প্রকাশ: ৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১:৫৫
সিরিয়ায় দীর্ঘদিনের শাসক বাশার আল-আসাদের পতনের পর দেশটির রাজনৈতিক ও সামরিক পরিস্থিতি নাটকীয়ভাবে বদলে গেছে। বিদ্রোহীরা এখন সিরিয়ার বেশিরভাগ অঞ্চল দখল করে নিয়েছে এবং দামেস্ক বিমানবন্দরসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে তাদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত করেছে। এরই মধ্যে, আসাদ সরকারের পতন ঘটানোর পর প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ সিরিয়া ছেড়ে পালিয়ে গেছেন বলে খবর এসেছে।
সিরিয়ার গণমাধ্যমের সূত্র অনুযায়ী, বিদ্রোহীরা দামেস্ক বিমানবন্দর দখলের আগে, একটি ইলিউশিন ৭৬ বিমান সিরিয়ার আকাশে উড়ে যেতে দেখা যায়। বিমানটির ফ্লাইট নম্বর ছিল সিরিয়ান এয়ার ৯২১৮ এবং এটি দামেস্ক বিমানবন্দর থেকে শেষ ফ্লাইট ছিল। উড়োজাহাজটির উড্ডয়নের পর, সরকারি সেনারা বিমানবন্দর এবং প্রেসিডেন্টের বাসভবন ত্যাগ করে সরে যায়। অনেকেই ধারণা করছেন যে, এ উড়োজাহাজে বাশার আল-আসাদ ছিলেন, যদিও তার গন্তব্যস্থল সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
এ ঘটনার সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পলায়নকেও। ৫ আগস্ট, বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে পালানোর সময় তার বিমানের সংকেত গোপন করেছিলেন, যা বাশার আল-আসাদের দেশত্যাগের পরিপ্রেক্ষিতে বেশ সমার্থক মনে হচ্ছে। হাসিনা যেমন সংকেত বন্ধ রেখে ভারতে চলে গিয়েছিলেন, তেমনি আসাদও তার বিমানবাহিনী এবং সেনা বাহিনীর কাছ থেকে সংকেত বন্ধ করে দেশ ছেড়ে গেছেন।
বিক্ষোভকারীরা সিরিয়ার ভেতর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতীকী পদক্ষেপ হিসেবে আসাদের বাবা, সাবেক প্রেসিডেন্ট হাফিজ আল-আসাদের একটি মূর্তি ভেঙে ফেলে। দামেস্কের কাছাকাছি জারমানা এলাকায় এই ঘটনা ঘটেছে এবং এটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে ভাইরাল হয়েছে।
২০১১ সালে আরব বসন্তের প্রভাবে সিরিয়ায় বিক্ষোভ শুরু হলে তা গৃহযুদ্ধে রূপ নেয়। রাশিয়া এবং ইরানের সমর্থনে বাশার আল-আসাদ ক্ষমতায় টিকে থাকলেও, ১৩ বছরের গৃহযুদ্ধের পর বিদ্রোহীদের একের পর এক বড় শহর দখলের ফলে তার পতন অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠেছে।
বিদ্রোহী দলগুলো তাদের বার্তায় জানায়, "৫০ বছরের নিপীড়নের পর, আমরা সিরিয়ার জন্য নতুন যুগের সূচনা ঘোষণা করছি।" সিরিয়ার এই নতুন পরিস্থিতি বিশ্ব রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনতে পারে, বিশেষ করে আসাদের পতনের পর মধ্যপ্রাচ্যের শক্তির ভারসাম্য এবং সিরিয়ার ভবিষ্যত রাজনৈতিক রূপরেখা নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।