ট্রাম্পের নতুন নীতিতে মার্কিন নাগরিকত্ব হারানোর ঝুঁকিতে লাখো ভারতীয়

নিজস্ব প্রতিবেদক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: মঙ্গলবার ২১শে জানুয়ারী ২০২৫ ০১:৫৭ অপরাহ্ন
ট্রাম্পের নতুন নীতিতে মার্কিন নাগরিকত্ব হারানোর ঝুঁকিতে লাখো ভারতীয়

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব গ্রহণের পর যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন নীতিতে পরিবর্তন আনার ঘোষণা দিয়েছেন। এর অংশ হিসেবে জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব প্রদানের নীতি বাতিলের কাজ শুরু হয়েছে। ট্রাম্পের সই করা নির্বাহী আদেশ অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণ করলেই নাগরিকত্ব পাওয়ার সুযোগ আর থাকবে না। সংবিধানের ১৪তম সংশোধনীতে স্বীকৃত দেড়শ বছরের পুরনো এই নীতির পরিবর্তন করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।  


এই পরিবর্তনের ফলে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী প্রায় ১৬ লাখ ভারতীয় নাগরিকত্ব হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছেন। পিউ রিসার্চের তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমানে ৪৮ লাখ ভারতীয়-আমেরিকান রয়েছেন, যাদের মধ্যে প্রায় ৩৪ শতাংশ জন্মসূত্রে নাগরিক। এই নতুন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে তাদের নাগরিকত্ব বাতিল হবে।  


ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরেই জন্মসূত্রে নাগরিকত্বকে ‘হাস্যকর’ বলে মন্তব্য করে এসেছেন। শপথ গ্রহণের পর তিনি বলেন, অভিবাসন নীতিতে পরিবর্তন আনতে হবে, যাতে পরিবারগুলোকে আলাদা না করেও ফেরত পাঠানো যায়। এই নীতি পরিবর্তনের মাধ্যমে তিনি অভিবাসনপ্রত্যাশী পরিবারগুলোকে একত্রে ফেরত পাঠানোর পরিকল্পনা করছেন।  


যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ সীমান্তে জাতীয় জরুরি অবস্থা জারি, প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে সরে আসা এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তও নেন ট্রাম্প। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তার এসব পদক্ষেপ অভিবাসন নীতিকে কঠোর করার পাশাপাশি বৈশ্বিক সম্পর্কেও প্রভাব ফেলবে।  


উল্লেখ্য, মার্কিন নাগরিকত্ব-গ্রিনকার্ড পাওয়ার একটি সহজ পথ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে সন্তান জন্মদান। এর ফলে সেই শিশুর নাগরিকত্ব নিশ্চিত হয় এবং তার বাবা-মাকেও বৈধভাবে বসবাসের অনুমতি মেলে। এই প্রক্রিয়ায় ভারতীয় পরিবারগুলো নাগরিকত্ব ও গ্রিনকার্ড পেয়ে এসেছে। ট্রাম্পের নতুন নীতির ফলে এসব সুবিধা আর সম্ভব হবে না।  


এদিকে, ডোনাল্ড ট্রাম্প ১৮৯০ সালের পর প্রথম প্রেসিডেন্ট, যিনি একটি নির্বাচনে পরাজয়ের পর আবারও দ্বিতীয়বারের জন্য শপথ গ্রহণ করেছেন। শপথ গ্রহণের পর প্রথম ভাষণে তিনি পানামা খাল পুনর্দখলের ইঙ্গিত দেন। তার মতে, এই খাল চীনকে দেওয়া হয়নি বরং পানামাকে দেওয়া হয়েছিল। তিনি এটিকে যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে ফিরিয়ে নেওয়ার কথা বলেন।  


ট্রাম্পের কঠোর সিদ্ধান্তগুলো ভারতীয় অভিবাসীদের মধ্যে দুশ্চিন্তার সৃষ্টি করেছে। এর ফলে তারা শুধু নাগরিকত্ব হারানোর ঝুঁকিতে নয়, তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য এবং স্থানীয় রাজনীতিতেও ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই সিদ্ধান্তগুলো শুধু অভিবাসী পরিবারগুলোর জন্য নয় বরং যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাঠামোতেও দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলতে পারে।  


ট্রাম্প প্রশাসনের এই পদক্ষেপগুলি যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন নীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অভিবাসীদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মধ্যে ঠেলে দেওয়ার পাশাপাশি এই সিদ্ধান্ত দেশটির আন্তর্জাতিক অবস্থানকেও নতুন করে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতে পারে।