বাজারে ভোজ্যতেলের সংকট কাটছে না। খুচরা ও পাইকারি বাজারে চাহিদার তুলনায় অর্ধেকেরও কম সরবরাহ মিলছে। বিশেষ করে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। ফলে ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী তেল পাওয়া যাচ্ছে না। দাম বাড়ানোর পরও মিল মালিকরা সরবরাহ কমিয়ে রেখেছেন, যা আসন্ন রমজানে বড় সংকট তৈরি করতে পারে।
খাতুনগঞ্জ-চাক্তাইয়ের পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, সরবরাহ কম থাকায় এক ও দুই লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেল প্রায় উধাও হয়ে গেছে। বাজারে ১০০ লিটার চাহিদার বিপরীতে মাত্র ৩০-৪০ লিটার তেল মিলছে। ব্যবসায়ীদের দাবি, মিল মালিকরা সংকট সৃষ্টি করে দাম বাড়ানোর কৌশল নিয়েছেন। আন্তর্জাতিক বাজারের অজুহাত দেখিয়ে দেশে ভোজ্যতেলের দাম নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে।
ডিসেম্বরের মাঝামাঝি লিটারপ্রতি ৮ টাকা বাড়ানোর পর বোতলজাত সয়াবিন তেল এখন ১৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খোলা সয়াবিনের দাম ১৪৯ থেকে বেড়ে ১৫৭ টাকা, পাম তেলের দামও একই হারে বেড়েছে। বোতলজাত পাঁচ লিটার তেল ৮৬০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা আগে ছিল ৮১৮ টাকা।
অপরদিকে বাজারে মাছ ও মাংসের দামও ঊর্ধ্বমুখী। লটে মাছ ২০০-২১০ টাকা, রূপচাঁদা ৫০০-৮০০, ছোট ইলিশ ৭০০, পাবদা ৩৫০-৪০০, মাঝারি ইলিশ ১৫০০-১৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিপ্রতি ১৮০-১৯০, সোনালি মুরগি ৩৩০-৩৫০, দেশি মুরগি ৫৪০-৫৮০ এবং লেয়ার মুরগি ২৯০-৩০০ টাকায় পৌঁছেছে। গরুর মাংস ৭৫০-৯৫০, খাসির মাংস ১০০০-১১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
তবে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে সবজির বাজারে। আলু ২২-২৫ টাকায়, কাঁচামরিচ ৩০-৩৫, বেগুন ২০-৩০, টমেটো ১৫-৪০, শসা ৩০, গাজর ৪০, বরবটি ৫০ এবং লাউ ৩৫-৪০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। বিভিন্ন ধরনের শাক ১০-২০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে, যা কিছুদিন আগেও অনেক বেশি ছিল।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়ার অজুহাতে গত ৬ জানুয়ারি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব দেয় ব্যবসায়ীরা। পরে সেই প্রস্তাব প্রত্যাহার করা হলেও মিল মালিকরা সরবরাহ স্বাভাবিক করেননি। ফলে বাজারে কৃত্রিম সংকটের কারণে দাম কমছে না। ডলার সংকটের প্রভাবও পড়েছে, আমদানিকারকরা আগের মতো তেল আমদানি করতে পারছেন না। ইন্দোনেশিয়ায় উৎপাদন কমে যাওয়া এবং বায়োডিজেলে ব্যবহারের পরিমাণ বাড়ায় আন্তর্জাতিক বাজারে পাম অয়েলের দাম রেকর্ড ছুঁয়েছে, যা দেশের বাজারেও প্রভাব ফেলছে।
চট্টগ্রামে এভাবে সংকট চলতে থাকলে রমজান মাসে তেলের দাম আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারকে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।