দেশে ৬৮ ভাগ চালকের শ্রবণ সমস্যা: শব্দদূষণে শীর্ষে ঢাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক
সামির আসাফ, প্রতিনিধি ( ঢাকা )
প্রকাশিত: বুধবার ২২শে জানুয়ারী ২০২৫ ১২:০৩ অপরাহ্ন
দেশে ৬৮ ভাগ চালকের শ্রবণ সমস্যা: শব্দদূষণে শীর্ষে ঢাকা

রাজধানী ঢাকার শব্দদূষণের মাত্রা বিশ্বে শীর্ষে, যা দেশের পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি। পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান মন্তব্য করেছেন যে, দেশের ৬৮ শতাংশ বাস ও ট্রাক চালক শ্রবণশক্তি হারিয়েছেন। মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরে শব্দদূষণ নিয়ে এক আলোচনা সভায় তিনি এই তথ্য জানান।  


পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, শব্দদূষণ ও বায়ুদূষণে ঢাকা শহর এখন বিশ্বের এক নম্বর দূষিত নগরী। এ শহরের বাস ও ট্রাক চালকদের মধ্যে অধিকাংশই ক্রমাগত শব্দদূষণের ফলে কানে শোনার ক্ষমতা হারিয়েছেন। পরিবেশগত এই বিপর্যয় মানুষের জীবনমান এবং স্বাস্থ্যঝুঁকিকে আরও বাড়িয়ে তুলছে।  


তিনি জানান, শব্দদূষণ রোধে আগামী মাস থেকে একটি হর্ন নিয়ন্ত্রণ ক্যাম্পেইন শুরু করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এই উদ্যোগে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ গুরুত্বপূর্ণ বলে তিনি মন্তব্য করেন। কারণ তরুণ প্রজন্মের সহযোগিতায় পরিবেশ সুরক্ষায় দীর্ঘমেয়াদী ইতিবাচক পরিবর্তন সম্ভব।  


শুধু শব্দদূষণ নয়, পলিথিনের ব্যবহারও পরিবেশ ধ্বংসের আরেকটি প্রধান কারণ। রিজওয়ানা হাসান বলেন, পলিথিন বন্ধের উদ্যোগ ২০০২ সালে শুরু হলেও তা সম্পূর্ণভাবে কার্যকর করা যায়নি। ২০২৪ সালে পুনরায় এই বিষয়ে কাজ শুরু করা হয়েছে। কিন্তু অনেকেই দ্রুত ফল না পাওয়ায় হতাশা প্রকাশ করছেন। তিনি এই বিষয়ে ধৈর্য ধরে কাজ করার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেন।  


শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, পুরনো দিনের অভ্যাসগুলো পুনরায় ফিরিয়ে আনা উচিত। আমাদের পূর্বপুরুষেরা পাটের চটের ব্যাগ ব্যবহার করে বাজার করতেন। এটি পরিবেশবান্ধব এবং পলিথিনের কার্যকর বিকল্প। তিনি বলেন, প্রথাগতভাবে আমরা বহুদিন ধরে পলিথিনের বিকল্প ব্যবহার করে এসেছি, যা এখন পুনরুজ্জীবিত করা দরকার।  


পরিবেশ উপদেষ্টা আরও বলেন, পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ করতে হবে, না হলে দেশের মাটি, নদী ও লেক ধ্বংস হয়ে যাবে। এই সমস্যা শুধু একটি পরিবেশগত ইস্যু নয়; এটি দেশের টেকসই উন্নয়নের ক্ষেত্রেও বড় বাধা।  


তিনি জানান, সরকার কেবল পলিথিনের শপিং ব্যাগের ওপর কাজ করছে এবং এটি সফলভাবে বন্ধ করতে পারলে পরিবেশের বড় একটি অংশ সুরক্ষিত হবে। তবে এই উদ্যোগে নাগরিকদের সহযোগিতা একান্ত প্রয়োজন।  


রিজওয়ানা হাসান বলেন, শব্দ ও বায়ুদূষণ রোধে শুধু সরকারের উদ্যোগ যথেষ্ট নয়। জনগণ সচেতন হলে এবং তাদের অভ্যাসে পরিবর্তন আনলে এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। পরিবেশ সুরক্ষায় একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।  


এই ধরনের উদ্যোগ বাস্তবায়নের জন্য সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার সমন্বয় প্রয়োজন। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি ঘটলে পরিবেশবান্ধব ভবিষ্যৎ গড়ে তোলা সম্ভব হবে।