বিবেচনা করছে মস্কো। মার্চ মাসে মস্কোর বাইরের একটি কনসার্ট হলে আইএসের হামলায় ১৪৫ জন নিহত হওয়ার পর নিরাপত্তা পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে।
এই হামলার পেছনে আইএসের আফগান শাখা আইএসআইএসকে দায়ী করেছে রুশ গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। এরই পরিপ্রেক্ষিতে তালেবান দাবি করে, তারা আফগানিস্তানে আইএস নির্মূলের কাজ করে যাচ্ছে। তবে পশ্চিমা দেশগুলো এখনও তালেবান সরকারের নারী অধিকার লঙ্ঘনের কারণে তাদের স্বীকৃতি দিতে নারাজ।
তালেবান সরকার নারীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাওয়া নিষিদ্ধ করেছে এবং পুরুষ অভিভাবক ছাড়া নারীদের চলাফেরার ওপর কড়াকড়ি আরোপ করেছে। এই পরিস্থিতিতে রাশিয়ার সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে নতুন আলোচনা তৈরি করেছে।