স্নাতক ছাড়া নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না চেয়ারম্যান-মেয়র !

নিজস্ব প্রতিবেদক
জাহিরুল ইসলাম মিলন
প্রকাশিত: শনিবার ২৫শে জানুয়ারী ২০২৫ ০৬:১২ অপরাহ্ন
স্নাতক ছাড়া নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না চেয়ারম্যান-মেয়র !

স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় বড় ধরনের সংস্কারের প্রস্তাব দিতে যাচ্ছে স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন। এই প্রস্তাব অনুসারে, পৌরসভা, সিটি করপোরেশন, ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং মেয়র পদে নির্বাচনের জন্য ন্যূনতম স্নাতক ডিগ্রি থাকা আবশ্যক হবে। এতে নিরক্ষর বা স্বল্পশিক্ষিতরা আর এসব পদে প্রার্থী হতে পারবেন না। এ ছাড়া সরাসরি ভোটের বিধানও থাকবে না।


স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মতামত নিয়ে এই প্রস্তাব তৈরি করছে। ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে কমিশন তাদের প্রতিবেদন জমা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। কমিশনের প্রধান ড. তোফায়েল আহমদ জানান, সাধারণ মানুষের অভিযোগ ছিল যে দল, পেশীশক্তি এবং টাকার মাধ্যমে শিক্ষিত ব্যক্তিরা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন না। তাই কমিশন এই ধরনের সংস্কারের প্রস্তাব দিচ্ছে যাতে শুধুমাত্র শিক্ষিতরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারেন।


নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী, ইউপি সদস্যরা ভোট দিয়ে যাকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত করবেন, সেই ব্যক্তির জন্য ন্যূনতম স্নাতক ডিগ্রি থাকতে হবে। ইউপি সদস্যদের মধ্যে একজনকে সভাধ্যক্ষ হিসেবে নির্বাচিত করা হবে, এবং সভাধ্যক্ষকেও স্নাতক ডিগ্রিধারী হতে হবে। এই ধরনের নির্বাচনী ব্যবস্থা পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনের জন্যও প্রযোজ্য হবে।


এছাড়া, স্থানীয় সরকার পরিচালনায় মেয়র এবং চেয়ারম্যানদের সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করতে হবে। এই কারণে তাদের বেতন কাঠামোতেও পরিবর্তন আনার সুপারিশ করা হয়েছে। ইউপি চেয়ারম্যানের বেতন উপজেলা পর্যায়ের প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তার সমান এবং পৌর মেয়রের বেতন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সমান হবে।


এদিকে, সংস্কার কমিশন এমন পৌরসভাগুলিকে বাতিল করার প্রস্তাব করবে যেগুলোর জনসংখ্যা ৫০ হাজারের কম। এসব পৌরসভাগুলোর অধিকাংশই অতীতে রাজনৈতিক নেতাদের পুনর্বাসন কেন্দ্র হিসেবে তৈরি করা হয়েছিল। এই ধরনের পৌরসভায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাসের পর মাস বেতন বকেয়া থাকে এবং সেগুলোর কার্যক্রম অনেক ক্ষেত্রেই সঠিকভাবে পরিচালিত হয় না। এমন পৌরসভাগুলিকে ইউপির সঙ্গে একীভূত করার সুপারিশ করা হয়েছে।


কমিশনপ্রধান ড. তোফায়েল আহমদ জানান, ২০২১ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত স্থানীয় সরকার নির্বাচন পরিচালনা করতে নির্বাচন কমিশন প্রায় ২৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করেছে। তিনি আরও জানান, এসব নির্বাচনের জন্য প্রায় ৬০০ কোটি টাকা খরচ হতে পারে। তাই কমিশন প্রস্তাব করছে যে সব স্থানীয় সরকার নির্বাচন একসঙ্গে করার ব্যবস্থা নেওয়া উচিত, যাতে ব্যয় কমানো যায়।


এই সংস্কারের প্রস্তাবে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আর কোনো রাজনৈতিক দল বা দলীয় প্রতীকে হবে না। এর পরিবর্তে নিরপেক্ষ নির্বাচন প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হবে। স্থানীয় সরকারের কার্যক্রমে এমপিদের ভূমিকা পরিবর্তনও প্রস্তাব করা হয়েছে। সংসদ সদস্যরা স্থানীয় সরকার কমিটির সভায় উপস্থিত থাকতে পারবেন, তবে তাদের কোনো পদে থাকার সুযোগ থাকবে না। 


এ ধরনের সংস্কারের ফলে দেশের স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি আনা হবে এবং নির্বাচনের ক্ষেত্রে যোগ্যতা ভিত্তিক অংশগ্রহণ নিশ্চিত হবে। প্রস্তাব অনুযায়ী, শিক্ষিত, দক্ষ ও অভিজ্ঞ ব্যক্তিরা জনপ্রতিনিধি হতে পারবে, যা স্থানীয় প্রশাসনের কার্যক্রমে ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে।


এদিকে, স্থানীয় প্রশাসনের জন্য যে বেতন কাঠামো পরিবর্তনের প্রস্তাব এসেছে, তা কর্মীদের জন্য একটি বড় সুযোগ তৈরি করতে পারে। এজন্য অনেকেই এই প্রস্তাবকে সমর্থন জানিয়েছেন। বিশেষ করে, যারা স্থানীয় সরকারের মেয়র বা চেয়ারম্যান হতে চান, তাদের জন্য এই পদক্ষেপটি একটি বড় সুবিধা হতে পারে। 


কমিশনের প্রস্তাবের মধ্যে আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, স্থানীয় সরকারে অতিরিক্ত খরচের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা গ্রহণ। অনেক স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানে অর্থের অপচয় হচ্ছে, যা স্থানীয় জনগণের জন্য ক্ষতিকর। তাই, এসব ব্যবস্থা বন্ধ করতে এবং সরকারী খরচ কমাতে এই সংস্কারের উদ্যোগ অত্যন্ত জরুরি। 


এছাড়া, জনগণ আশা করছে যে এই পরিবর্তনগুলো বাস্তবায়িত হলে, নির্বাচনী প্রক্রিয়া আরও সুশৃঙ্খল এবং স্বচ্ছ হবে। দীর্ঘদিনের গোষ্ঠী বা দলীয় প্রভাবের বাইরে, যোগ্যতা ও সক্ষমতার ভিত্তিতে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হলে তা দেশের সার্বিক উন্নয়নে সহায়ক হবে। 


কমিশনের এই সুপারিশ যদি বাস্তবায়িত হয়, তবে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় একটি নবজাগরণের সূচনা হতে পারে। সুশাসন, দক্ষতা ও জনগণের প্রতি দায়িত্ববোধ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এই সংস্কার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।