ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিতে হামলা চালানোর ইসরাইলের গোপন পরিকল্পনা ফাঁস করেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রভাবশালী দৈনিক দ্য নিউইয়র্ক টাইমস। ফাঁস হওয়া এই সংবেদনশীল তথ্যকে ইসরাইলের ইতিহাসের অন্যতম বিপজ্জনক পরিকল্পনা ফাঁস হিসেবে বর্ণনা করেছেন এক শীর্ষস্থানীয় ইসরাইলি কর্মকর্তা, যা দেশটির নিরাপত্তা এবং কূটনৈতিক অবস্থানকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে।
প্রকাশিত প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ইসরাইল সরাসরি মার্কিন সহায়তায় তেহরানের পারমাণবিক স্থাপনায় আঘাত হানার পরিকল্পনা করেছিল। ২০২৩ সালের ১ অক্টোবর ইসরাইলে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর থেকেই এই পরিকল্পনার বিবেচনা শুরু হয়। ইসরাইলি সামরিক বাহিনী এবং গোয়েন্দা মহল এমন একটি অভিযানের সম্ভাব্যতা ও বাস্তবায়নের বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী ছিল বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
তবে এসব হামলার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য ইসরাইল যুক্তরাষ্ট্রের সম্মতির অপেক্ষায় ছিল। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন প্রশাসনের কয়েকজন সদস্য যৌথ হামলার বিরোধিতা করেন এবং কূটনৈতিক চুক্তির ওপর জোর দেন। ইসরাইল চেয়েছিল ট্রাম্পের পুনরায় ক্ষমতায় ফিরে আসার পর হামলার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করতে।
ফাঁস হওয়া তথ্য নিয়ে ইসরাইলের অভ্যন্তরে শুরু হয়েছে তীব্র রাজনৈতিক বিতর্ক। অনেক রাজনীতিবিদ অভিযোগ করেছেন, প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু নিজেই এই তথ্য ফাঁস করেছেন যাতে করে ইরান-বিরোধী কঠোর অবস্থান না নেওয়ার সমালোচনা থেকে নিজেকে রক্ষা করা যায়। সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী আভিগডোর লিবারম্যান সরাসরি নেতানিয়াহুকে দায়ী করে সামাজিক মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন অনুসারে, সম্ভাব্য হামলার ছকে ছিল বিশাল বিমান হামলা বা কমান্ডো অভিযানের মাধ্যমে ইরানকে চমকে দেওয়া। এমনকি ইরাকে বা সিরিয়ায় অতীতে যেভাবে গোপন অভিযানে স্থাপনা ধ্বংস করা হয়েছিল, ঠিক তেমনি কিছু পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা চলছিল।
এদিকে, ইসরাইল সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া না এলেও নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, এমন পরিকল্পনা ফাঁস হওয়া শুধু কূটনৈতিক নয়, সামরিক দৃষ্টিকোণ থেকেও একটি বড় ধাক্কা। তাদের মতে, এটি ইরানকে আগাম সতর্কতা দিয়ে দেওয়ার সমান।
সাম্প্রতিক এই তথ্য ফাঁসের পর মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক উত্তেজনা আরও বেড়েছে। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, এটি শুধু ইসরাইল-ইরান নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্যনীতি এবং সামরিক কৌশলেও নতুন করে প্রশ্ন তুলছে।